চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
জিকির অর্থ স্মরণ করা। আল্লাহকে স্মরণের গুরুত্ব অপরিসীম। জিকিরের মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর সংযোগ স্থাপিত হয়। জিকিরের প্রতিটি ধ্বনির সাথে কালবের ময়লা গুলো ঝড়তে থাকে। সেই সাথে মুমিনের রূহ সতেজ হতে থাকে। কুরআন ও হাদিসে জিকিরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিন! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমান স্মরণ কর।’ (সূরা আহযাব: ৪১)। ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।’ (সূরা বাকারা:১৫২)। হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন আমার বান্দা আমাকে স্মরণ করে এবং তাহার ঠোঁঠ আমার স্মরণে নড়চড়া করিতে থাকে তখন আমি তাহার সঙ্গে থাকি।’(মু.খা. ইলম ও জিকির: ১৩১)।
টাকা-পয়সা ও ধন-দৌলত মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। বরং মানুষের পেরেশানি বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে আল্লাহর জিকির এমন একটি ইবাদত, ইহা যত করতে থাকবে, ততই আত্মর শান্তি বাড়তে থাকবে। আল্লাহর রহমত বৃষ্টির মত কালবে আসতে থাকবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরে তাদের অন্তঃকরণ প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর জিকিরই অন্তর সমূহকে প্রশান্ত করে।’ (সূরা রা’দ:২৮)। হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্নিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার জিকির করে আর যে জিকির করে না, তাহাদের মধ্যে উভয়ের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের মত। জিকিরকারী জীবিত ও যে জিকির করে না সে মৃত।’ (বোখারি:৮/৬৪০৭)।
জিকিরের ফজিলত খুবই ব্যাপক। জিকিরের ফজিলত এতোই যে, ইহা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি কি তোমাদিগকে এমন আমল বলিয়া দিব না, যাহা তোমাদের আমলের মধ্যে সবচাইতে উত্তম, তোমাদের মালিকের নিকট সবচাইতে পবিত্র, তোমাদের মর্যাদাকে সবচাইতে উন্নতকারী, সোনা-রূপা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় খরচ করা অপেক্ষাও উত্তম এবং জিহাদে তোমরা শক্রুকে কতল করিবে আর তাহারা তোমাদিগকে কতল করে ইহা হইতেও উত্তম হয়? আমি আরজ করিলাম, অবশ্যই বলিয়া দিন। তিনি বলিলেন, তাহা হইল, আল্লাহতায়ালার জিকির।’(মু.খা. ইলম ও জিকির:১৩৪)। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) বর্নিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন,‘জান্নাতীদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোন জিনিসের জন্য আফসোস হইবে না। শুধু ঐ সময়ের জন্য আফসোস হইবে, যাহা দুনিয়াতে আল্লাহতায়ালার জিকির ব্যাতীত অতিবাহিত হইয়াছে।’(মু.খা. ইলম ও জিকির:১৩৮)।
যারা আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল থাকেন, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তেÍাষ্ট থাকেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘ আর যে আমার জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়।’ (সূরা ত্বা-হা:১২৪)। হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন,‘ যে সমস্ত লোক এমন কোন মজলিস হইতে উঠে যেখানে তাহারা আল্লাহ তায়ালার জিকির করে নাই, তবে তাহারা যেন মৃত গাধার নিকট হইতে উঠিয়াছে। আর এই মজলিস কিয়ামতের দিন তাদের জন্য আফসোসের কারণ হইবে।’ (মু.খা. ইলম ও জিকির:১৬৮)। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত আমলের পাশাপাশি আল্লাহ জিকিরে মশগুল থাকার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখকঃ ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক, মুঠোফোন: ০১৬৭৭৪৫৪৭৬৩।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।