শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
স্যার বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল (১৭ আগস্ট ১৯৩২ – ১১ আগস্ট, ২০১৮) একজন অত্যন্ত বড় মাপের লেখক ছিলেন। লেখার জন্য নন্দিত ও নিন্দিত দু’টোই ছিলেন সমানভাবে। তার লেখার তির্যক ভাষা অনেকককেই খুশী করতে পারেননি। তিনি সমালোচকদের ভয় পাননি। তার বক্তব্য অকাতরে বলেছেন ইচ্ছেমতো। প্রচÐ উদ্যমী এক জীবন পার করেছেন তিসি সানন্দে।
ভারতীয়-নেপালীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় সাহিত্যিক তিনি। তিনি পরবর্তীকালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেন। তিনি মূলত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে থাকেন। ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয় করেন। তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পটভূমিতে রচিত তার হাস্যরসাত্মক উপন্যাস, বিশ্ব বিস্তৃত শীতল উপন্যাস এবং তার জীবন ও ভ্রমণকাহিনী নিয়ে রচিত আত্মজীবনীমূল উপন্যাসসমূহের জন্য পরিচিত। পঞ্চাশ বছরের অধিক সাহিত্য জীবনে তার ত্রিশের অধিক কল্পকাহিনী ও ননফিকশন প্রকাশিত হয়, তন্মধ্যে উলেখযোগ্য হল ইন আ ফ্রি স্টেট, আ বেন্ড ইন দ্য রিভার, আ হাউস ফর মিস্টার বিশ্বাস।
নাইপল ১৯৩২ সালের ১৭ই আগস্ট ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর চাগুয়ানাসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিপ্রাসাদ নাইপল ও দ্রোয়াপতি কাপিলদেওয়ের দ্বিতীয় সন্তান। ১৯৮০-এর দশকে তার পিতামহরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে ভারত হতে অভিবাসিত হয়ে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো যান। ত্রিনিদাদে ভারতীয় অভিবাসী স¤প্রদায়ে নাইপলের পিতা ইংরেজি ভাষার সাংবাদিকতা করতেন এবং ১৯২৯ সালে ত্রিনিদাদ গার্ডিয়ানে প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। ১৯৩২ সালে নাইপলের জন্মের বছরে তার পিতা চাগুয়ানাসে করেসপনডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। নাইপল ২০০১ সালে নোবেল পুরস্কারের ভাষণে বলেন পিতার দিক থেকে তিনি নেপালি বংশোদ্ভূত।
১৯৩৯ সালে সাত বছর বয়সে নাইপলের পরিবার ত্রিনিদাদের রাজধানী পোর্ট অব স্পেনে চলে যায়, সেখানে তিনি ব্রিটিশ সরকারী বিদ্যালয়ের আদলে নির্মিত সরকারী কুইন্স রয়্যাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পাস করার পর নাইপল ত্রিনিদাদের সরকারী বৃত্তি লাভ করেন, যার ফলে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্রিটিশ কমনওয়লেথের যে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পান।
১৯৫০ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তিতে নাইপল ইংরেজি সাহিত্য পড়তে যান অক্সফোর্ডে। এরপর সেখানেই থেকে গিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বময়। কিন্তু কোথাও নিজেকে খুঁজে নিতে পারেননি। নিজেই নিজেকে বর্ণনা করেছেন একজন শেকড়হীন মানুষ হিসেবে। বলেছেন, তিনি তার লেখাগুলোর সমষ্টিমাত্র।
নাইপল যেখানে গেছেন, সেখান থেকেই তুলে এনেছেন লেখার উপাদান। নির্মম গদ্যে উপহার দিয়েছেন একের পর এক উপন্যাস অথবা ভ্রমণ
বৃত্তান্ত। ভারত, আফ্রিকা বা ত্রিনিদাদে তিনি কখনও ভালো কিছু দেখেননি। তার তির্যক ভাষার কর্কশ বর্ণনায় তৃতীয় বিশ্ব চিত্রিত হয়েছে বিভৎস ভূখÐ হিসেবে।
২০১৬ সালে ঢাকা লিট ফেস্টের উদ্বোধনেও এসেছিলেন নাইপল। বলেছিলেন, “আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কি লিখবো তার কিছুই জানতাম না। কিন্তু লিখবো, এটা জানতাম। আমি বুঝতে পারলাম যে এজন্য আমাকে কাঠখড় পোড়াতে হবে। আমার কাছে ব্যাপারটা খুব বিব্রতকর ছিল। আসলে লেখাঝোঁকা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না।”
তার লেখা উলেখযোগ্য গন্থসমূহের ভেতর রয়েছেঃ
দ্য মিস্টিক ম্যাসুর (১৯৫৭), দ্য সাফ্রেজ অব এলভিরা (১৯৫৮), মিগ্যেল স্ট্রিট (১৯৫৯), আ হাউজ ফর মিস্টার বিশ্বাস (১৯৬১), মিস্টার স্টোন এন্ড দ্য নাইটস কম্প্যানিয়ন (১৯৬৩), দ্য মিমিক মেন (১৯৬৭), আ ফ্ল্যাগ অন দি আইল্যান্ড (১৯৬৭), ইন আ ফ্রি স্টেট (১৯৭১), গেরিলাস (১৯৭৫), আ বেন্ড ইন দ্য রিভার (১৯৭৯), দি এনিগমা অব এরাইভাল (১৯৮৭), আ ওয়ে ইন দ্য ওয়ার্ল্ড (১৯৯৪), হাফ আ লাইফ (২০০১), দ্য নাইটওয়াচম্যান্স অকারেন্স বুক: এন্ড আদার কমিক ইনভেনশন (গল্প) - (২০০২), ম্যাজিক সিডস (২০০৪) প্রভৃতি।
লেখনির জন্য জীবনভর তিনি যতটা প্রশংসিত হয়েছেন, ঠিক ততটাই নিন্দিত হয়েছেন ভারত, ইসলাম, উন্নয়নশীল বিশ্ব আর নারীদের নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমসাময়িক লেখকদের সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে।
স্ত্রী নাদিরা নাইপলের বর্ণনায় নাইপল ছিলেন ‘সব অর্জন মিলিয়ে বিরাট এক মানুষ’।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, নাইপল যাদের ভালোবাসতেন, যাদের সঙ্গে পার করেছেন অসাধারণ উদ্যমী আর সৃষ্টিশীল এক জীবন, তাদের সান্নিধ্যেই তার শেষ সময়টা কেটেছে।
স্যার বিদ্যাধর সূরজপ্রসাদ নাইপল যে সমকালীন ইংরেজি সাহিত্যের একজন বড় মাপের লেখক ছিলেন- এ নিয়ে সাহিত্য মহলে দ্বিমত নেই। গল্প বলিয়ে হিসেবে তার অনবদ্য দক্ষতা নিয়েও কারও প্রশ্ন নেই।
৮৫ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ১১ই আগস্ট লন্ডনে নিজ বাড়িতে নাইপল ইহলোক ত্যাগ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।