চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ত্যাগ বা বিসর্জনের ঈদ হলো ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদ। ঈদুল আযহার পশু কুরবানীর মধ্যে শেখার অনেক কিছু রয়েছে। পশু কুরবানীর মধ্যে ¯্রষ্টার ভালোবাসায় নিজের ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসাকে বিসর্জন দেয়ার উত্তম শিক্ষা রয়েছে। আপন নফসের আমিত্ব, অহংকার ও বড়াইকে বিসর্জন দেয়ার হাকিকত হলো কুরবানী। নিজের আমিত্বকে কুরবানী করার অর্থই হলো, নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা হিংসা, বিদ্বেষ, কাম, ক্রোধ, লোভকে বর্জন করা। কোনো কিছু বিসর্জনের যে আনন্দ, ইহার মধ্যে চিরস্থায়ী সুখ ও সাফল্যে থাকে। যে বা যারা নিজের নফসের কুরবানী করতে পেরেছেন। তারা পরিশুদ্ধ হয়েছেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয়েছেন। নিজের আমিত্বকে যতক্ষণ পর্যন্ত না কুরবানী করা যাবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মা পরিশুদ্ধ হবে না। আল্লাহর দীদার লাভ করাও সম্ভব হবে না।
নফসের তাড়নায় মানুষ নানাবিধ অশ্লীল মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। এসব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো নিজের আমিত্বের কুরবানী। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে এর গোশত কিংবা রক্ত পৌছায় না; বরং তাঁর দরবারে তোমাদের তাকওয়া পৌছায়।’ (সূরা হাজ্জ: ৩৭)। শুধুমাত্র পশু জবাইর মহোৎসবের নাম কুরবানী নয়। কুরবানীর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কুরবানীর পশুর মাংস সমান তিন ভাগে ভাগ করার মধ্যে অনেক বড় ধরনের নৈতিক শিক্ষা রয়েছে। ধনীর সম্পদের ওপর যেমন গরীব মানুষের হক রয়েছে। তেমনি কুরবানীর পশুর মাংসেও গরীব, দু:খী ও দু:স্থ মানুষের হক রয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর কুরবানির উটকে আমি তোমাদের আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও।’ (সূরা হাজ্জ:৩৬)। কুরবাীনর পশুর মাংস পাড়া প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনের মাঝে বিলি বন্টনের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহানুভ‚তির শিক্ষা রয়েছে। গরীব দুস্থ মানুষের সেবা করা ও মেহমানদারিতা হযরত রাসূল (সা.) এর সুন্নত। কুরবানীর পশুর মাংস দিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশিদের আপ্যায়ন করার মাধ্যমে সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ তথা পারস্পরিক মমত্ববোধ তৈরী হয়। নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী দেয়ার মধ্যে সামাজিকভাবে আত্ম-বিসর্জনের শিক্ষা রয়েছে। একটি পশু কয়েক জনে মিলে কুরবানী করতে হলে, সকলের মন চিন্তা ও বিবেচনা এক হতে হয়। এখানে ইসলামের উদারতার বিরাট শিক্ষা রয়েছে।
কুরবানীর উদ্দেশ্যে শুধু মাংস খাওয়া নয়। কুরবানী হলো আত্ম-বিসর্জন। সুতরাং সমাজের চলমান অশান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃংখলা দূর করার ক্ষেত্রে কুরবানীর শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। কুরবানীর শিক্ষা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগাতে পারলে সমাজের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। আমাদের দুনিয়া ও আখরাতের জিন্দেগী কল্যাণকর হবে। আল্লাহ আমাদেরকে কুরবানীর গুরুত্ব ও মহাত্ম বুঝার তৌফিক দান করুক। আমীন।
(লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক )
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।