পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি এই উপমহাদেশের নেতৃত্বের কেন্দ্রে চলে এলেন? এমন একটি প্রশ্ন বেশ কিছু দিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তার সফর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সফল বৈঠকের পর এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এ প্রশ্নের সবচেয়ে বড় কারণ হলো, ইমরান খানের সফর নিয়ে ভারতের অস্বস্তিতে ভোগা। কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের চির বৈরীতার বিষয়টি যখন ইমরান খান ও ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা হয় এবং ট্রাম্প কাশ্মীর সমস্যা নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন, তখন ভারতের অস্বস্তি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এমনকি ট্রাম্প সরাসরি বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে জি-২০ বৈঠকে ট্রাম্পকে কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও ভারত সরকার তা সরাসরি অস্বীকার করে বলেছে, সে এমন প্রস্তাব ট্রাম্পকে দেয়নি। ভারতের এ আস্বীকার সত্তে¡ও গত সপ্তাহে ট্রাম্প পুনরায় বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পাশাপাশি এ কথাও বলেছেন, মধ্যস্ততার বিষয়টি নরেন্দ্র মোদি গ্রহণ করবেন কিনা তা তার বিষয়। যদি ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদি অন্য কারো মধ্যস্থতা চান তাহলে আমার আপত্তি নেই। সে যাই হোক, কাশ্মীর সমস্যা নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব এর আগে কখনো দেয়া হয়নি। এমন এক সময়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, ইমরান খানের যে ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্বের গুণাবলী তার ব্যাপক একটা প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এবং যুক্তরাষ্ট্রও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। এই আকৃষ্টের কারণে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের অতীত ভূমিকাকে আমলে না নিয়ে ইমরান খানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপিত হয়েছে। যে পাকিস্তানের গায়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা লেপ্টে দিয়েছিল, তা থেকেও সরে এসেছে। পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির এই আমূল পরিবর্তন যে হয়েছে ইমরান খানের কারণে তা এখন স্পষ্ট।
দুই.
একজন ক্রিকেটার হিসেবে ইমরান খান ভক্তদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তার দেহ সৌষ্ঠব, সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব এবং আভিজাত্য ক্রিকেটপ্রেমিদের অসম্ভব আকর্ষণ করত। ক্রিকেট ভক্ত ছাড়াও সারাবিশ্বের নারীদের কাছে তিনি ছিলেন স্বপ্নের পুরুষ। অনেকে তাকে ‘প্লে বয়’ ডাকতেন। তার সময়কালে বিশ্বে তিনিসহ চারজন খ্যাতিমান অলরাউন্ডার ছিলেন। বাকি তিনজন হলেন ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম, নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি ও ভারতের কপিল দেব। এই চারজনের মধ্যে ইমরান খানই ছিলেন সকল ক্রিকেটপ্রেমিদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বলা যায়, অনেক ক্রিকেটারদের কাছে তিনি ছিলেন আদর্শ। তাকে দেখেই অনেকে ক্রিকেটার হয়েছেন। তবে একজন ক্রিকেটারকে শুধু ভাল খেললেই হয় না, তার আচার-আচরণ এবং নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বও ভক্তদের আকর্ষণ করে। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তা যে শুধুমাত্র ইমরান খানের নেতৃত্বের কারণে হয়েছে, তা সকলের জানা। অত্যন্ত দুর্বল একটি দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল পাকিস্তান। দেশটিকে ক্রিকেটবোদ্ধাদের অনেকেই হিসেবে রাখেনি। তাদের এ হিসাব প্রমাণ করতে পাকিস্তানও দেরি করেনি। প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হেরে বসে। ঐ ম্যাচে পাকিস্তানের প্রাপ্তি ছিল ওয়াসিম আকরামের এক দুর্দান্ত ইয়র্কারে ব্রায়ান লারার ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে চিড় ধরিয়ে তাকে রিটায়ার্ড হার্ট করে সাজ ঘরে পাঠানো। তারপর এ দল নিয়ে হিসাব-নিকাষ করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হার, তার উপর একটি ভাঙাচোরা টিমÑএ নিয়ে আর কতদূর যাওয়া যায়! তবে তাদের হিসাবের বাইরে যে দলটিতে একজন ইমরান খান ছিলেন, তা বোধ করি গণায় ধরেনি। ভেঙ্গেপড়া একটি দলকে কীভাবে উজ্জীবিত করে এগিয়ে নেয়া যায় তা পরের ম্যাচগুলোতে ইমরান খানের নেতৃত্বের কারিশমায় দেখা যায়। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মধ্যে যে আজীবনের অর্ন্তকলহ ও বিবাদ, যে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা মাঠে অগণিত ভুল করে, সেই দলকে ইমরান তার অসাধারণ নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের ছোঁয়ায় একসূত্রে গেঁথে ফেলেন। তিনি যখন মাঠে গিয়ে দাঁড়ান, তখন দলের সব ক্রিকেটার যেন তটস্থ হয়ে যান। ফিল্ডিংয়ে চির দুর্বল পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা ক্যাচ ড্রপ করবে, তাদের হাত ফঁসকে চার হবে এটাই স্বাভাবিক। দেখা গেল পাকিস্তানের পরের ম্যাচগুলোতে তাদের ফিল্ডিংয়ে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। কেউ ফিল্ডিং মিস করলে ইমরান চিৎকার চেঁচামেচি বা শারিরীক ভাষায় কিছু বলতেন না। শুধু ফিল্ডিং মিস করা ক্রিকেটারের দিকে একটু তাকাতেন। তাতেই ঐ ফিল্ডারের খবর হয়ে যেত। অর্থাৎ তার ব্যক্তিত্ব এতটাই প্রভাব এবং প্রতাপশালী ছিল যে দলের কোনো ক্রিকেটারের পক্ষে দ্বিতীয়বার ভুল করার সাহস হতো না। সেই বিশ্বকাপে ইমরান শুধু অধিনায়কই ছিলেন না, ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড পারফরমেন্সও দেখিয়েছেন। তার এই অসাধারণ নেতৃত্ব গুণেই একটি দুর্বল এবং ভাঙাচোরা দল শেষ পর্যন্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এই কাহিনীর অবতারণার কারণ হচ্ছে, নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের গুণাবলী যে একজন মানুষকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যায় তার উদাহরণ দেয়ার জন্য। ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ইমরান খান যখন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ গঠন করে রাজনীতির মাঠে নামেন, তখন অনেকের কাছেই তা হাস্যকর ঠেকেছিল। অনেকে তার এই রাজনীতিতে জড়ানো ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছিল। কারণ খেলার মাঠ আর রাজনীতির জটিল-কুটিল মাঠ এক নয়। খেলার নেতৃত্ব এবং রাজনীতিতে নেতৃত্বের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ইমরান খান এসবে কান না দিয়ে তার দল নিয়ে বছরের পর বছর ধরে এগিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দেখার বিষয় ছিল, প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি কীভাবে নেতৃত্ব দেন। তবে যার ভেতর নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের গুণাবলী থাকে তার জন্য যে সব স্থান এবং কাল সহজ হয়ে উঠে, তা বলার প্রয়োজন পড়ে না। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েই তিনি দেশটির নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনেন। এমনকি দেশটির চিরশত্রæ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সাথে সেল্ফি তোলা কিংবা সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ইমরান খানের ব্যক্তিত্বের কাছে তা এখন ছেলে মানুষীর মতো হয়ে পড়েছে। এখন অনেকে মনে করছেন, দেশের ও জনগণের সর্বোপরি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য চাওয়ালার চরিত্র ধারণ করা যথেষ্ট নয়, শিক্ষা-দীক্ষা, নেতৃত্বর গুণাবলী এবং শক্ত ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। চা ওয়ালার চরিত্র কিংবা সেল্ফি তোলা দিয়ে সাময়িকভাবে মানুষের মনে পুলক জাগানো গেলেও তা নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের বিষয়টি এখন মানুষ তুলনা করতে পারছে এবং এক্ষেত্রে ইমরান খান যে এগিয়ে তা তাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। ইমরান শুধু পাকিস্তানের নেতৃত্বই নয়, এই উপমহাদেশের নেতৃত্বের ধারণাই বদলে দিয়েছেন। ফলে অনেকে ভাবা শুরু করেছেন, এই উপমহাদেশে যদি কারো নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ততা থাকে তবে তা ইমরান খানের আছে। ইতোমধ্যে তিনি পাকিস্তানের জঙ্গিবাদী দেশ হিসেবে পরিচিতির লাগাম অনেকটা টেনে ধরতে পেরেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে এখন আর সমর্থন ও আশ্রয় দেবেন না। যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের প্রশংসায় এখন পঞ্চমুখ। এ সবই সম্ভব হয়েছে ইমরান খানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও তার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তার ব্যক্তিত্বের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পও ¤øান হয়ে পড়েছিলেন। তার কথা-বার্তা, হাঁটা-চলা এবং বসার স্টাইল ও স্মার্টনেস ট্রাম্পকে মুগ্ধ করে। ট্রাম্পের মতো কট্টরবাদী ইমরানকে ‘ভালো মানুষ’ বলতে বাধ্য হন। আক্ষরিক অর্থে, ধন-সম্পদ দিয়ে সব সময় সব কিছু আদায় করা না গেলেও কথা-বার্তা ও নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণে অনেক কিছু আদায় করা যে সম্ভব তা ইমরান খান দেখিয়েছেন। তার কারণেই কাশ্মীর সংকট নিয়ে আলোচনা এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার কথা ট্রাম্প স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন। এমনকি যে ট্রাম্প গত বছর পাকিস্তানের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন, সেই ট্রাম্পই পাকিস্তানের সাথে শক্তিশালী সামরিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কথা বলেছেন। তারচেয়েও বড় কথা, হোয়াইট হাউসের সাথে ইসলামাবাদের সরাসরি যোগাযোগের পথও খুলেছে।
তিন.
গত সোমবার ভারত তার সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে যে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা নিয়ে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় কাশ্মীর, সেই বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে কারগিল এবং লাদাখকে আলাদা করে পৃথক রাজ্য করা হয়েছে। কাশ্মীর এতদিন পৃথক রাজ্যের মর্যাদা পেয়ে আসছিল। তার নিজস্ব সংবিধান ছিল। বিভক্তির ফলে দুটি রাজ্য এখন থেকে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে থাকবে। রাজ্য দুটি পরিচালনা করবেন দুইজন লেফটেনেন্ট গভর্নর। এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের বাইরের রাজ্যের লোকজন সেখানে জমি কেনার অধিকারী হবেন। আগে সেখানে কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাই কেবল বৈধভাবে জমি কিনতে পারতেন, সরকারি চাকরির সুযোগ পেতেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতেন। বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কংগ্রেসের প্রবীণ সদস্য বিরোধিতা করে বলেছেন, এখন থেকেই শুরু হয়ে গেল ভারতে ভাঙন। অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ অবৈধ পদক্ষেপ মোকাবেলায় আমরা সম্ভাব্য সব বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিবিসি এক বিশ্লেষণে বলেছে, কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চরিত্র বদলে দেয়ার জন্যই বিজেপি এ কাজ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তড়িঘড়ি করে কাশ্মীরকে দ্বিখন্ডিত করে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসার পেছনে ভারত সরকারের উদ্দেশ্য যে ‘কাশ্মীরকে হারানোর ভয়’ তা অনেকটাই প্রতীয়মাণ হচ্ছে। কাজটি এমন সময়ে করা হয়েছে, যখন কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই ভাগ করার ফল কী হয়। তবে এটা ঠিক, এর সুদূর প্রসারি প্রতিক্রিয়া যেমন রয়েছে, তেমনি ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোতে এর প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে ভারত সরকার তার পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে বিভক্ত কাশ্মীরকে ঠান্ডা রাখতে বা জনবিরোধিতা দমন করতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের বৈরীতা যুগ যুগ ধরেই চলছে। আসলে কাশ্মীর ঐতিহাসিকভাবে ভারত বা পাকিস্তানের কারোই ছিল না। এটা আলাদা একটা রাজা শাসিত এলাকা ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান অনেকটা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়। কিছু অংশ নেয় চীন। তবে কাশ্মীরের জনগণ তাদের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। মূলত কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্ব›দ্ব সেই থেকে শুরু। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান তার নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করছে। অন্যদিকে পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের স্বার্থের কথা কথা চিন্তা করে তার দিকে কাশ্মীরকে টানার চেষ্টা করে চলেছে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। আর তা এমন সময় দিয়েছে যখন ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের যে নেতিবাচক চরিত্র তা বদলাতে শুরু করে। পাকিস্তানের এই পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোকে আকৃষ্ট করে। বলা যায়, পাকিস্তানের এ ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের শুরু ইমরান খানের নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণেই। ‘ওয়ান ম্যান ক্যান মেক আ ডিফারেন্স’ বলে যে কথা প্রচলিত তা ইমরান খান দেখিয়ে দিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয়, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ইমরান খানের ভূমিকা কী হয়। তবে তার নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে যে এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তার উদ্যোগকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবেন তা বলা যায়। অন্যদিকে কাশ্মীরকে দ্বিখন্ডিত করে ভারত যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে তা তাকে যেমন সামাল দিতে হবে, তেমনিভাবে আন্তর্জাতিকভাবেও তা মোকাবেলা করতে হবে। অর্থাৎ ভারতকে কাশ্মীর ইস্যুতে তার আভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবেলার পাশাপাশি পাকিস্তানের সাথে বৈরী সম্পর্কের বিষয়টিও সামলাতে হবে। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, কাশ্মীরকে কেন্দ্রীয় শাসনের অন্তর্ভূক্ত করায় সেখানের জনগণ মোটেও সন্তুষ্ট হবে না। কারণ এর মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতার চাওয়াকে নিঃশেষ করে দেয়া হয়েছে। এখন যদি তারা আরও সংগ্রামী হয়ে উঠে তবে রাজ্য দুটি যে অশান্ত হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। অন্যদিকে পাকিস্তান এই ইস্যুতে চুপ করে বসে থাকবে, এটা ভাবারও কারণ নেই।
চার.
এক রাষ্ট্রের সাথে আরেক রাষ্ট্রের লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যখন দুই রাষ্ট্র প্রধানের বৈঠক হয়, তখন তারা সেগুলো আগে থেকে ঠিক করে বৈঠকে বসেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈঠকে পারস্পরিক কুশলাদির পাশাপাশি অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক বিষয়াদি নিয়ে কথা হয়। তারপর চুক্তি স্বাক্ষর কিংবা যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এসব ঠিক করা বিষয়ের বাইরেও নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে অপর পক্ষকে মুগ্ধ করে দেশের জন্য আরও কিছু আদায় করা সম্ভব। এই গুণাবলী সব রাষ্ট্র প্রধানদের থাকে না। রাষ্ট্রীয় আচারের বাইরে অনেকে যেতে পারেন না। ইমরান খানের নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব এমনই প্রখর যে তার পক্ষে অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলা সম্ভব। একটি দুর্বল দলকে শুধুমাত্র নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে তিনি যেভাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, একইভাবে দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেও আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানকে তিনি প্রেডিক্টেবল করে তুলছেন। যে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস আগেও পাকিস্তানকে দুই চোখে দেখতে পারত না, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন পাকিস্তানের প্রশংসায় বিভোর। এটা সম্ভব হয়েছে ইমরান খানের নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের গুণাবলীর জন্য। শুধু তাই নয়, তার নেতৃত্বের ঔজ্জ্বল্য উপমহাদেশেও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। যদি এমন হয়, এই উপমহাদেশের একজন নেতা হিসেবে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।