পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পৃথিবীতে কেউই কাউকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ায় না। এমনকি সন্তান বড় হলে বা কর্মপোযুগী হলে বাবা-মাও তাদের বসিয়ে খাওয়াতে চান না। শুধু সন্তান নয়, দেশের মানুষদেরও সরকার বেকার বা কর্মহীন অবস্থায় রাখতে চায় না। সরকারের ওপর তারা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে বিগত তিন বছর ধরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিজ দেশ থেকে নিপীড়ন-নির্যাতন ও অত্যাচারিত হয়ে প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিকতা ও মায়া-মমতার কারণে বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে। বিশ্বে মানবিকতার অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পুরো বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা এবং মিয়ানমারের তীব্র নিন্দা করেছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বড় বড় দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনরা রোহিঙ্গাদের করুণদশা স্বচক্ষে দেখার জন্য কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে ছুটে এসেছেন। কোনো কোনো দেশ কিছু ত্রাণ সামগ্রী ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। এখন করছে কিনা তার খবর অবশ্য তেমন একটা পাওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো বারবার আহ্বান জানিয়েছে। তাতে মিয়ানমার বিন্দুমাত্র সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের সাথে ফিরিয়ে নেয়া নিয়ে একধরনের লুকোচুরি করে চলেছে। নিব-নিচ্ছি করছে। এখন জাতিসংঘসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের ওপর কঠিন চাপ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। তাতে অবশ্য মিয়ানমারের কিছু যায় আসে না। তারা রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে শুরু থেকেই বিশ্বশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে। তাতে বিশ্বশক্তির কোনো ধরনের অপমানবোধ জাগছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা কেবল মুখে মুখে মিয়ানমারের বিরোধিতা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বড় বড় কথা বললেও কার্যকর কোনো অ্যাকশন নিচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পড়েছে বিপাকে। না পারছে রোহিঙ্গাদের বিশাল বোঝা বইতে, না পারছে সইতে। গাঁটের পয়সা খরচ করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ ও যতœ-আত্তি করতে বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। সিপিডি হিসাব করে দেখিয়েছে, যদি প্রতিদিন ৩০০ জন করে রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যায়, তবে তাতে ১২ বছর লেগে যাবে। এই ফেরত পাঠানোর সময়েই খরচ হবে ৯.২ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছোট। এই ছোট আকারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ভরণ- পোষণের বিষয়টি বেশ চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার আর্থিক সহায়তাও দিন দিন কমছে। এ অবস্থায় মানবিক দিক বিবেচনা করেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও ভরণ-পোষণ দিয়ে যাচ্ছে।
দুই.
‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাস’ বলে একটা কথা আছে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অলস হয়ে বসে খেতে থাকাদের কারো কারো মধ্যে এই শয়তান ভালোভাবে ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায়, গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার ঘটনা। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রোহিঙ্গাদের একটি শ্রেণী নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা দুর্বিণীত হয়ে উঠছে। অবশ্য যারা সর্বহারা এবং মনে করে তাদের হারানোর কিছু নেই, তারা সহজেই যে কোনো ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতে দ্বিধা করে না। হতাশা এবং জীবনের আর কোনো আশা না থাকা থেকেই এমন মনোভাবের সৃষ্টি হয়। রোহিঙ্গাদের কারো কারো মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়ে যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তখন ভাবা হয়েছিল বিশ্বশক্তির চাপের মুখে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে বেশি দেরি করবে না। দেখা গেল, সে আশায় মিয়ানমার গুড়ে বালি দিয়েছে। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়, তারা বাংলাদেশের নাগরিক। সে সময় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমার সফরে গিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তখন মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের স্পষ্টতই ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করেন। এর জবাবে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বে ৩৫ কোটি লোক বাংলায় কথা বলে। তাহলে কি তারা সবাই বাঙালি? আলোচনা চলাকালে মিয়ানমারের এক জেনারেল তার মত ব্যক্ত করে বলেন, রোহিঙ্গারা বাঙালি। ব্রিটিশরা এদের কৃষিশ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিয়ে এসেছিল। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, রাখাইন রাজ্যের অনেকটা চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে, তা বাংলা ভাষা নয়। তার বক্তব্য শুনে জেনারেল চুপ হয়ে যান। মিয়ানমারের জেনারেলদের সে সময়ের বক্তব্য থেকে বোঝা গিয়েছিল, তারা রোহিঙ্গাদের কিছুতেই তাদের দেশের নাগরিক মনে করে না এবং ফিরিয়ে নিতেও আগ্রহী নয়। কেবল আন্তর্জাতিক চাপের কারণে বিভিন্ন প্রস্তাব ও দফা দিয়ে ফেরত নেয়ার কথা বলছে। আবার ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমার শর্ত দিয়ে বলেছিল, এরা রোহিঙ্গা কিনা তা যাচাই করে ফেরত নেয়া হবে। এখনও মিয়ানমার এ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। মিয়ানমার যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে তার গ্যারান্টি এখন খুব কম। কারণ অতীতেও মিয়ানমার থেকে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা এখনও বাংলাদেশেই রয়ে গেছে। তাদের আর ফিরিয়ে নেয়নি। এসব রোহিঙ্গাদের বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশকেই লালন-পালন করতে হচ্ছে। নতুন যারা এসেছে তাদেরও লালন-পালন করছে। বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। এখন এটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আহ্বান আমলে নেয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো রোহিঙ্গাদের প্রতি কেবল সমবেদনা দেখিয়ে এবং মিয়ানমারকে নিন্দা জানানোর মধ্যেই রয়েছে। একটা বিষয় স্পষ্ট, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের মূল শক্তি হয়ে রয়েছে চীন। দেশটি মিয়ানমারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির পরাশক্তি হওয়ায় অন্যদেশগুলোর পক্ষে চীনের বিপক্ষে যাওয়া অসম্ভব। অন্যদিকে বাংলাদেশকে দুর্বল ও ছোট দেশ ভেবে কেবল সহানুভূতি ও বাহবা দিয়েই সান্ত¦না দেয়ার মধ্যে রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যে চীন মিয়ানমারকে একাই সাহস দিয়ে যাচ্ছে, সেই চীনও বাংলাদেশের ভাল বন্ধু। বাংলাদেশের সাথে তার বিলিয় বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ও প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও দেশটি তা বিবেচনায় না নিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কেবল মুখে মুখে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। দেশটি একদিকে বন্ধুত্বের কথা বলছে, আরেক দিকে বন্ধুর মহাবিপদে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট, এক চীনের উদ্যোগেই রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব। চীন এ কাজটি করছে না। বাংলাদেশও তাকে এ কাজে সহায়তা করতে রাজী করাতে পারছে না।
তিন.
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনির্দিষ্টকালের অবস্থান আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে চলেছে তা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। দশ লাখ রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক টানাপড়েন যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ-প্রতিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ধীরে ধীরে সামাজিক অস্বস্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছে। এর কারণ, রোহিঙ্গাদের কোনো কাজ নেই। তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অনেকটা বন্দি হয়ে আছে। মানুষ মাত্রই স্বাধীনচেতা। কেউই বন্দি হয়ে থাকতে চায় না। যে কোনো উপায়েই হোক সে মুক্ত জীবনযাপন করতে চায়। নির্দিষ্ট গ-িতে আবদ্ধ রোহিঙ্গাদের মধ্যেও এখন এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ফলে তারা নানাভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে চাচ্ছে। অনেকে কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে এবং করার চেষ্টা করছে। অনেকে মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যারা সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন, তারা বশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি ঠিকই, একই সাথে বড় ধরনের বিপদেও পড়েছি। তাদের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ তো বিনষ্ট হচ্ছেই, সেখানের স্থানীয় অধিবাসীরা এখন সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। তারা আতঙ্কে আছে। আসলে এখানে না এলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কেউই উপলব্ধি করতে পারবে না। এটা যে কত বড় বিপদের বিষয়, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যত দিন যাবে, এ বিপদ আরও বড় হয়ে উঠবে। সবচেয়ে বড় কথা, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া, না নেয়ার বিষয়টি অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছে। এতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম তাদের কর্মসংস্থান হবে কিভাবে? তাদের কি বেকার বসিয়ে রাখা হবে? যদি তা না করা হয়, তবে তাদের কর্মসংস্থান ও কর্মপরিধি কি হবে? এসব বিষয় নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। যেখানে আমাদের দেশেই লাখ লাখ কর্মক্ষম মানুষ বেকার, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত, কোটি কোটি মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, সেখানে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর বিষয়টি কল্পনা করা যায় না। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমরা মায়া-মমতা ও মানবিকতা দেখিয়ে যাচ্ছি। তবে এ মানবিকতার অর্থ এই নয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের মেহমানদারি করতে হবে। মেহমানদারি করার সেই সামর্থ্য কতটা আছে, তাও দেখার বিষয়। আমাদের দেশ জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ধনী নয় যে, সিরিয়া, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বাস্তুদের দীর্ঘ সময়ের জন্য আশ্রয় দেয়া এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া সম্ভব। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের মানবিকতাবোধ রয়েছে, সবসময় তা থাকবে, তবে রুঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, দীর্ঘ সময়ের জন্য তা দেখানোর শক্তি ও সামর্থ্য আমাদের নেই। ইতোমধ্যে দেশের সচেতন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার অনির্দিষ্টকাল অবস্থান ক্রমেই বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে এখনও কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নিরাপত্তা শঙ্কায় রোহিঙ্গারাও ফিরে যেতে চাচ্ছে না। গত রবিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের মন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সোয়ে বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। প্রত্যাবাসনের জন্য যেসব রোহিঙ্গা মনোনিত হবে তাদের নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র দেয়া হবে। বাকিদের যুক্তরাষ্ট্রের মতো গ্রীণকার্ড দেয়া হবে। তবে কবে থেকে এই প্রত্যাবাসন কাজ শুরু হবে, তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি। ফলে বিষয়টি দীর্ঘসূত্রিতার বেড়াজালেই আটকে পড়েছে।
চার.
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি যে দীর্ঘায়িত হবে, তা এখন স্পষ্ট। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে এখন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো ছাড়া বাংলাদেশের আর গতি নেই। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এভাবে তাদের বসিয়ে না রেখে দেশের উন্নয়ন কাজে তাদের নিয়োজিত করা যেতে পারে। কারণ আমাদের দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনেক বিদেশি শ্রমিক কাজ করছে। একটি নীতিমালার আওতায় যদি রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ করে দেয়া যায়, তবে দেশের উন্নয়নে যেমন ভূমিকা রাখতে পারবে, তেমনি তাদের ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে অর্থনীতির ওপর যে চাপ পড়ছে তা কিছুটা হলেও কমবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা কমে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার আশা জাগবে। গত কয়েক বছর ধরে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের অভাবে কৃষকরা সংকটে পড়ছে। শ্রমিকের এই সংকট কাটাতে কীভাবে রোহিঙ্গাদের কাজে লাগানো যায়, এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের অনেকেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে বলে পত্র-পত্রিকা থেকে জানা যায়। তবে তাদের সস্তা শ্রমের কারণে স্থানীয়ভাবে দেশের শ্রমিকরা সমস্যায় পড়েছে। তাদের শ্রমের মূল্য কমে গেছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে রোহিঙ্গাদের শ্রমের মূল্যও যাতে দেশের শ্রমিকদের সমমূল্যের হয়, এ বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। রোহিঙ্গাদের সস্তা শ্রমের কারণে দেশের শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কাম্য হতে পারে না। যতদিন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না হচ্ছে, ততদিন তাদেরকে বেকার বসিয়ে রাখলে সমস্যা আরও তীব্র হয়ে উঠবে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি প্রকট আকার ধারণ করবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনি তাদের কাজে লাগানোর কাজটিও করতে হবে।
ফধৎঢ়ধহ.লড়ঁৎহধষরংঃ@মসধরষ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।