শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
কবি কাজী নজরুল ইসলাম এভাবে রাজনৈতিক,সাংঘটনিক এবং সাহিত্যের কাজে বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী, সন্দীপ, সিলেট, কুষ্টিয়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগন্ঞ্জ সফর করেন। কবি যেখানেই যেতেন সেখানেই মানুষের ঢল নামতো। কবি ও তাদের সান্নিধ্যে, আড্ডায় জমিয়ে রাখতেন পুরো সময়।
বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সাথে কবির আত্মিক ও হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল।কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯২৬ সালের জুন মাসে।রাজনৈতিক কারনেই তাঁর প্রথম ঢাকা আসা। এ সময় তিনি উঠেছিলেন মোহিনী মোহন দাশের বাড়ীতে। ১৯২৮সালে দ্বিতীয় বার কবি ঢাকায় এলে কবির সঙ্গে পরিচয় ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ফজিলাতুন্নেছার সাথে।বন্ধু মোতাহার হোসেনের মাধ্যমে এ পরিচয়। ফজিলাতুন্নেছাকে কবি ভালোবেসে ফেলেন গভীর ভাবে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের মেধাবী ছাত্রী তাঁর এ প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেননি।আবেগ প্রবণ কবি তাঁর হৃদয়ের এই নারীকে নিয়ে একাধিক গান কবিতা রচনা করেছেন। ফজিলাতুন্নেছা কবির স্বপ্ন।কবির বেদনা ও ভালোলাগা। স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের দোলায় দোলেন কবি।এই বিদুষী নারী, হৃদয় প্রিয়াকে নিয়ে ‘এ মোর অহংকার’ কবিতায় কবি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এইভাবে --
নাইবা পেলাম আমার গলায় তোমার হার
তোমায় আমি করব সৃজন এ মোর অহংকার।
বাংলাদেশ নামটি কবি নজরুলেরই সৃষ্টি।বাংলাদেশ নাম নিয়ে তিনি একাধিক গান, কবিতা লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সোনার বাংলা, জীবনানন্দ দাশ ‘রুপসী বাংলা’ কিন্তু নজরুল বলেছেন ‘বাংলাদেশ’। তাঁর একটি গান-
নম: নম: নমো বাংলাদেশ মম/ চির- মনোরম চির- মধুর।
বুকে নিরবধি বহে শত নদী/ চরণে জলধির বাজে নূপুর।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামে কাজী নজরুল ইসলাম প্রেরনার উৎস।তাঁর রচিত ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘ওরে ধ্বংস পথের যাত্রী দল’, ‘চল চল চল’, ‘একি অপরুপ রুপে মা তোমায়’, ‘খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘দূর্গম গিরি কান্তার মরু’ প্রভৃতি গান কবিতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে,স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উজ্জীবিত করেছে।
১৯৭১ সালে লক্ষ প্রাণের রক্তের বিনিময়ে আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাঙ্গালীর দীর্ঘদিনের সাধনা পূরণ হয়।বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয় কবিকে।তাঁর রচিত ‹চল চল চল› গানটিকে করা হয় রণ সংগীত।
আজ সমাজ ও রাষ্ট্রের যে অসঙ্গতি,মানুষে মানুষে যে অসাম্য,শোষকের হাতে শোষিতের যে নিষ্পেশন তা দূর করতে আমাদের নজরুলের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে।তাইতো কাজী নজরুলের সংবর্ধনা সভায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন-গ্ধআমরা যখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাব-তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে।আমরা যখন কারাগারে যাব তখনও তাঁর গান গাইব। কবি নজরুল যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেটা শুধু তাঁর নিজের স্বপ্ন নয়, সমগ্র বাঙ্গালী জাতির স্বপ্ন’।
নজরুলের আজন্ম সাধনা ছিল স্বাধীনতা। আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতী পৃথিবীর বুকে থাকবে ততদিনই নজরুলের লিখনি আমাদের পথ দেখাবে। স্বপ্ন দেখাবে বীরের মতো উন্নত শিরে বেঁচে থাকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।