শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সংগীত জগতের সম্রাট আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতিমান হলেও তাঁর রচনা আলোকিত করে রেখেছে সাম্য, প্রেম, দর্শন, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চেতনার জগত।
সাহিত্যের সকল শাখায় কবি নজরুলের অনন্য বিচরণের পাশাপাশি সুর ও সংগীতের জগতে তিনি এক মূর্তিমান মহাসাধক। সুর ও সংগীত পারদর্শিতার গুণ নজরুল সংগীতকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ললিতকলা শিল্পে প্রতিষ্ঠিত করতে কবি নজরুল সক্ষম হয়েছেন। এক কথায় নজরুলের সংগীত সাধনা সমুদ্রের মতো সুবিশাল ও সুগভীর এবং অসীম আকাশের মতোই বৈচিত্রময় ও মনোমুগ্ধকর।
সংগীতের সুর, তাল, লয়, ভাব, ভাষা, ব্যঞ্জনা, শব্দচয়ন এবং বিভিন্ন ধরণের মাত্রা বিন্যাসের সমন্বয়ে বাংলা সংগীত জগতে কিংবদন্তী সংগীতজ্ঞ হিসেবে অমর হয়ে আছেন কবি নজরুল। উচ্চাঙ্গ ও রাগের আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন রাগিণীর প্রয়োগে নজরুল সংগীত হয়ে উঠেছে বাংলা সংগীত জগতের অদ্বিতীয় এক ভাবময় কেন্দ্রবিন্দু।
এমন কোনো দিক বা ক্ষেত্র নেই যেখানে নজরুলের সংগীত অলংকৃত করেনি। দেশাত্ববোধক, আধুনিক গান, পল্লীগীতি, জারি-সারি, বিভিন্ন রাগ-রাগিণী, আধ্যাত্মিক, সুফি ও ভক্তিম‚লক, ইসলামি সংগীত, শ্যামাসংগীত, শাস্ত্রীয় সংগীত ঋতুবিষয়ক সংগীতসহ সব ধরনের সুর সংযোজন ও ভাব-ব্যঞ্জনার বিকাশ ঘটিয়েছেন নজরুল তাঁর সংগীত সম্ভারে।
নজরুল সংগীতে রূপকের অনন্য ব্যবহারে মনের আবেগ, অনুভূতি, অর্চনা, স্বপ্ন, মনের গোপন কামনা-বাসনা, অভিমান, বিরহ-বিচ্ছেদ প্রতিফলিত করতে গিয়ে অদ্বিতীয় পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
নজরুল রচিত ইসলামি গজলসমুহ সত্যিই হৃদয়তন্ত্রীতে আলাদা প্রেমময় স্পন্দন জাগিয়ে তোলেÑ
তৌহিদেরি মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম
ঐ নাম জপলেই বুঝতে পারি খোদায়ী কালাম-
মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম।।
এমন প্রেমসিক্ত অসংখ্য ইসলামি সংগীত রচনা করেছেন কবি নজরুল। জগতের গ্রষ্টা আল্লাহ্র কাজে নিজেকে সমর্পন এবং নবি মোহাম্মদ(সা.)এর গূণকীর্তনের প্রেমজাগানো সুর বেজে ওঠেছে কবি নজরুলের কণ্ঠে, যা নবীপ্রেমের রসময় ভাবের পরশ জাগিয়ে তোলে দেহমনেÑ
মোহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে
তাই কিরে তোর কণ্ঠেরি গান, (ওরে) এমন মধুর লাগে।।
নবজাগরণের কবি হিসেবেও নজরুল অগ্নিবৎ মুর্তিমান। পুরনো আমলের ধ্যান-ধারণা, কুসংস্কার ও জরাজীর্ণতার জাল ছিঁড়ে, জরা ও বিকারগ্রস্ত পথহারা পথিকের উদভ্রান্ত গতিকে রুখে দিয়ে জীবনকে আধুনিকতার আলোয় আলোকিত করে সামনে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন সংগীতে তিনি দৃপ্তকণ্ঠে গেয়েছেন-
ঐ ন‚তনের কেতন উড়ে কালবোশেখীর ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।
প্রেমের কবি হিসেবেও নজরুলের অবদান বাংলা সংগীত জগতে আলোকিত এক মহাসম্ভার। তিনি প্রেমকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। তিনি এসেছিলেন প্রেম দিতে এবং প্রেম পেতে। জাগতিক প্রেমের মিলন ঘটাতে চেয়েছেন পরম প্রেমে। মনের মানুষ প্রাণের প্রেয়সীকে তিনি প্রকৃতির রূপ, রং ও অলঙ্কারে সুশোভিত করে সাজাতে চেয়েছেন! কবির প্রেমবিষয়ক সংগীতসমূহ মর্মে মর্মে ঢেউ তুলে মগ্ধময় চেতনায়Ñ
মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল।।
প্রিয়তমার বিচ্ছেদ বিরহে মূহ্যমান হয়ে মিলনের আকাঙ্খায় কবি গেয়েছেন-
আজো মধুর বাঁশরি বাজে/গোধূলি লগনে বুকের মাঝে
মধুর বাঁশরি বাজে...।।
ভজন ও শ্যামা সংগীতে বিশ্বের সংগীত জগতে অনন্যভাবে আলোকিত হয়ে আছে নজরুল সংগীত। প্রর্থনা ও আরতির ভাবে মূহ্যমান হয়ে বিনয় কাতরে কবির প্রাণ আনচান করে ওঠেÑ
হে গোবিন্দ রাখ চরণে।
মোরা তব চরণে শরণাগত আশ্রয় দাও আশ্রিত জনে হে।।
অন্য আরেকটি সংগীতে কবির নিগূঢ় মনের ভাবময় অর্চনার সুর পাওয়া যায়-
অরুণ-কান্তি কে গো যোগী ভিখারি।
নীরবে হেসে দাঁড়াইলে এসে
প্রখর তেজে তব নেহারিতে নারি।।
এছাড়াও অগণিত শ্যামা ও ভজন সংগীত রচনা করে কিংবদন্তী শ্যামা ও ভজন সংগীত রচয়িতা হিসেবে নিজেকে বিকশিত করতে সক্ষম হয়েছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
এক কথায় নজরুল যুগগ্রষ্টা কবি, শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। কবি হিসেবে নজরুল যেমন বিদ্রোহী চেতনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি সুরের জগতেও অদ্বিতীয় গীতিকার ও সুরকার হিসেবেও খ্যাতিমান হয়েছেন। ভাব ব্যঞ্জনায় হৃদয়তন্ত্রীতে সুরবীণায় উদ্বেল করেছেন। নজরুল সংগীত সংগীতপ্রেমী মানুষের হৃদয়ের গভীর পিপাসা মিটিয়ে চলেছেন। সংগীত জগতে কবি নজরুলের স্বার্থক অবদান চিরবরণীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।