পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্বের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলো মাত্রাতিরিক্ত ফসিল জ্বালানীর ব্যবহার ও কার্বন নি:সরণ এই বৈশ্বিক সংকটের জন্য দায়ী হলেও এই সংকটে বাংলাদেশকে চরম মাশুল গুনতে হচ্ছে। জনবায়ুর পরিবর্তনের কারণে যখন থেকে বিশ্বের দেশে দেশে যে সব সম্ভাব্য সংকট সৃষ্টির আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, সে সব আশঙ্কার শুরুতেই বার বার বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। মার্কিন যক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক, কৃষি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক, জয়েস জে চেন সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রভাবে বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে বলেন, চলতি শতাব্দীর শেষে বাংলাদেশের উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দেড় মিটার বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জয়েস জে চেনের গবেষণা অবলম্বনে বিবিসি সাংবাদিক উইলিয়াম পার্কের লেখা প্রতিবেদনটি গত সোমবার বিবিসিতে প্রকাশিত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের প্রথাগত জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের গ্রামীন জনপদের মানুষের টিকে থাকার কঠিন চ্যালেঞ্জ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গবেষকরা দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ুর পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলছেন । তবে আমরা ইতিমধ্যেই সে সব আশঙ্কা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাড়িয়েছি। অসহ্য গরমে জনজীবন অতিষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নানাবিধ রোগের প্রাদুর্ভাব এবং দীর্ঘদেয়াদি খরা, আকষ্মিক বন্যা, সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ও উপকুলবর্তি শহরগুলো নোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছি আমরা।
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পুরোটাই প্রাকৃতিক বিষয় নয়। অনেক কিছুই মানব সৃষ্ট সংকট থেকে উদ্ভুত। অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা সরকারের রাজনৈতিক-ক’টনৈতিক সক্ষমতার বিষয়। দশকের পর দশক ধরে এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সরকার ব্যর্থ হওয়ার কারণে আমাদের নদীগুলোতে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে। এ কারণে উজানের ঢলে নদী তীর উপচানো আকস্মিক বন্যায় লাখ লাখ একর জমি তলিয়ে শত শত কোটি টাকার ফসল হানি ঘটে। দেশের রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ঐক্য এবং সরকারের সুপরিকল্পিত উদ্যোগ ও পদক্ষেপে এ ধরনের সাংবাৎসরিক সমস্যা নিরসন করা অসম্ভব নয়। সেই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত জনবল, লজিস্টিক সাপোর্ট, প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় দেশের কৃষি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙ্গণের মত বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানী শহরের রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়া, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের রাস্তা ও নি¤ম্নাঞ্চল সমুদ্রের নোনাপানিতে তলিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা থেকে মুক্তির স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। উপকুলীয় সবুজ বেষ্টনীসহ নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলে কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং নিরাপত্তার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
যদিও জলবায়ুর পরিবর্তনের নিয়ামক উপাদানগুলোর বেশিরভাগই মানব সৃষ্ট। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে না পারলেও দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা ও প্রস্তুতির উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। চলতি সপ্তাহে আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ৪ মাত্রার হ্যারিকেন ডোরিয়ান ২৪০ কিলোমিটার বেগে বাহামা দ্বিপপুঞ্জের উপকুলভাগে আঘাত হেনেছে। প্রলয়ঙ্করি এ সামুদ্রিক ঝড়ে ১৩ হাজারের অধিক বাড়িঘর ধ্বংস হলেও মাত্র ৫জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ থেকেই বুঝা যায়, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। সেটেলাইট অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবস্থায় আগাম পূর্বাভাস অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠায় এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণের যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। তবে প্রশিক্ষিত জনবল, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সার্পোট এবং অবকাঠামোগত প্রস্তুতি দুর্যোগকে সামনে রেখে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের আলোকে ক্লাইমেট ফান্ড ও সামগ্রিক কর্মকৌশলের আওতায় দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। উপকূলে নোনাপানি ছড়িয়ে পড়ার আগেই লবণাক্ত পানিতে ধান ও মৎস্যচাষের উপযুক্ত নতুন কৃষিবীজ ও প্রযুক্তির কথা চিন্তা করতে হবে। কৃষি গবেষণা, পরিবেশ অভিযোজন এবং পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে বাজেট বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্য সামনে রেখে আমাদের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পের রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে। বহুল প্রত্যাশিত ব-দ্বীপ মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।