পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে রেলের উচ্ছেদ অভিযান জোরদার
এক মাসে ১৫শ’ স্থাপনা গুঁড়িয়ে
টাইগার পাস কলোনির ১৬টি ভবনের ২৪৮ ইউনিটের ১৪৪টি বাসা কাউকে বরাদ্দ দেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। অথচ সেখানে কয়েক বছর ধরে লোকজন বসবাস করছিলো। এসব বাসা দখলে রেখে ভাড়া দেয় যুবলীগের কিছু ক্যাডার। তারাই সেখান থেকে নিয়মিত ভাড়া তুলে আসছিলো। এই চক্রে জড়িত রেলের কতিপয় কর্মকর্তাও।
চট্টগ্রামে রেলের ২২৩ একর মূল্যবান জমির পাশাপাশি পাঁচ শতাধিক বাসা, বাড়ি এবং বাংলোও গিলে ফেলেছে দখলদারেরা। রেলের জমিতে গড়ে উঠেছে বড় বড় দালান কোটা, মার্কেট, খামার, হাট-বাজার। নিজের নামে বরাদ্দকৃত বাসার আশপাশ দখল করে ঘর তৈরী করে ভাড়া আদায় করছেন রেলের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। খোদ সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং-সিআরবির আশপাশও বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে টিনের ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছেন রেলের একশ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারী ও সরকারি দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এসব দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক মাসের অভিযানে দেড় হাজারের বেশি স্থাপনা গুঁড়িয়ে হাজার কোটি টাকা মূল্যের ১৫ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। একই সময়ে একটি বাংলোসহ ১৪৫টি বাসা দখলমুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার নাসির উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, রেলওয়ের প্রতিটি স্থাপনা এবং প্রতি ইঞ্চি জমি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। দখলদার যতই শক্তিশালী হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলের মূল্যবান জমি দখলের অভিযান চলছিলো ধীরলয়ে। তবে গেল ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানের পর এই উচ্ছেদ অভিযানে গতি আসে। অভিযানের শুরুতে পালিয়ে যান যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও তার প্রধান সহযোগী জাফর। সিআরবিতে টেন্ডারবাজির ঘটনায় জোড়া খুনের পর ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃৃত বর্তমানে যুবলীগ ক্যাডার সাইফুল আলম লিমনও হাওয়া হয়ে যান। অভিযানের মুখে তার সহযোগীদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যায়। এদের সবার বিরুদ্ধে রেলের জমি ও বাসা দখল করে রাখার অভিযোগ আছে।
রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চিহ্নিত এসব সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অভিযানে গতি আসে। তাদের ভয়ে এতদিন কর্মকর্তাদের অনেকে ছিলেন নীরব। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম নাসির উদ্দিন আহমেদও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানের ফলে দখলদারের অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে করে বড় কোন ঝামেলা ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান চলছে। তিনি বলেন, রেলের জমি বা বাসা দখলে রাখার কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ জমি ও বাসা দখলমুক্ত করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনে অভিযান আরও বেশি জোরদার হবে।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব-উল করিম ইনকিলাবকে বলেন, অক্টোবর মাসে ১৫০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলের হাজার কোটি টাকা মূল্যের ১৫ একরের বেশি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকালও সিআরবির আশপাশে এবং পাহাড়তলীতে গড়ে উঠা ১২০টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনদিনে ওই এলাকায় তিন শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে আড়াই একর জমি উন্মুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি বেদখল বাসা উদ্ধারেও অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে টাইগার পাসে ১৪৪টি বাসা এবং লেডিস ক্লাব লাগোয়া একটি বাংলো দখলমুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, রেল কর্র্তৃপক্ষ এসব বাসা কারো নামে বরাদ্দ দেয়নি, অথচ উচ্ছেদ অভিযানে বাসাগুলোতে ভাড়াটেদের পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে বাকি বাসাতেও অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার হালিশহরে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি এলাকায় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের কবজা থেকে সাড়ে তিন একর জমি উদ্ধার করা হয়। উচ্ছেদ করা হয় তার ‘খামার বাড়ি’সহ ৪৮টি স্থাপনা। বুলডোজার এবং স্কেভেটর দিয়ে পাকা-সেমি পাকা ও কাঁচা পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। বাবর কিছু জমি লিজ নিয়ে বাকি জমি দখল করে নেন। তার আগে নগরীর সেগুন বাগান এলাকায় ৩০টি দোকানঘর ভেঙে প্রায় ২৬ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়। ইতিমধ্যে কদমতলি থেকে সিআরবি, জামতল বস্তি, ব্রয়লার কলোনি, টাইগার পাস এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।
চলমান অভিযানে দেড় শতাধিক বাসা দখলদারমুক্ত করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নামে বরাদ্দকৃত বাসা ও বাংলাতো অবৈধভাবে নির্মিত ঘর উচ্ছেদ করা হয়। টাইগার পাসসহ কয়েকটি কলোনীর পাঁচ শতাধিক বাসা দখলে রেখে ভাড়া আদায় করছিলো যুবলীগ নামধারী ক্যাডারেরা। রেলের কর্মকর্তারা জানান, বাসা দখলকারীরা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী। লিমন পালিয়ে যাওয়ার পর তার বাহিনীর অনেকে আত্মগোপনে চলে যায়। আর এই সুযোগে এসব বাসা দখলমুক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কর্মকর্তারা দখল করে নেওয়া এসব বাসা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা এই ঘটনায় রেলের একশ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশেরও প্রমাণ পান। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে দুদক।
এদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর দখলমুক্ত জায়গা রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল বিভাগের হলেও দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় ফের তা বেদখল হয়ে যায়। এবার দখল ঠেকাতে জমিতে বনায়ন অথবা নার্সারি করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।