চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
দুই
হাদীসে আরো এসেছে- হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স. শিং বিশিষ্ট খুব তাজা দুম্বা দ্বারা কুরবানী করতেন, যা কালো দ্বারা দেখতো, কালোতে খেতো এবং কালোতে হাঁটতো (অর্থাৎ এর চোখের মনি, মুখ ও পা কালো ছিল)। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)
ছয় প্রকার পশু কুরবানী করা জায়েয। যেমনঃ উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া, ছাগল। এই ছয় প্রকারের নর-মাদি দ্বারা করতে হবে। এর বাহিরে অন্য কোন হালাল পশু (যেমন- হরিণ) দ্বারাও কুরবানী করলে কুরবানী হবে না। (হেদায়া ৪/৩৮১)
খাসী করা প্রাণী, শিং ভাঙ্গা প্রাণী (তবে মূল থেকে উৎপাটিত নয়) বা যে প্রাণীর শিং জন্মগত ভাবেই নেই বা চর্ম রোগাক্রান্ত মোটাতাজা প্রাণী বা যে প্রাণীর বেশীর ভাগ দাঁত নেই, তবে ঘাস খেতে পারে বা এমন প্রাণী যার অধিকাংশ দাঁত বাকী আছে এবং যার কান বা লেজের অধিকাংশ অংশ রয়েছে বা যার খুর নেই বটে তবে চলাফেরা করতে পারে বা জন্মগত ভাবেই যার কান ছোট, এগুলির কুরবানী করা জায়েয আছে।
যে সব পশু কুরবানী করা জায়েয নয়: হযরত বারা ইবনে আযেব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলূল্লাহ স.- কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, কুরবানীর ব্যাপারে কোন ধরনের জন্তু হতে বেঁচে থাকতে হবে? রাসূল স. হাতের দ্বারা (অর্থাৎ চার আঙ্গুল দেখিয়ে) বললেন, চার রকমের পশু হতে- (১) খোঁড়া- যার খোঁড়ামি স্পষ্ট, (২) কানা- যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, (৩) রোগা- যার রোগ স্পষ্ট এবং (৪) দুর্বল- যার হাড়ে মজ্জা নেই। (মালেক, আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ ও দারেমী)
দুর্বল, জীর্ণ, শীর্ণ, এক পা খোড়া (যে পায়ে একেবারেই শক্তি প্রয়োগ করতে পারে না), গোড়া থেকে শিং ভাঙ্গা, কান ও লেজ অধিকাংশ কাটা, অন্ধ ইত্যাদি ত্রæটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয নহে। (দুররুল মুখতার ৫/২২৭)
ছাগলের দুধের যদি একটা বাট না থাকে এবং গাভী অথবা উটের দু’টি বাট না থাকে তবে কুরবানী জায়েয হবে না। (হিন্দিয়া ৬/২৯৪, শামী ৫/২০৬)
কুরবানীর পশুর বয়স: হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা মুসিন্না (অর্থাৎ পাঁচ বছরের উট, দুই বছরের গরু এবং এক বছরের ছাগল বা মেষ) ছাড়া জবেহ করবে না। কিন্তু তোমাদের যদি তা সংগ্রহ করতে অসুবিধা হয়, তবে ছয় মাস বয়সের মেষ বা ভেড়া জবেহ করতে পার। (মুসলিম) কুরবানীর জন্য উট কমপক্ষে ৫ বৎসব হতে হবে। গরু ও মহিষ ২ বৎসর বয়সের হতে হবে। আর ভেড়া, দুম্বা ও ছাগল হতে হবে অন্তত এক বৎসর বয়সের। তবে দুম্বা ও ভেড়া যদি ৬ মাসের হয় এবং এরূপ মোটা তাজা হয় যে, দেখতে এক বৎসর বয়সীর মত দেখায়, অর্থাৎ এক বৎসর বয়সী দুম্বা বা ভেড়ার সাথে ছেড়ে দিলে কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না, তাহলে এরূপ ছয় মাসের ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। কিন্তু ছাগল (বকরী) যতই মোটা তাজা হোক না কেন তার ১ বৎসর পূর্ণ হওয়া জরুরী। একদিন কম হলেও কুরবানী দুরস্ত হবে না।
হারিয়ে যাওয়া পশুর বিধান: যদি কুরবানীর পশু হারিয়ে যায় এবং এর পরিবর্তে আরেকটি পশু ক্রয় করে। অতঃপর প্রথম পশুটি পাওয়া যায় তাহলে কুরবানী দাতা মালদার হলে (অর্থাৎ যার উপর কুরবানী ওয়াজিব) সে একটি পশু কুরবানী করলেই চলবে। আর যদি লোকটি গরীব হয় (অর্থাৎ যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নহে) তাকে দুটি পশুই কুরবানী করতে হবে। কোন মালদার ব্যক্তি সুস্থ ছাগল ক্রয় করার পরে যদি তাতে দোষ সৃষ্টি হয়, তাহলে তার জন্য অন্য ছাগল কুরবানী করা ওয়াজিব। আর দরিদ্র হলে তার জন্য ঐ ত্রæটিযুক্ত জন্তুটিই কুরবানী করা জায়েয হবে।
পশু কুরবানী করতে দেখার ফজিলত: নিজের কুরবানীর জানোয়ার নিজ হাতে যবেহ করাই মুস্তাহাব। যদি নিজে যবেহ করতে না পারে, তবে অন্যের দ্বারা যবেহ করাবে, কিন্তু নিজে সামনে দাড়িয়ে থাকা ভাল। মেয়ে লোকদের পর্দার ব্যাঘাত না হলে কুরবানীর সময় সামনে থাকতে পারবে। তবে পর্দার ব্যাঘাত হলে কুরবানীর সময় সামনে না থাকলে কোন ক্ষতি হবে না।
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ তুমি উঠো, তোমার কুরবানীর কাছে যাও এবং তা দেখ। কেননা কুরবানীর যে রক্ত প্রবাহিত হয় তার প্রতি বিন্দুর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তোমার অতীত গুনাহ মাফ করে দেবেন। হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনার ও আপনার পরিবার বর্গের লোকদের জন্যই কি এই বিশেষ ব্যবস্থা, নাকি সব মুসলমানের জন্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হ্যাঁ, আমাদের এবং সব মুসলমানের জন্যই এ ব্যবস্থা। (বায্যার)
ভাগে কুরবানী দেয়ার বিধান: হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, গরু বা গাভী সাত জনের পক্ষ হতে এবং উট সাত জনের পক্ষ হতে কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। (মুসলিম ও আবু দাউদ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।