Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় সেলিমের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৩০ পিএম

দেশে-বিদেশে তার গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিদেশের ব্যাংকে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বিশেষ করে থাইল্যান্ডে রয়েছে তার বিপুল বিনিয়োগ। ব্যবহার করেন থাই পাসপোর্ট। এসব কারণেই তিনি থাই ডন হিসেবে পরিচিত সেলিম প্রধান। সামনে পেছনে গাড়ির বহর। আছে সশস্ত্র দেহরক্ষী। মধ্যখানে কোটি টাকা মূল্যের ল্যান্ডক্রুজার। যানজটমুক্তভাবে রাস্তা পার হতে উচ্চ শব্দে বাজানো হয় হুটার। গাড়ি থেকে নামার সময় দরজা খুলে দেয় নিরাপত্তাকর্মীরা। ফিল্মি স্টাইলে গাড়ি থেকে নামেন তিনি। চারদিক ঘিরে থাকে নিরাপত্তা রক্ষীরা। প্রটোকল দেখেই মনে হবে তিনি প্রভাবশালী, ভিআইপি কেউ।

পুরো নাম সেলিম প্রধান। দেশ ছেড়ে পালানোর সময় র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেলিম প্রধান সম্পর্কে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মিজান জানান, সেলিম প্রধানের দেয়া তথ্যানসুারে অভিযান অব্যাহত আছে। আজ সকাল থেকে গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর সড়কের সেলিম প্রধানের অফিসে অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে সেখানে নগদ টাকা ও মাদক পাওয়া গেছে।

ব্যাংক থেকে বিপুল টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করেছেন সেলিম প্রধান। দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাধে অপকর্ম করে সহজেই পার পেয়ে যান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন প্রভাবশালী কয়েক নেতা। এই টাকা পাচারে সহযোগিতা করেন সেলিম। অর্থ পাচার ও বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে সংসারও করেছেন তিনি।

সূত্রমতে, দু’জন বাংলাদেশী স্ত্রী ছাড়াও জাপানি, আমেরিকান ও রাশিয়ান মিলে মোট পাঁচ স্ত্রী রয়েছে তার। প্রায় প্রতিটি বিয়েই করেছেন সংশ্লিষ্ট দেশে বিনিয়োগ ও বসবাসের সুযোগ সৃষ্টির জন্য। প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই রয়েছে তার লোকজন। যারা তার অপরাধমূলক কর্মকা-ে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশি স্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামে কর্মরত একজন কাস্টমস কমিশনার।

সূত্রমতে, থাইল্যান্ড ও জাপানে রয়েছে তার বিপুল অর্থ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। থাইল্যান্ডের পাতায়া শহরে রয়েছে তার হোটেল ও ডিস্কো বার। তার ডিস্কোবারে নিয়মিত নাচ-গান করেন রাশিয়ান তরুণীরা। এটি চালু করেছেন ২০০৪ সালের শেষের দিকে। ওই সময়ে পাতায়া শহরে চালু করেন কয়েক ম্যাসাজ পার্লার। পার্লারগুলোতে ফিলিপাইনের তরুণীরা কাজ করেন। তারপর একে একে কয়েকটি পার্লার খুলেন তিনি।

থাইল্যান্ডের আদলে ঢাকার গুলশানে গড়ে তোলেন স্পা সেন্টার। গুলশানের ৩৩ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত এই স্পা সেন্টারে যাতায়াত করতেন প্রভাবশালী অনেকে। প্রভাবশালী কেউ স্পা সেন্টারে পা রাখলে ওই সময়ে যথেষ্ঠ সংরক্ষিত রাখা হতো সেন্টারটি। ‘ক্লোজ’ বলেও অনেক ক্লায়েন্টকে ফিরিয়ে দেয়া হতো। অভিযোগ রয়েছে, সেলিম প্রধানের স্পা সেন্টারটি পরিণত হয়েছিল প্রমোদালয়ে।

সুবিধাবাদী সেলিম প্রধান এখন যুবলীগ নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। বিএনপির সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। ১/১১’র সময়েও অদৃশ্য ক্ষমতার আশ্রয়ে ছিলেন তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠে ২০১৪ সালে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতাও পায়। তারপরও বহাল তবিয়তে ছিলেন প্রভাবশালী থাই ডন সেলিম প্রধান।

সেলিম প্রধান একজন ঋণখেলাপি। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে রূপালী ব্যাংকের ১শ’ কোটি টাকা আত্মসাত করে টাকার পাহাড় গড়েন। জাপানের অর্থায়নে শিল্প গড়ার নামে এই ঋণ নিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যান। দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন।

জাপানে থাকাবস্থায় বিয়েও করেন সেখানে। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন টোকিওতে। সেখানে স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসা করছিলেন। এরমধ্যেই অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য জাপান ছাড়েন। আশ্রয় নেন আমেরিকায়। সেখানেও বিয়ে করেন। আমেরিকা থেকে ফের জাপানে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

গত ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে দেশে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে আতঙ্কে ছিলেন সেলিম প্রধান। অভিযান চলাকালে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সোমবার দুপুরে থাইল্যান্ডে যেতে পা দেন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। সেলিম প্রধানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের গাউসিয়া এলাকায়।



 

Show all comments
  • দীনমজুর কহে ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৬ পিএম says : 0
    এর উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Aman Ullah Talukder ১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৪৪ পিএম says : 0
    Seize his all ill gotten tangible assets immediately from home and abroad.
    Total Reply(0) Reply
  • এর সকল সম্পদ বাজেআপ্ত করা হো। ১ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৩২ পিএম says : 0
    ওকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্যাসিনো


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ