Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুরবানীর তাৎপর্য ও জরুরি মাসআলা

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কুরআনের সুরায়ে কাউসারে আল্লাহ তায়ালা হুজুর (সা:) কে হুকুম করেছেন, নিশ্চই আমি আপনাকে হাউজে কাউসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ ও কুরবানি আদায় করুন।
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, হে আমার হাবিব আপনি বলুন যে, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, সব কিছুই মহান প্রতিপালকের জন্য।’ (সূরা আনআ’ম ১৬২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, আল্লাহর কাছে (কুরবানীর পশুর) গোশত ও রক্ত পৌঁছে না; বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া পৌঁছে থাকে। (সূরা আল-হজ, আয়াত নং: ৩৭)
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কুরবানির দিন পশু কুরবানির চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আর কোন আমল, নেই। কেয়ামতের দিন জবেহ করা পশুকে তার শিং ও খুরসহ হাজির করা হবে। কুরবানির জন্তুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা খোলা মনে এবং সন্তুষ্ট চিত্তে কুরবানি কর। (মেশকাত শরীফ : খ-১, পৃ. ১২৮)
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) হতে বর্ণিত, একদা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) হুজুর (সা:) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কুরবানি কি জিনিস? হুজুর (সা:) ইরশাদ করেন, ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নত। অতপর সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ এই কুরবানির বিনিময়ে আমাদের জন্য কি প্রতিদান রয়েছে? হুজুর (সা:) ইরশাদ করেন- প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী দেওয়া হবে। অতপর সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দুম্বা, ভেড়া এর পশমের পরিবর্তেও কি এরূপ ছওয়াব মিলবে? হুজুর (সা:) ইরশাদ করেন, হ্যাঁ প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী দেওয়া হবে।
জরুরি মাসআলা : কুরবানির পশু ও তার বয়স ঃ কুরবানির পশুসমূহ হচ্ছে- ছাগল ভেড়া দুম্বা এগুলো কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে, তবে দুম্বা ও ভেড়া যদি পূর্ণ এক বছর না হয় এবং ছয় মাসের উর্ধ্বে হয়, তবে এমন হৃষ্ট-পুষ্ট, যা দেখতে এক বছরের মত মনে হয়, তার দ্বারাও কুরবানি জায়েয। তবে ছাগলের ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছর হওয়া ব্যতীত কুরবানি সহিহ হবে না। গরু, মহিষ এর কুরবানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। এতে একদিন কম হলেও কুরবানি সহিহ হবে না। উট কমপক্ষে পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে, একদিন কম হলে হবে না। (কাযি খাঁন খ-২, পৃ. ৩৩১)
পশুর বয়স অবগত হওয়ার উপায় ঃ বিক্রেতা কুরবানির পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে যদি স্বীকৃতি দেয় এবং পশুর বাহ্যিক অবস্থাও তা মনে হয় তখন বিক্রেতার কথার ওপর নির্ভর করে পশু ক্রয় করা এবং তা দিয়ে কুরবানি করা জায়েয হবে।
শুকর ও কুকুরের দুধপানে পালিত ছাগল ঃ কোনো কারণবশত ছাগলের ছানা শুকর বা কুকুরের দুধপান করার দ্বারা তার কুরবানিতে কোন সমস্যা হবে না। উক্ত ছাগল দ্বারা কুরবানি করা ও গোস্ত খাওয়া বৈধ হবে। কারণ ছাগল ছানা কুকুর বা শুকরের দুধপান করার পর সেই দুধ যখন ছাগলের গোস্তে পরিণত হয়ে গেছে। তখন তম্মধ্যে দুধের হুকুম দেয়া যাবে না। (আহসানুল ফাতওয়া, সাঈ, খ-৭, পৃ. ৪৮০)
প্রচলিত কুসংস্কার ও ভুল ধারণা ঃ ১. অনেক এলাকায় পশুর বয়স অনুপাতে দাঁত গজিয়েছে কি-না তা যাচাই করা হয়, কিন্তু বয়সের ক্ষেত্রে দাঁত গজানো না গজানোর ওপর নির্ভর করা যায় না; বরং বয়সের সঠিক ধারণা হলো দাঁত না গজালেও কুরবানি হবে, আর বয়স কম হলে দাঁত গজালেও তার দ্বারা কুরবানি হবে না ।
২. জন্তু ক্রয় করার পর লাল সালু দিয়ে সাজ-সজ্জা করা, এবং পুষ্পমালা দিয়ে গলিতে গলিতে নেয়া হয় এবং জনশ্রæতি ও বাহবা পাওয়ার জন্য জন্তুকে এদিক সেদিক ঘুরানো হয়। এটা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও কুসংস্কার। তাই এ সমস্ত গর্হিত কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকা অতিব জরুরি।
৩. কোনো কোনো এলাকায় কুরবানির পশুর খাদ্য নালি নিয়ে ঘরের সামনে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়। আর মনে করা হয় এর মধ্যে রয়েছে অনেক পূণ্য, আসলে এ ধারণা অবান্তর।
৪. কোনো কোনো এলাকায় প্রচলন আছে, যে সমস্ত গাছের আমে পোকা হয়, সে সমস্ত গাছে বসে কুরবানির গোস্ত খেয়ে হাঁড়গুলো গাছে ঝুলিয়ে রাখলে পোকা হয় না, অথচ এধরনের ধারণা অমূলক ও বর্জনীয়।
৫. কোনো কোনো এলাকাতে জিলহজ মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত মুরগি ইত্যাদি জবেহ না করা এবং আদৌ গোস্ত না খাওয়ার যে রীতি ও রেওয়াজ রয়েছে শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই ।
পশু ক্রয়ে প্রতিযোগিতা ঃ মোটা-তাজা সুন্দর পশু ক্রয় করা উত্তম, তবে যদি তা লোক দেখানোর জন্য হয়, তাহলে পশু ক্রয়ের আত্মগর্বের ফলে কুরবানি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা আছে।
যে সমস্ত ত্রæটির কারণে কুরবানি হয় না:
দাঁত ঃ যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে, যার দরুন খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশুর কুরবানি সহিহ হবে না।
কান ও লেজ ঃ যে পশুর লেজ বা কোনো কান এক তৃতীয়াংশ বা এর চেয়ে বেশি কাটা, সে পশুর কুরবানি নাজায়েয। তবে যদি জন্মগতভাবে কান ও লেজ ছোট হয়, তাহলে কোন অসুবিধা নেই ।
শিং ঃ যে পশুর শিং গোড়া থেকে ভেঙ্গে যায়, সে পশুর কুরবানি সহিহ হবে না। তবে যদি শিং অর্ধেক বা কিছু ফেটে ও ভেঙ্গে যায়, বা একেবারে শিং না ওঠে সে পশু দিয়ে কুরবানি করা জায়েয।
চোখ ঃ যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরাটা নষ্ট বা এক চোখের দৃষ্টি শক্তি অর্ধেক বা তার চেয়েও অধিক নষ্ট হয়ে যায়, এমন পশুর কুরবানি সহিহ হবে না।
দুর্বল ঃ এমন দুর্বল ও রুগ্ন পশু যা জবেহের স্থান পর্যন্ত পাঁয়ে হেটে যেতে পারে না, এমন পশুর কুরবানি সহিহ হবে না।
খোড়া পশু ঃ যে পশু তিন পা দিয়ে চলে এক পাঁ মাটিতে রাখতেই পারে না, এমন পশু দিয়ে কুরবানি সহিহ হবে না।
স্তন ঃ যদি কুরবানির জন্তুর স্তনে কোনো ক্রটি দেখা দেয়, তখন গরুর দু’টি স্তন আর ছাগলের একটি স্তন যদি নষ্ট হয়, তাহলে এমন জন্তু দ্বারা কুরবানি করা জায়েয হবে না ।
জিহবা ঃ যে ছাগলের জিহবা নেই, তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েয হবে। তবে যে গরুর জিহবা নেই তা দ্বারা জায়েয হবে না। কেননা ছাগল জিহবা দিয়ে ভক্ষণ করে না বরং দাঁত দ্বারা ভক্ষণ করে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি, খ-৫, পৃ. ২৯৭ ৮৭)
নাপাক বা অন্যের খাদ্য খাওয়া জন্তুর কুরবানি ঃ নাপাক ভক্ষণকারী জন্তু দ্বারা কুরবানি করা জায়েয হবে না। হ্যাঁ যদি গরু ২০ দিন, উট ৪০ দিন, আর ছাগলকে ১০ দিন পর্যন্ত নাপাক ভক্ষণ করা থেকে বিরত রাখে তখন জায়েয হবে। আর অন্যের খাবার খেয়ে বড় হওয়া জন্তু দ্বারা কুরবানি করলে কোন সমস্যা হবে না। (ফাতোয়ায়ে শামি, খ-৬, পৃ. ৩২৫)
জন্তু গর্ভবতী হলে বা বাচ্চা দিলে ঃ গর্ভবতী পশু দ্বারা কুরবানি করা জায়েয। তবে যদি প্রসবের সময় নিকটবর্তী হয়, তখন উক্ত জন্তু কুরবানি করা মাকরূহ। আর যদি জবেহের পর বাচ্চা দেয়, তাহলে বাচ্চা জীবিত সদকা করা উত্তম। যদি বাচ্চা জবেহ করে, তাহলে বাচ্চার গোস্ত সদকা করে দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, খ-৫, পৃ. ৩০১)
কুরবানির জন্তু রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে ঃ কুরবানির দিন আসার পূর্বে রোগাক্রান্ত পশুটি চিকিৎসা ইত্যাদির পরও যদি মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং উক্ত পশুটি যদি কুরবানির পূর্বেই জবেহ করে তা নিজেও খেতে পারবে এবং বিক্রিও করতে পারবে। তবে যদি কুরবানি দাতা ধনী হয়, তাহলে তার ওপর অন্য একটি জন্তু কুরবানি করা ওয়াজিব। আর যদি গরিব হয়, তাহলে তার ওপর আরেকটি কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। (ফাতওয়ায়ে শামি, খ-৬, পৃ. ৩২৫)
কুরবানির স্থানে দোষ-ত্রæটি ঃ জবেহের স্থানে যদি এমন কোন ত্রæটি ঘটে, যা ইতোপূর্বে ছিল না যেমন, জবেহ করার সময় শিং পা ইত্যাদি ভেঙ্গে যাওয়া জন্তু দ্বারা কুরবানি করা সহিহ হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, খ-৫, পৃ. ২৯৯)
কুরবানির জন্তু পরিবর্তন করা ঃ কুরবানির পশু যদি ঘরের লালিত-পালিত হয় বা ক্রয় করার সময় কুরবানির নিয়ত না থাকে। বরং পরে নিয়ত করে তখন ঐ পশু পরিবর্তন করা জায়েয। আর যদি কুরবানির নিয়তে ক্রয় করে, তাহলে ২ রকম মাসআলা। যদি ধনী হয় এবং দ্বিতীয় জন্তু প্রথম জন্তু হতে মূল্যে কম হয়, তখন প্রথম জন্তুর চেয়ে অতিরিক্ত টাকা সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি গরিব হয় এবং কুরবানির দিনসমূহে কুরবানির নিয়তে ক্রয় করে তাহলে তার ওপর উক্ত পশুই কুরবানি করা ওয়াজিব, পরিবর্তন করতে পারবে না।
মাজারের জন্য ছেড়ে দেওয়া জন্তুর কুরবানি ঃ মাজার বা বাবার নামে জন্তু ছেড়ে দেওয়া হারাম। তাই মাজার বা মূর্তির নামে ছেড়ে দেওয়া জন্তু দ্বারা কুরবানি জায়েয হবে না। (ফতোয়ায়ে হেদায়া, খ-৪, পৃ. ৪৩২)
ইনজেকশনের বাচ্চা দিয়ে কুরবানি ঃ ইনজেকশনের জন্তু দ্বারা বা তার বাচ্চা দ্বারা কুরবানি করা ও খাওয়া জায়েয হবে। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া, খ-১০, পৃ. ৪৭)
গরু বাজারের চাঁদা সংক্রান্ত মাসআলা ঃ বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে ঘোষণা করে যে, বাজারের চাঁদা প্রদান না করলে কুরবানি সহিহ হবে না, এটা মিথ্যা কথা। বাজারের চাঁদার সাথে কুরবানির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বর্তমান বাজার অনুসারে নির্ধারিত চাঁদা প্রদান করা উচিৎ। যদি বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্রয়ের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলে। তাহলে তারা হাসিল থেকে বাচার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে বাজার কমিটির দায়িত্ব হলো ক্রেতাদের ওপর বেশি চাঁদা চাপিয়ে না দেওয়া। আর ক্রেতাদের উচিৎ মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে যথাসাধ্য চাঁদা প্রদানে সচেষ্ট থাকা।
মান্নত কুরবানি ও তার গোস্তের হুকুম ঃ কোনো ব্যক্তি যদি নিয়ত করে যে, আমার অমুক কাজটি যদি পুরো হয়, তাহলে আমি একটি জন্তু কুরবানি করবো। এটাকে মান্নত কুরবানি বলে। অতপর যদি তার উক্ত কাজটি পুরো হয় তাহলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব। চাই সে ধনী হোক বা গরিব হোক পুরুষ হোক বা মহিলা হোক নিসাবের মালিক হোক বা না হোক এতে কোনো পার্থক্য নেই। যদি তার উক্ত কাজটি পুরো না হয় তাহলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। মান্নতের গোস্তের হুকুম সাধারণ কুরবানির হুকুম থেকে আলাদা, এই মান্নতের গোস্ত নিজেও খেতে পারবে না এবং কোন ধনী লোককেও খাওয়াতে পারবে না, বরং উক্ত গোস্ত গরিব মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে শামি, খ-৯, পৃ. ৪৭৩)
অসিয়ত কুরবানি ও তার গোস্তের হুকুম ঃ যদি কোন ব্যক্তি তার ওয়ারিশদেরকে তার পক্ষ থেকে কুরবানি করতে বলে যায় যে, আমার জন্য প্রত্যেক বছর ইসালে সাওয়াবের নিয়তে কুরবানি করবে, এটাকে শরিয়তের পরিভাষায় অসিয়ত বলা হয়। এর গোস্তের হুকুম মান্নতের গোস্তের হুকুমের ন্যায়। তবে অসিয়ত ব্যতীত তার পক্ষ থেকে কুরবানি করলে তা নফল হবে, আর নফল কুরবানির গোস্তের হুকুম ওয়াজিব কুরবানির গোস্তের হুকুমের মত। (শামি, খ-৯, পৃ. ৪৭৪)
মান্নত ও অসিয়ত কুরবানির হুকুম ঃ মান্নত ও অসিয়ত কুরবানির হুকুম ও বৈশিষ্ট্য ওয়াজিব কুরবানির মত। শুধু গোস্তের হুকুমের মধ্যে পার্থক্য। তা হলো ওয়াজিব কুরবানির মধ্যে গোস্ত নিজেও খেতে পারে এবং অন্যকেও খাওয়াতে পারে, তবে মান্নত ও অসিয়তের ক্ষেত্রে গোস্ত নিজেও খেতে পারে না এবং কোনো ধনীকেও খাওয়াতে পারে না। এর হকদার শুধু গরিব মিসকিনগণ। (ফতোয়ায়ে শামি, খ-৯, পৃ. ৪৭৪)
শরিকদার কেমন হওয়া চাই ঃ শরীকি কুরবানি দাতাগণের শরিকদার নির্বাচনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ। কার উপার্জন হালাল, কার উপার্জন হারাম, কে নামাজি, কে বেনামাজি, শরিকদার সুদ ও ঘুষের লেনদেনে জড়িত কিনা এবং শিরকি কর্মকান্ডে জড়িত কি না এগুলো খেয়াল করতে হবে। কেননা, কোন শরীকদার যদি শুধু গোস্ত খাওয়ার নিয়ত করে থাকে, তাহলে কারো কুরবানি শুদ্ধ হবে না। সুতরাং শরিকদার হতে হবে নামাজি, ন্যায়-নিষ্ঠাবান, দীনদার, হালাল উপার্জনকারী ও সত্যবাদী। তাই কুরবানির পশু ক্রয় করার পূর্বে অংশীদারকে নিয়তের বেলায় অবহিত করে যাচাই বাছাই করে শরিক নেওয়া জরুরি। (বাদায়ে, জাকারিয়া, খ-৪, পৃ. ২০৮)
কোন জন্তুতে কতজন শরিক হতে পারবে ঃ ছাগল, দুম্বা, ভেড়া, নর হোক বা মাদি হোক দেখতে যত বড়ই দেখা যায়না কেন, কেবল মাত্র একজনই কুরবানি করতে পারবে। একাধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানি করলে কারো কুরবানি সহিহ হবে না। কিন্তু গরু, মহিষ ও উটের মধ্যে এক থেকে সাত জন লোক পর্যন্ত কুরবানি করতে পারবে। (ফতোয়ায়ে শামি, খ-৬, পৃ. ৩১৫)
শরিকদার জবেহের অনুমতি না দিলে ঃ শরিকি কুরবানিতে শরিকদারদের মধ্য থেকে কোন একজনের অনুমতি না নিয়ে যদি কুরবানি করা হয় বা তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি না বানিয়ে কুরবানি করা হয়, তখন কোন শরিকদারের কুরবানি সহিহ হবে না। সুতরাং শরিকি কুরবানিতে সকল শরিকদারের অনুমতিতে জন্তু জবেহ করা একান্ত প্রয়োজন। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, হাফেজ, খ-৫, পৃ. ৩০৫ * বাহরুর রায়েক, রশিদিয়া, খ-৮, পৃ. ১৭৮)
কোন শরিকদার যদি মারা যায় ঃ শরিকদারের মধ্য থেকে যদি কেউ মারা যায়, সে কুরবানির দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তবে যদি মরহুমের ওয়ারিশরা তার পক্ষ থেকে কুরবানি করার অনুমতি প্রদান করে তাহলে সকলের কুরবানি সহিহ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো মরহুমের ওয়ারিশরা সবাই সাবালক হতে হবে।
কোন শরিকদার টাকা বেশি দিলে ঃ সকল শরিকদারের সম্মতিক্রমে কেউ যদি অন্যের চেয়ে টাকা বেশি দেয়, তাতে কুরবানি আদায় হবে। হ্যাঁ যদি কোন একজন সম্মতি না দেয়, তাহলে কারো কুরবানি সহিহ হবে না । (ফতোয়ায়ে শামি, খ-৬, পৃ. ৩১৫)
শরীক হয়ে অস্বীকার করলে ঃ কোনো শরিকদার কথা দিয়ে অস্বীকার করলে তার অস্বীকার গ্রহণযোগ্য হবে না। তার ওপর উক্ত অংশের মূল্য পরিশোধ করা জরুরী। আর যদি সে কুরবানির অংশ পরিত্যাগ করে বা উক্ত অংশ বিক্রি করে, এতে অন্য ব্যক্তি ক্রয় করে কুরবানি করলে তার কুরবানি সহিহ হবে।
কোন কুরবানি উত্তম ঃ যদি বড় জন্তু ক্রয়ের সামর্থ নাও থাকে তার পরেও একক কুরবানি উত্তম। যেমন ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, দিয়ে কুরবানি করা। কেননা শরিকি কুরবানিতে অনেক ক্ষতি উপলদ্ধি করা যায়। যেমন- শরিকদারদের নিয়ত অশুদ্ধ থাকা। হারাম টাকা থাকার আশংকা থাকা। লোক দেখানো বা গোস্ত খাওয়ার নিয়তও হতে পারে। যার ফলে কোন শরিকদারের কুরবানি সহিহ হয় না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, হাফেজ, খ-৫, পৃ. ২৯৯ * শামি, সাঈদ, খ-৬, পৃ. ৩২২)
কুরবানির জন্তু দিয়ে হাল চাষ করা ঃ কুরবানির জন্তু দ্বারা হাল-চাষ করা জায়েয হবে, তবে সতর্কতামূলক কাজ না নেওয়া চাই। হাল-চাষ ইত্যাদির মাধ্যমে যদি জন্তুর মূল্য হ্রাস পায় তাহলে সে পরিমাণ টাকা সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি ভাড়া দেওয়া হয়, তাহলে ভাড়াকৃত মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (আহছানুল ফাতওয়া, খ-৭, পৃ. ৫১৫)
জন্তুর দুধ পশম ও গোবরের মাসআলা ঃ নি¤েœর ছুরতগুলির মধ্যে দুধ পশম এবং গোবর ব্যবহার করা জায়েয হবে।
১. গৃহ পালিত পশু হলে। ২. জন্তু ক্রয় করার সময় যদি কুরবানির নিয়ত না থাকে। ৩. জন্তু ক্রয় করার সময় কুরবানির নিয়ত করলে তার খানা ইত্যাদি গৃহপালিত পশুর ন্যায় হওয়া। যদি গৃহপালিত পশুর মত খানা না দেওয়া হয়, তাহলে দুধ ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরুহ। তবুও ব্যবহার করলে সে পরিমাণ মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার, খ-৫, পৃ. ২০৯)
জন্তুর হাঁড় বিক্রি করা ঃ কুরবানির জন্তুর হাঁড় বিক্রি করা জায়েয নেই। যদি কেউ হাঁড় বিক্রি করে, তাহলে তার মূল্য ফকির মিসকিনদের মাঝে সদকা করা ওয়াজিব। (আহছানুল ফতোয়া, খ-৭, পৃ. ৫০৪)
কুরবানি কখন করতে হয় ঃ কুরবানির সময় কেবল মাত্র তিন দিনের মধ্যে সীমিত। কুরবানির সময় হলো ১০, ১১ ও ১২ই জিলহজ। উক্ত দিনগুলির মধ্যে যে কোনো দিন কুরবানি করতে পারবে। তবে প্রথম দিন কুরবানি করাই উত্তম।
যে সমস্ত এলাকায় ঈদ ও জুমার নামাজ জায়েয, সেখানে ঈদের নামাজের পূর্বে কুরবানি করা নাজায়েয। যদি ঈদের নামাজের পূর্বেই কুরবানি করে তাহলে কুরবানি শুদ্ধ হবে না; বরং পুনরায় ওয়াজিব কুরবানি আদায় করতে হবে। আর যে সমস্ত এলাকায় ঈদ ও জুমার নামাজ পড়া যায় না, সেখানে সূর্য উদয়ের পর কুরবানি করা জায়েয। (ফতোয়ায়ে শামি, খ-৬, পৃ. ৩১৮)
রাতে কুরবানি করা ঃ জিলহজের ১০ম এবং ১৩তম রাতে কুরবানি করা জায়েয হবে না। হাঁ, ১১ ও ১২তম রাতে কুরবানি করা জায়েয। তবে রাতে রগসমূহ না কাটার সম্ভাবনা থাকে বিদায় মুফতিয়ানে কেরাম রাত্রের কুরবানিকে মাকরুহে তানজিহি বলেছেন। (আহছানুল ফাতওয়া, খ-৭, পৃ. ৫১০)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুরবানীর তাৎপর্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->