Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বপ্নচারী ফররুখ

প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহম্মদ মতিউর রহমান
অখ- ভাব ও বিষয়ের সাথে অর্থবোধক-সুপ্রযুক্ত শব্দের কুশলী মেলবন্ধনে কবিতার সৃষ্টি। শব্দের মেলবন্ধনে ধ্বনি-ব্যঞ্জনা, সুর-ছন্দ, তাল-লয় সৃষ্টির সাথে সাথে অলঙ্কার সংযোজনের ফলে কবিতা শ্রুতিমধুর, আবেগমথিত ও রসময় হয়ে ওঠে। শব্দকে ভেঙ্গে-গেঁথে অভিনব কৌশলে অলঙ্কার তৈরির মাধ্যমে এভাবে কবিতাকে শ্রুতিমধুর, শিল্প-সুন্দর করে তোলার মধ্যেই কবির যথার্থ কৃতিত্ব। প্রাচীনকালে কবিরা ছন্দ ও সাদৃশ্যবাচক শব্দের ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতেন। আধুনিককালে কবিতা আরো অনেক বেশি শিল্পকলাম-িত হয়ে উঠেছে। এখন শুধু ছন্দ নয়, সাদৃশ্যবাচক বা তুলনামূলক প্রতিকল্প সৃষ্টির মধ্যেই কবির নৈপুণ্য সীমাবদ্ধ থাকে না। কবিতা স্পন্দিত হৃদয়ের আবেগাকুল অনুভূতিকে এমনভাবে ব্যক্ত করে, যা শুধু সরলার্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, সীমাতিরিক্ত এক অনির্বচনীয় জগতের অসীম দিগন্তে পাখা মেলে উড়তে থাকে। তার পরিসীমা খুঁজতে হয় কল্পনার অতীন্দ্রিয় অনুভূতির জগতে। কবিতা বাস্তব জীবনের আলেখ্য ধারণ করে, কল্পনার জগতকেও অনুভবের মধ্যে জীবন্ত করে তোলে এবং সবমিলিয়ে জীবনের সমগ্রতাকে তুলে আনে।
কবিরা সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাদের চিন্তা-কল্পনা অসাধারণ। তারা জীবন-বাস্তবতাকে ধারণ করে জীবনাতিরিক্ত অতীন্দ্রিয়লোকের কল্পনা-বাসনাকেও কবিতার খাঁচায় বন্দী করে। এভাবেই কবিতা একাধারে জীবনধর্মী ও রসময় সাহিত্য হয়ে ওঠে। কবিতা বাস্তবতা ও কল্পনার দ্বৈরথে এক অতীন্দ্রিয় অনুভূতির সুখময় জগৎ নির্মাণ করে। তাই কবিরা স্বপ্নচারী। তারা নিজেরা স্বপ্ন দেখেন, সে স্বপ্নের বিলাস কাব্যের অভিব্যঞ্জনায় রূপ-রস-গন্ধময় করে তোলেন। অনুভূতির জারক-রসে সিক্ত হয়ে পাঠকের হৃদয়-মনকে তা দ্রবীভূত করে। রোমান্টিক কবিরা আরো বেশি স্বপ্নচারী। তারা বাস্তবতার সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকেন না। কল্পনার রথে চড়ে অতীন্দ্রিয় জগতের রূপ-রস-গন্ধে হৃদয়-মনকে সিক্ত করে সুচয়িত শব্দের মেলবন্ধনে অপরূপ আলোকিত ভুবন নির্মাণের প্রয়াসে সর্বদা লিপ্ত থাকেন।
ফররুখ আহমদ এ ধরনের একজন স্বপ্নচারী কবি। তিনি রোমান্টিক কবি হিসেবে অধিক পরিচিত। রোমান্টিক কবিরা মূলত কল্পনাবিলাসী ও স্বপ্নচারী। তারা স্বপ্নের মধ্যে ডুবে থাকতে পছন্দ করেন, স্বপ্নের অতলান্ত গভীরে প্রবেশ করে ঐন্দ্রজালিক রূপ-রস-গন্ধময় শব্দের বৈভবে কবিতার অপরূপ চাকচিক্যময় ভুবন নির্মাণে পারদর্শী। নিচে ফররুখের কবিতার কয়েকটি লাইন তুলে ধরছি :
    “দিনের দুঃস্বপ্ন আজ রাত্রে সুন্দরী ধরণী
    চাঁদের জেওর পরি সাজিয়াছে সুন্দরী উর্বশী
    অতলংক জ্যোৎস্না মাঝে বিকশিত পূর্ণ পঞ্চদশী
    সন্ধ্যার আরক্ত বর্ণে ভেসে এল সোনার বরণী
    শিরায় জাগালো মোর মৃত্তিকার কোমল সিম্ফীনী  
    (যেন বহু দূরান্তের ঝিল্লী স্বর বিষণœ মধুর)”
                           (ওয়েলেস্লি স্কোয়ারে পূর্ণিমা)  
    
আরেকটি কবিতার কয়েকটি লাইন :
    “কাঁচড়াপাড়ায় রাত্রি। ডিপোতলে এঞ্জিন বিকলÑ
    সুদীর্ঘ বিশ্রান্ত শ্বাস ফেলে জাগে ফাটা বয়লার,
    Ñঅবরুদ্ধ গতিবেগ। তারপর আসে মিস্ত্রিদল
    গলানো ইস্পাত আনে, দৃঢ় অস্ত্র হানে বারবার।
    ...        ...    ...
    ...        ...    ...    
    আহত সন্ধ্যায় তারা অবশেষে কাঁচড়াপাড়াতে।
    দূরে নাগরিক আশা জ্বলে বাল্বে লাল-নীল-পীত;
    উজ্জীবিত কামনার অগ্নিমোহÑঅশান্ত ক্ষুধার্ত;
    কাঁচড়াপাড়ার কলে মিস্ত্রিদের নারীর সঙ্গীত।
    (হাতুড়িও লক্ষ্যভ্রষ্ট) ম্লান চাঁদ কৃষ্ণপক্ষ রাতে
    কাঁচড়াপাড়ায় জাগে নারী আর স্বপ্নের ইঙ্গিত।।
                                     (কাঁচড়াপাড়ায় রাত্রি)
        
প্রথম জীবনে লেখা কবির উপরোক্ত কয়েকটি লাইন থেকে এটা উপলব্ধি করা খুব সহজ যে, ফররুখ আহমদ একজন রোমান্টিক স্বপ্নচারী কবি। তাঁর ছিল এক অসাধারণ রোমান্টিক মন। রোমান্টিক কবিরা সাধারণত কল্পনাবিলাসী হন। বাস্তব জগতের রূপ-রস-গন্ধ মেখে তারা এক অতীন্দ্রিয় কল্পনার জগতে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কল্পনার সাথে স্বপ্নের আকিঞ্চন মিশিয়ে তারা যে অপরূপ শব্দের বৈভব নির্মাণ করেন, তা কিছুটা রহস্যময় ও দুর্জ্ঞেয় মনে হলেও অনুভব-উপলদ্ধির দ্বারা তার রসাস্বাদন করা সুকঠিন নয়। উপরোক্ত দু’টি কবিতার কয়েকটি লাইন থেকেই তা ধারণা করা চলে।
প্রথম জীবনে ফররুখ আহমদ যেসব কবিতা লিখেছেন, সেগুলো পা-ুলিপি আকারে তিনি লিপিবদ্ধ করে গেলেও জীবনকালে কাব্যকারে তা প্রকাশিত হয়নি। কবির ইন্তিকালের পর প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কবির সে পা-ুলিপিখানা ‘হে বন্য স্বপ্নেরা’ নামে কাব্যাকারে প্রকাশ করেন। প্রথম জীবনে লেখা এসব কবিতায় যেটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলোÑ এসব কবিতার শব্দাবলী খাঁটি বাংলা শব্দ। এ কাব্যের কোন কবিতায়ই আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় না। তাছাড়া, এসব কবিতায় কোন সুস্পষ্ট জীববোধের পরিচয় নেই। কবি যেন অনেকটাই উদ্দেশ্যবিহীন, লক্ষ্যহীন, উদ্দাম জীবনের অস্থির স্বপ্ন-কল্পনায় বিভোর। কিন্তু অচিরেই কবি এক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের সন্ধান পান এবং সে লক্ষ্যে অবিচল গতিতে চলার দূরন্ত আকাক্সক্ষায় তিনি উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। বিশেষভাবে এ সময় তিনি ইসলামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে ইসলামের সাম্যবাদী উদার মানবিক বোধের আলোকে এক নতুন আলোকিত সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্নে বিভোর হন। ইসলামী আদর্শের সাথে ইসলামের ইতিহাস ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের রূপায়ণে যথাযোগ্য শব্দ নির্বাচনে প্রয়াসী হন। এ কারণে আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহারে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ভাব ও বিষয়ের উপস্থাপনায় এ ধরনের শব্দের ব্যবহার অনিবার্য হয়ে ওঠে। বলা যায়, ভাব ও বিষয়ের প্রয়োজনেই তিনি আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহারে ফররুখের নৈপুণ্য ও বৈশিষ্ট্য সর্বজন প্রশংসিত হলেও তিনি এক্ষেত্রে তাঁর পূর্বসূরী মুসলিম কবিদের অনুসরণ করেননি। তাঁর পূর্বসূরীগণ যেভাবে আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগ করেছেন, তিনি তা থেকে ভিন্ন। শব্দ-নির্বাচন, শব্দের কুশলী প্রয়োগ, শব্দের লালিত্য ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টিতে তাঁর নৈপুণ্য অভিনব ও বিস্ময়কর। এ কারণে তাঁর কাব্যভাষা একান্তভাবে তাঁর নিজস্ব ও বৈশিষ্ট্যম-িত। ফররুখের এ বিশেষ কাব্যভাষা তাঁকে এক স্বতন্ত্র মহিমা ও উজ্জ্বলতর কবিপ্রতিভা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে চল্লিশের দশকে রচিত ফররুখ আহমদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘আজাদ কর পাকিস্তান’ কাব্যপুস্তিকা এবং ১৯৫২ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘সিরাজাম মুনীরা’ কাব্যগ্রন্থ ব্যতীত পরবর্তী অন্য সকল কাব্যের ভাষা কিছুটা ভিন্ন। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ তাঁর রচিত ‘কাফেলা’, ‘দিলরুবা’, ‘মুহূর্তের কবিতা’ ইত্যাদি কাব্যের উল্লেখ করা যায়। এসব কাব্যের ভাষা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার একরকম নেই বললেই চলে। এছাড়া, পাকিস্তান-উত্তর কালে  তাঁর রচিত প্রায় একুশখানা শিশুতোষ ছড়া-কবিতা গ্রন্থে আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার সুদুর্লভ। তাঁর রচিত ‘হাতেম তায়ী’ মহাকাব্য, ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক কাব্য, হাবেদা মরুর কাহিনী, তসবিরনামা, হাল্কা লেখা ইত্যাদি কাব্যেও আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগ অতি নগণ্য।
অতএব, ফররুখ আহমদের কাব্যভাষা সবসময় একরকম নয়। তিনি কাব্যক্ষেত্রে সর্বদা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়াসী ছিলেন। তাঁর কাব্যের আঙ্গিক ও রূপ-রীতি বহু বিচিত্র। তিনি একাধারে গীতি-কবিতা, সনেট, শিশুতোষ ছড়া-কবিতা, মহাকাব্য, ব্যঙ্গকাব্য, গীতিনাট্য, কাব্যনাট্য ইত্যাদি কাব্যের বিচিত্র আঁধারে তাঁর কবিভাবনাকে অপরূপ সৌরভম-িত লালিত্যময় সুর-তাল বিশিষ্ট সালংকার শব্দরাজির সুনিপুণ ব্যবহারে অসাধারণ কাব্যকলা নির্মাণে অনন্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। কাব্যের ভাব-বিষয় অনুযায়ী উপযোগী শব্দ ব্যবহারেও তাঁর কৃতিত্ব অসাধারণ। বড় প্রতিভা এবং শক্তিধর মৌলিক কবির পক্ষেই কাব্যের রূপ-রীতি, আঙ্গিক, ভাব-ভাষা-বিষয় ইত্যাদির বিচিত্র ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্ভব। এক শক্তিধর প্রতিভাবান মৌলিক কবি হিসেবে ফররুখ আহমদ এক্ষেত্রে এক অনন্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন।
ফররুখ আহমদ কালসচেতন কবি। সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থা কবির কাব্য-ভাবনায় একধরনের উন্মাদনা সৃষ্টি করে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য এক নতুন স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন, ফররুখের কবি-ভাবনায় তা এক নতুন স্বপ্নের ইঙ্গিত বহন করে আনে। তাঁর রোমান্টিক ভাবনার সাথে আদর্শিক চিন্তা-কল্পনার সংশ্লেষে তিনি এক অভিনব স্বপ্নের জগৎ নির্মাণ করেন। এ অভিনব স্বপ্নের জগৎ নির্মাণে ‘হেরার রাজতোরণ’ (রূপকার্থে) তাঁর নিকট এক অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস রূপে দেখা দেয়। তাই চল্লিশের দশকে তাঁর কবি-কল্পনা ও চিন্তা-ভাবনায় হেরার রাজতোরণের প্রভাব তাঁর এ সময়কার সৃষ্টিকর্মে সর্বত্র প্রতিফলিত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাঁর কল্পনার জগতে পরিবর্তন ঘটে। তিনি খুলাফায়ে রাশেদার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন-কল্পনার বিষয়কে কাব্যের মূল উপজীব্য করে তোলেন। এ সময় তাঁর চিন্তা-চেতনা ও সৃষ্টিকর্মে নানা বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। একদিকে যে আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে আদর্শের প্রতি শাসকগোষ্ঠীর সীমাহীন অবজ্ঞা দেখে কবি নিদারুণ ক্ষুব্ধ হন এবং অসংখ্য ব্যঙ্গ কবিতা, ব্যঙ্গ নাটক-নাটিকা ইত্যাদি লিখে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ধরনের প্রায় ছয়টি কাব্যের ভাব ও বিষয়ে কিছুটা সাময়িকতা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ থাকলেও মূলত এগুলো কাব্যগুণে উন্নীত হয়েছে। তাই ব্যঙ্গ রচনার ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন।
তবে শুধু ব্যঙ্গাত্মক রচনাই নয়, অসংখ্য শিশুতোষ ছড়া-কবিতা রচনা এবং সনেট, মহাকাব্য, গীতিকাব্য, কাব্যনাট্য, ব্যঙ্গ নাটক ইত্যাদি বিচিত্র রূপ-রীতিতে অসাধারণ কাব্যকর্মের মাধ্যমে ফররুখ আহমদ অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁর শিশুতোষ ছড়া-কবিতা পরিমাণের দিক থেকে যেমন বিশাল, গুণ ও মানের দিক থেকেও তা বৈশিষ্ট্যম-িত। সনেট রচনায় ফররুখ আহমদের পারঙ্গমতা একমাত্র মাইকেল মধুসূদনের সাথেই তুলনীয়। তাঁর রচিত সনেটের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন শত। গীতিকাব্য, কাব্যনাট্য, ব্যঙ্গনাট্য ইত্যাদি রচনার ক্ষেত্রেও ফররুখের সাফল্য কম নয়।
ফররুখের কাব্যকর্মের মূল লক্ষ্য মানুষ। মানুষকে নিয়েই তিনি তাঁর কাব্যের বিচিত্র ভুবন নির্মাণ করেছেন। মূলত মানুষের জন্য এক সুন্দর, কল্যাণময়, শান্তি-সমৃদ্ধিপূর্ণ জগৎ নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনি কাব্যচর্চায় ব্রতী হন। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’র ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে লাঞ্ছিত মানবতার মুক্তি কামনা করেছিলেন, তাঁর জীবনের সর্বশেষ রচনা ‘১৯৭৪’ এর মন্বন্তর শীর্ষক সনেটেও সে লাঞ্ছিত হতভাগ্য দুর্দশাগ্রস্ত ক্ষুধিত নিপীড়িত মানুষের মর্মন্তুদ বিলাপের সকরুণ আর্তনাদ আবেগ-বিধূর অভিব্যঞ্জনায় প্রকাশ করেছেন। তাই কবির লালিত স্বপ্ন তাঁর ব্যক্তিগত অথবা জাতীয় জীবনে পূরণ হয়েছে, তা বলা যাবে না। মূলত স্বপ্ন ও কল্পনা সর্বদা মানুষের অধরাই থেকে যায়। ফররুখ আহমদের লালিত স্বপ্নও তাঁর নিজের দুর্দশাগ্রস্ত নিপীড়িত অবজ্ঞাত জীবনে যেমন অধরা থেকে গেছে, তিনি যে মানুষ ও জনগোষ্ঠীর জন্য এক স্বপ্নময় সুন্দর জীবনের কল্পনা করেছিলেন, দুর্ভাগ্যবশত আজও তা কেবল স্বপ্ন-কল্পনার বিষয় হয়েই রয়েছে। তাহলে কবির স্বপ্ন-কল্পনা কি সম্পূর্ণ নিরর্থক? তিনি যাদের জন্য সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারা দুর্জয় শপথে উজ্জীবিত হয়ে সে স্বপ্ন-কল্পনার রূপায়ণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে ফররুখ তাদের জন্য চির অনুপ্রেরণার অফুরন্ত উৎস হয়ে দেখা দিবে। কবির প্রকৃত সার্থকতা এখানেই। কবিরা স্বপ্ন দেখেন, আর সে স্বপ্ন ছড়িয়ে দেন মানুষের মনে। সে স্বপ্ন চিরন্তন, কাল  থেকে কালান্তরের মানুষের মনে তার ব্যাপ্তি ঘটে। সে অনিঃশেষ স্বপ্নের মধ্যেই কবিরা চিরঞ্জীব হয়ে ওঠেন। ফররুখ আহমদও তেমনি এক চিরঞ্জীব, অমর, কালজয়ী কবি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বপ্নচারী ফররুখ

আরও পড়ুন