পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
শ্রীনগর থেকে ৫ কিলোমিটার দ‚রে শহরতলী বেমিনা’র ফেরদৌস কলোনির বাসিন্দা রফিক আহমেদ সাগুর জীবন ৯ আগস্ট বিকেল থেকে স্তব্ধ হয়ে আছে। ওইদিন নিরাপত্তাবাহিনীর ছোঁড়া টিয়ার গ্যাসে দম আটকে মারা গেছেন তার স্ত্রী। ১০ সেপ্টেম্বর ফ্যাক্টচেকারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সাগু এ কথা বলেছেন। সাগুর স্ত্রী ফাহমিদা তখন বাসায়। হঠাৎ টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ায় তার ঘর আচ্ছন্ন হয়ে যায়। দম নিতে পারছে না বলে ফাহমিদা চিৎকার করতে থাকে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। ফাহমিদার প্রেসক্রিপসন ও ডেথ সার্টিফিকেট বলছে আকস্থি§কভাবে ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন এবং এর কারণ হতে পারে বিষাক্ত গ্যাস। তার স্বামী জানান এটা ছিলো টিয়ারগ্যাস। ১৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন সরকার [কাশ্মীরে] একটি গুলি না ছুঁড়ে ও একজনকে হত্যা না মেরেও শান্তি বজায় রেখেছে। তার এই বক্তব্যকে অফিসিয়াল বলে নিশ্চিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া আমাদের প্রতিবেদনগুলো বলছে এই দাবি মিথ্যা। ফ্যাক্টচেকার হাসপাতালের রেকর্ড পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে অন্তত দুটি মৃত্যু হয়েছে বিষাক্ত গ্যাস নি:শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করায় এবং অন্যগুলো ধাতব ছড়ড়া গুলির কারণে। বিক্ষোভ দমনে প্যালেট গান ব্যবহারের কথা জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নর ও পুলিশ স্বীকার করেছে। ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৭০ বছরের পুরনো ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর জম্মু-কাশ্মীরে গণবিক্ষোভ দেখা দেয়ার আশঙ্কা করে নয়া দিল্লির সরকার। ওই ধারায় রাজ্যটিকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছিলো। কাশ্মীর উপত্যকাজুড়ে বিশেষ জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং অঞ্চলটির সঙ্গে বাইরের বিশ্বের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। তবে ৯ আগস্ট ফেরদৌস কলোনীতে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ ও পাথর ছোড়াঁর মতো ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে। ৫ থেকে ২১ আগস্ট সময়ের মধ্যে শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স (এসকেআইএমএস) ও শ্রী মহারাজা হরি সিং হাসপাতালে (এসএমএএইচএস) অন্তত ১৫২ জন রোগীয় আসে যারা প্যালেট গানের গুলি বা টিয়ারগ্যাসের শেলে আহত হয়েছে। ৪ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ৪৭ জন রোগী ভর্তি হয় চোখে ছররা গুলির আঘাত নিয়ে। স্ত্রীর মৃত্যুতে একেবারে ভেঙ্গে পড়ার কথা জানিয়েছেন সাগু। তাদের বিয়ের বয়সমাত্র ১০ বছর। জীবিকার জন্য যাত্রীবাহী ক্যাব চালাতেন সাগু। তিনি এখন দুই সন্তানের প্র্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না – কেন তাদের মা তাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। টিয়ারগ্যাসের শেলের আঘাতে ৩ সেপ্টেম্বর মারা যায় আরেকজন – ১৮ বছর বয়সী আসরার আহমেদ খান। ৬ আগস্ট শ্রীনগরের এলাহিবাগ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় সে বাড়িতে থেকেও রেহাই পায়নি। বিক্ষোভ¯ল ছিলো তার বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দ‚রে। সে উঠানে খেলছিলো। এসময় একটি টিয়ারগ্যাস শেল তাকে আঘাত করে। এসকেআইএমএস থেকে দেয়া রোগীর নথিতে বলা হয়েছে শেল/বিস্ফোরণ/প্যালেট ক্ষতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথা ও চোখে বেশ কিছু প্যালেট বিদ্ধ হয়। তবে, কাশ্মীর পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুনির খান ৪ সেপ্টেম্বর এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন পাথর নিক্ষেপকারীদের পাথরে তার মৃত্যু হয়েছে। খানের পরিবার বলছে যে সে কখনো বিক্ষোভে যায়নি বা পাথর ছোঁড়ায় অংশ নেয়নি। তাই রাজনীতি বা ৩৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সে ছিলো বেখবর। ৪ সেপ্টেম্বর দি গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট থেকে, আসরার খানসহ ৫ জন বেসারিক ব্যক্তির নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সেনা অফিসার লে. জেনারেল খানওয়াল জিৎ সিং ধিলন। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্যালেট বন্দুকে ২,৯৩৪ কাশ্মীরী আহত হয়, এদের মধ্যে ১৪০০ জন চোখে আঘাত পায়। এসএমএইচএস ও এসকেআইএমএস হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য এটা। একই তথ্যে টিয়ারগ্যাসে ১৭৬ জন আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।