পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাবিত হওয়ার পর উপমহাদেশের রাজনীতি বদলে যায়। কংগ্রেস বলে সর্বজনীন ভারত। মুসলিম লীগ বলে পাকিস্তান-পাকিস্তান। আবার কংগ্রেসের সর্বজনীনতার শ্লোগানের মধ্যেও সরদার প্যাটেলসহ একটা গ্রুপের মনে হিন্দু ভারতের স্বপ্নও বিকশিত হয়। প্রশ্ন ওঠে, জম্মু-কাশ্মীর কোথায় যাবে? ১. হিন্দুস্থান বনাম পাকিস্তান; ২. জমিদারি শোষণ থেকে মুক্তি-এই দুটি ইস্যু তখন একত্র হয়ে কাশ্মীরের রাজনীতিতে হাজির। শেখের শ্লোগান ছিল, যোগদানের আগে স্বাধীনতা (Freedom before Accession) । (৬) আগেই বলেছি, জিন্নাহ আশাবাদী ছিলেন। তিনি কম সক্রিয় ছিলেন। নেহরু উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি ছিলেন সক্রিয়। একদিকে নেহরু ও গান্ধী মহারাজার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শেখকে সমর্থন করেছেন। অন্যদিকে প্যাটেলসহ ভারতীয় কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদী নেতারা মহারাজার সঙ্গে নীরব যোগাযোগ রেখেছেন। প্রভাবিত করেছেন। (৭)
ভারতে যোগদানপত্র যদিও সই করেন মহারাজা। কিন্তু, তার আগে শেখ আবদুল্লাহকে নেহরুর অনুরোধে মুক্তি দিতে হয়। ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ মহারাজা যোগদেন। আর ১৯৪৮ সালের ৫ই মার্চ মহারাজার ইতি ঘটে। নেহরু জেঅ্যান্ডকে’র ‘মুকুট’ পরান শেখ আবদুল্লাহকে। বিশেষ মর্যাদার রাজ্য হিসেবে ঘোষিত জেকে প্রধানকে দেওয়া হয় ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদ।
নেহরুর ‘বৈচিত্র্যময় ভারতে’র ধারণার প্রতি আস্থা রেখেছিলেন শেখ আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ নিজেও ছিলেন বৈচিত্র্যময়। একদিকে তিনি উপমহাদেশের প্রথম নেতা যিনি মুসলিম রাজনৈতিক দলের নাম বদলেছিলেন অন্য ধর্মের অংশগ্রহণ পেতে। আবার তিনিই স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন। তার রাজনীতির শুরুই হয়েছিল খানকাহ-এ-মওলায় সমাবেশে গিয়ে তিনি পড়তেন সূরা রাহমান মর্মভেদী সুরে। তবুও, শেখ ছিলেন নেহরুর দৃষ্টিতে ‘অ্যাসেট ফর ইন্ডিয়া’।
তখন, প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে শেখের শাসন অভ্যন্তরীণভাবে ছিল কর্তৃত্ববাদী। ১৯৫১ সালে রাজ্যে নির্বাচন হয়। তাতে ৭৫টি আসনের প্রত্যেকটিতেই নির্বাচন হয় প্রতিদ্বদ্বতাহীন। আবদুল্লাহর সমালোচক কেই ছিল না। ২. ভারতে গান্ধীর প্রাণ গেল। হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা সহিংস হয়ে উঠল। ‘হিন্দুত্ববাদ’ বিকশিত হচ্ছিল জম্মুতে। ৩. আবদুল্রাহ-নেহরুর মধ্যে দেখা দিল আস্থার সংকট। ভারত থেকে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শেখ, এমন সন্দেহ চাউর হলো। ওদিকে আবদুল্লাহও বুঝতে পারছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী’র পদাসীন হলেও কাঠি নাড়ে অন্য কেউ। ১৯৫৩’র ৯ আগস্ট নেহরুই কঠোর হস্তে আদর করে আবদুল্লাহকে পাঠালেন জেলে। আবদুল্লাহরই শিষ্য বকসি গোলাম মোহাম্মদকে বসালেন দিল্লির মর্জিতে উঠতে বসতে। ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ যাকে বলেছিলেনদ, ‘আইনের শাসনের ব্যর্থতা’। অনেকে আবার বলেছেন, বৈচিত্র্যময় সেক্যুলার ভারতই ব্যর্থ হয়েছে সেদিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।