পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আর মাত্র দুই দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এবারের ঈদে কোরবানির পাশাপাশি ডেঙ্গু মহামারির আতঙ্ক জনমনে উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ কারণেই এই ঈদে কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি গুরুত্ব ও সচেতন উদ্যোগের দাবি রাখে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরের সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে শহর ও গ্রামের স্থানীয় জনসাধারণকেও নিজস্ব পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ডেঙ্গু সংক্রমের জন্য দায়ী এডিস মশা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেঙ্গুর মহামারি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে চলেছে। ডেঙ্গুতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু শিশু, কয়েকজন ডাক্তার, সরকারি কর্মকর্তাসহ অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এহেন বাস্তবতায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী, রোগীর স্বজন এবং আতঙ্কিত মানুষের জন্য ঈদের আনন্দ অনেকটাই ¤øান হয়ে পড়েছে। এরপরও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির সংখ্যা বা আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি পরিলক্ষীত হচ্ছে না। ত্যাগের শিক্ষা ও ঈদ আনন্দের মেলবন্ধনের পাশে ডেঙ্গুর মহামারি মোকাবেলা ও বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
শুধুমাত্র সরকার ও প্রশাসনের পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণ, কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা উপদ্রæত ৩১ জেলার মানুষের দুর্দশা ও ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ডেঙ্গুর মহামারি, বন্যার ত্রাণ তৎপরতা এবং কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ও উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। ঈদুল আজহার আগে আজ পবিত্র জুম্মাবার। সারাদেশে মসজিদের ইমাম ও খতিবরা স্বাভাবিকভাবেই পবিত্র হজ ও কোরবানির হাকিকতসমূহ নিয়ে আলোচনা করবেন। দেশের চলমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গু রোগ ও কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জুম্মা নামাজের আগে আম বয়ানের বিষয় হতে পারে। হাজার হাজার মসজিদে একযোগে কোটি মানুষের সামনে গণমানুষের দুযোর্গে সব মানুষকে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করার এটাই হচ্ছে সর্বোচ্চ প্ল্যাটফর্ম। নাগরিক সমাজের মধ্যে জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে আজকের জুম্মা নামাজের আগে দেশের সব মসজিদে ইমাম ও খতিব সাহেবরা মুসল্লিদের সামনে বিশেষ সচেতনতামূলক আলোচনা ও বক্তব্য তুলে ধরবেন এবং ডেঙ্গুর মহামারিসহ দেশ-বিদেশে মুসলমানদের দুর্দশা লাঘবে আল্লাহর খাস রহমত লাভের জন্য বিশেষ দোয়া করবেন, এটা এখন সময়ের দাবি।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামের প্রতিটি ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে সব মানুষ ও প্রাণ-প্রকৃতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আজ আমাদের সমাজ যে ডেঙ্গুর মহামারির সম্মুখীন হয়েছে তার মূল কারণ আমাদের ব্যক্তিগত অসচেতনতা, অপরিচ্ছন্নতা এবং সামাজিক দায়িত্বহীনতা। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার দায় অস্বীকার করা যাবে না। সেই সাথে সমাজের সদস্য হিসেবে প্রতিটি নাগরিকেরও দায় রয়েছে। ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অর্ধেক’ এটি একটি সহিহ হাদিস। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, গৃহস্থালি, পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ফরজ গোসলের নির্দেশনা ছাড়াও স্বাভাবিক অবস্থায় কমপক্ষে প্রতি শুক্রবার জুম্মা নামাজের আগে গোসলসহ সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যক করা হয়েছে। বদ্ধ পানিতে কেউ যেন প্রশ্রাব না করে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনাও হাদিসে এসেছে। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা কোন পরিবেশে কোথায় জন্মায় তা এখন সবাই জানে। কিন্তু নিজের পারিবারিক অবস্থানের চারপাশ আমরা কি এখনো দূষণমুক্ত, মশা-মাছির উপদ্রæব মুক্ত রাখতে পারছি? এই প্রশ্ন নিজেদেরকেই করতে হবে এবং নিজের, পরিবারের ও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুধু মশা মারার ওষুধ ছিটিয়ে বা ডেঙ্গু রোগের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ডেঙ্গু মহামারি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। একদিকে ঈদে লাখ লাখ পশু কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিশাল ঝক্কি, অন্যদিকে দেশের অর্ধেক অংশে বন্যা, সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পর পরিবেশের বিপর্যয় মশাসহ জনস্বাস্থ্য হুমকি অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সব বিষয়ে সামাজিক দায়িত্ব ও ধর্মীয় নির্দেশনা পালনার্থে মসজিদের ইমামদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। আজকের জুম্মা ও ঈদের জামায়াতে কোরান হাদিসের দলিলসহ জনসচেতনতা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের দুর্যোগ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলায় সক্ষম হওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।