পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে জুয়াড়ি, লুটপাটকারী সরকার মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই জুয়াড়ি সরকারকে হটাতে হবে। তিনি বলেন, কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তি চাইলে তা পাওয়া যাবেনা। এজন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শেয়ার বাজার, ব্যাংক, ক্যাসিনোর লুটেরা মধ্যরাতের এ অবৈধ সরকারকে সরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য সমস্ত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজপথে সোচ্চার হতে হবে। ক্ষমতায় বসে থাকা অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গতকাল রোববার বিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানের পাশের রাস্তায় বিএনপির রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মধ্য রাতের অবৈধ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এই জুয়াড়ী লুটপাটকারী শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না। গণতন্ত্রও মুক্তি পাবে না। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই গণতন্ত্রও মুক্তি পাবে।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে অঘোষিত কারফিউ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে আর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তির সমাবেশকে ঠেকানো যায়নি। সকল বাধা বিপত্তি উপক্ষো করে সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি জানিয়ে দিচ্ছে জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। জনগণের সরকার চায়। আর শুধু চাইলে তা হবে না। ফ্যাসিস্ট এ সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায় বলে মিথ্যে মামলা আর বন্দুকের ক্ষমতার জোরে আটকে রেখেছে। তাকে মুক্ত করতে হলে রাজপথে নামতে হবে। জীবন বাজী রেখে আন্দোলন করতে হবে। যেখানে বাধা আসবে সেখানে তা অতিক্রম করতে হবে।
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্যে করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাতের আঁধারে এদের ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এখন বুঝছেন কি ভুল হয়েছে। শেয়ার বাজার, ব্যাংক লুট, দুর্নীতি, জুয়ার বাজার বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। বছরে ২৭ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আরো কত অজানা তথ্য রয়েছে। এদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে জনগণের কাতারে আসুন। জনগণকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না। তাদের উপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ করুন। সত্য ন্যায়ের পথে থাকুন। অন্যায় কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের এক আজব তথ্য মন্ত্রী রয়েছেন জাতিকে একেক সময় একেক মিথ্যে তথ্যদিয়ে মিথ্যাচার করেন। তাদের জুয়ার টাকা নাকি বিদেশে নির্বাসিত নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পান। কি চমৎকার কথা। লুটপাট করে তার দলের লোকজন আর ভাগ দেন বিএনপিকে। যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেছেন চারিদিকে এতো ক্যাসিনো আর জুয়ার আসর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কি এতদিন আঙ্গুল চুষেছে।
বিএনপি মহাসচিব আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, যে নেত্রী বাংলাদেশের গনতান্তিক আন্দালনে তার সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন। স্বৈরাচারের হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য জনগণকে নিয়ে সংগ্রাম করেছেন। গণতন্ত্র উদ্ধার করেছেন আপোষহীনভাবে। কারাবরণ করেছেন নির্যাতন সয়েছেন। সেই নেত্রীকে এক মিথ্যে মামলায় সরকার কারাগারে আটকে রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার সাথে পরিবারের সদস্যরা সহজ ভাবে দেখা করতে পারেনা। দলের নেতাদের দেখা করতে দেয়া হয়না। রাজনীতির কারনে তাকে এমন শাস্তি দেয়া হচ্ছে। নেত্রীর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কথা উল্লেখ করে বলেন, মাকে অত্যাচার করা দেখতে না পেরে তিনি মারা গেছেন। মায়ের উপর যেভাবে সরকার নির্যাতন করেছেন তা ছেলের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। তার মারা যাওয়ার একমাত্র কারণ এই সরকারের অত্যাচার। তার ছেলে যখন মৃত্যুবরন করেছেন তিনি তখনও জেলে। আমরা দীর্ঘ এই ১৮ মাস ধরে নেত্রীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছি, সংগ্রাম করছি। কিন্তু সরকার যেভাবে আইন আদালতকে বেধে ফেলেছেন তাতে আইনের শাসন দেশে নেই।
তিনি বলেন আমরা তার মুক্তির জন্য সবরকম চেষ্টা করছি। নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু সবকিছু নস্যাৎ করে দিযেছে এ ফ্যাসিস্ট সরকার। তার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানিদের কাছে আটক ছিলেন। ফখরুল বলেন, বিএনপি স্বাধীনতার পক্ষের একটা রাজনৈতিক দল। এর প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক। এই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আমরা। আমরা দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসাতে চাই না। আমরা জনগণকে তার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চাই। দেশের মালিক, জনগণ! তুমি ভোটের অধিকার কেড়ে নেবে ? এটা কি মামা বাড়ির আবদার? আমার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে বোকা বানিয়ে বাইরের দেশে পুরস্কার আর পুরস্কার নেবে? বাইরের পুরস্কার নিয়ে লাভ হবে না। দেশের মানুষের ভালোবাসা নেয়ার চেষ্টা করেন। সেটা সম্ভব হবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার প্রচার করে অথচ বিদ্যুত থাকেনা। গ্যাসের দাম দফায় দফায় বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে, চালের দাম বাড়ে। শুধু বাড়েনা কৃষকের ধানের দাম। এমন সরকারের দরকার নেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজশাহীকে সকল জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করেও সমাবেশ ঠেকানো যায়নি। বাধা না দিলে জনসভা জনসমুদ্র হতো। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয় বলে জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই। এরা সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ পর্যন্ত দলীয়করণ করে ফেলেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আজ দুর্নীতি প্রতিষ্ঠিত। বালিশ পর্দা, বই দুর্নীতি, ক্যাসিনো জুয়ার কথা আজ জনগণের মুখে মুখে ফিরছে। ধিক্কার জানাচ্ছে। অথচ এগুলো ছিঁচকে চুরি বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি ঘরে ঈদের সেলামীর টাকা। আওয়ামীলীগ যুবলীগ নেতাদের বাড়ি অফিস থেকে বের হচ্ছে কোটি কোটি টাকা, স্বর্ণলংকার। বড়দের কাছে রয়েছে আরো বড় অংক। এসব ক্যাসিনো জুয়ার আসর বড়দের ইঙ্গিত না থাকলে এটি চালানো সম্ভব নয়। এখন চলছে লোক দেখানো গ্রেফতার অভিযান। আর বাড়ছেনা। কারন আসল থলের বেড়াল বেরিয়ে যাবে এ ভয়ে। জনগণ ট্যাক্স দেয় সে টাকা লুট হয়ে যায়। সুইস ব্যাংক আর সেকন্ড হোমে চলে যায়। আজ সময় এসেছে এ লুটেরাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার। গণতন্ত্র পূন:প্রতিষ্ঠা করার। আর এজন্য প্রয়োজন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।
মির্জা আব্বাস বলেন, বেগম জিয়াকে মিথ্যে মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। কোথাও প্রমাণিত হয়নি বেগম জিয়া এতিমখানার টাকা আত্মসাত করেছে। তারেক রহমানের নামে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছে। ৪৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রমাণ যোগাড় করতে পারেনি। তিনি বলেন, মরহুম শেখ মুজিবর রহমান ক্ষমতায় বসে আক্ষেপ করে বলেছিলেন সবাই পায় সোনার খনি আর তেলের খনি। আর আমি পেলাম চোরের খনি। ডানে বামে সব চোর। আজো সে সব চোর ভর করে আছে। এসব বড় চোরদের ধরা হয়না। কেননা কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে যাবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় বলে শ্লোগান দিলে হবেনা। প্রতিজ্ঞা করতে হবে বাধা দিলে বাধবে লড়াই মাথায় রেখে আন্দোলন করতে হবে। রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে কিন্তু দেশকে বাঁচাতে ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। আর কাপুরুষের মত পিছু হটা নয় তাহলে আন্দোলন সফল হবেনা।
তিনি বলেন, যারা মামলা দিচ্ছেন তারাও সময়মত মামলায় পরবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে তারা বাধা দেন ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তারাও জেলে যেতে পারেন। নিজেদের নিরাপদ রাখার জন্য বেগম জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দিন। বেগম জিয়াকে মুক্ত ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে তা আরো বেগবান হচ্ছে রাজশাহীর সমাবেশ তার প্রমাণ।
বিএনপি রাজশাহী বিভাগীয় এ সমাবেশে নগর বিএনপি সভাপতি সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে ও নগর সেক্রেটারি শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, কর্ণেল (অব.) আব্দুল লতিফ, হাবিবুর রহমান হাবিব, এড. কামরুল মনির, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শ্যামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা নাদিম মোস্তফা, শাহীন শওকত, জিএম সিরাজ, আবু সাঈদ চাঁদ, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মুরতাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎসজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, এস এম জিলানী, নজরুল ইসলাম, বিশ্বনাথ সরকার, আমিনুল ইসলাম, আবুল কারিম আজাদ সুইট, মাহফুজুর রহমান রোটন, আসাদুজ্জামান জনি, রবিউল ইসলাম রবি, রিজভী আহমেদ. ওয়ালিউজ্জামান পরাগ, মোসাদ্দেক জামেলী সুমন, শফিকুল আলম সমাপ্ত, রেজাউল করিম টুটুল, শফিকুল ইসলাম জনি প্রম‚খ।
বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ স্থল মাদ্রাসা মাঠের পাশের রাস্তা ছাড়িয়ে আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলার উপস্থিতি ছিল। উপস্থিত সবাই দুহাত তুলে বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের কর্মসূচির জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবী জানান। যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত বলে অঙ্গীকার করেন। চারিদিকে একই শ্লোগান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। আমার নেত্রী আমার মা বন্দী থ্কাতে দেবনা। লুটেরা ক্যাসিনো সরকারের বিদায় চায় বিদেয় করতে লড়তে হবে এক সাথে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।