পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নদীদখল উচ্ছেদে পরিচালিত অভিযান থেমে গেছে। কেন থেমে গেছে, তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। নদীখেকোদের কবল থেকে নদীর দখলকৃত ভূমি উদ্ধার, অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস এবং উদ্ধার করা ভূমি সুরক্ষা করার লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমরা লক্ষ্য করেছি, দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নদীতে অভিযান পরিচালিত হলেও সে অভিযান স্থায়ী হয়নি। উপযুক্ত কার্যকারণ ছাড়া এক সময় অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। দখলদাররা পুনরায় নদী দখল করে নিয়েছে। এই খন্ড-বিচ্ছিন্ন অভিযান ও ইদুঁর-বিড়াল খেলা বন্ধের তাকিদ থেকে সরকার ব্যাপকভিত্তিতে নদীদখল উচ্ছেদে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেয়। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন গঠন করে কমিশনের উপর দায়িত্ব দেয় নদীদখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করার। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন সারা দেশে ৪২ হাজার ৪২৩ জন দখলদার শনাক্ত করে। স্বভাবতই নদীর দখলকৃত এলাকাগুলো শনাক্ত হয়। দখলদারদের এই তালিকা প্রকাশের পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযানে নামে। আশা করা গিয়েছিল, যতদিন দখল উচ্ছেদ শেষ না হবে, অভিযান ততদিন চলবে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যত্র সম্প্রসারিত হবে। একইসঙ্গে দখলদারদের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ নদীদখলে সাহস দেখাতে না পারে। মাঝপথে হঠাৎ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন করে দখল চলছে বলে জানা গেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিআইডবিøউটিএ’র এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত অভিযান থেমে গেছে। এবং এই কারণটি নাকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব জানেন না। এত বড় একটি বিষয় প্রতিমন্ত্রী ও সচিব জানবেন না, এটা কেমন করে বিশ্বাস করা যায়? এতে কি তাদের দায়িত্বশীলতা প্রমাণিত হয়?
ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালিত অভিযান সম্পর্কে নানা অভিযোগ রয়েছে। ইনকিলাবের আলোচ্য খবরে তার কিছু বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, রাজধানীর চারপাশের চার নদীর তীরের পাশাপাশি ২০ থেকে ৩০টি অবৈধ কাঠামো অভিযানের সময় অপসারণ করা হয়নি। সোনারগাঁও’র মেঘনা নদীতেও এরকম অবৈধ স্থাপনা রেখে দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে অভিযানে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে একশটি অভিযোগ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। ঢাকাকেন্দ্রিক নদীগুলোতে যেমন উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে পরিচালিত অভিযানও থেমে গেছে। শুধু অভিযানই থামেনি, নতুন করে দখল ও স্থাপনা নির্মাণও চলছে। কর্ণফুলী চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক হিসাবে পরিচিত। অথচ দখল ও দূষণে এই নদী এখন চরমভাবে বিপর্যন্ত। সম্প্রতি ভূমিমন্ত্রী বলেছেন, এখনই দখল ও দূষণ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হলে কর্ণফুলীর দশা হবে ঢাকার বুড়িগঙ্গার মতো। বুড়িগঙ্গা, তার সঙ্গে তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। দীর্ঘদিন ধরে এই চার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার তাকিদ উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তুু এখন পর্যন্ত স্থায়ীভাবে এদের দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময়ে দখল উচ্ছেদে অভিযান কিংবা দূষণমুক্ত করতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো অভিযান ও প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়নি। ঢাকার চার নদী নানা উপলক্ষে এতই আলোচিত যে, দেশের অন্য কোনো নদী তাদের ধারে কাছেও নেই। এই চার নদীতে পরিচালিত অভিযান নিয়েই যদি প্রশ্ন ওঠে, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং অভিযান থেমে যায়, তাহলে অন্যান্য নদীর ক্ষেত্রে অবস্থা কী হতে পারে, সহজেই আন্দাজ করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীদখল ও নদীদূষণ প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তার আগ্রহ ও দিক-নির্দেশনার কারণেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ নদীদখল উচ্ছেদে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। দূষণ রোধেও ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নদী-সচেতনতার আর একটি দিক হলো, তিনি বিভিন্ন নদীকে সংবৎসর নাব্য রাখার জন্য ব্যাপকভাবে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। নদীভাঙন রোধে নিয়েছেন বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর নদীকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা, নির্দেশনা ও পরিকল্পনা বা প্রকল্প কার্যকর করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ন্যস্ত। তারা যদি সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও কর্মশীল না হয় তাহলে নদীদখল ও দূষণমুক্ত, নাব্য এবং অধিক কল্যাণপ্রসূ কখনোই হবে না। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব শীর্ষ দায়িত্বশীল। গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়, চলমান কোনো অভিযান কিংবা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে তারা কিছু জানবেন না, সেটা হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, জাতীয় প্রয়োজনেই নদীদখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, এটা শুধুমাত্র কথার কথা নয়। নদী দখলকারী ও দূষণকারী কোনোভাবেই অনুকপা বা ছাড় পেতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে নদীদখল ও দূষণমুক্ত করার দায়িত্ব যাদের, তাদের মধ্যে যারা দুনীতিগ্রস্ত তাদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।