পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতীয় বাজেট পাস হওয়ার পর অর্থবছরের প্রথম মাস অতিক্রান্ত হলেও সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর কর্তনের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কাটেনি। অবশেষে সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চয়পত্রের উপর ১০ শতাংশ উৎসে কর, স্টক ডিভিডেন্টের উপর ১৫ শতাংশ কর, ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি এবং রেমিটেন্সের উপর ২ শতাংশ প্রণোদনা নিয়ে সৃষ্ট সংশয় দূর করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষত: সঞ্চয়পত্রের উপর ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপের পর সঞ্চয়পত্রের আয়ের উপর নির্ভরশীল পেনশনারসহ লাখ লাখ বিনিয়োগকারির মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে কর বাজেটে ঘোষিত ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ বছরের প্রথম মাসের শেষ হলেও বাজেটে ঘোষিত রেমিটেন্সের উপর ২ শতাংশ প্রণোদনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রশ্নে জনমনে যে সংশয় দেখা দিয়েছে অর্থমন্ত্রী তাও খোলাসা করেছেন। এ বিষয়ে এখনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর না হলেও ১ লা জুলাই থেকে যারা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তাদের সকলেই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন বলে অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। এখনি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর না হলে ঈদের সময় বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স বেআইনী হুন্ডিতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের পুঁজিবাজার বার বার ধসের মুখে পড়ছে। যখন তখন হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিদের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় পেনশনার ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিরা পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য নিজেদের সঞ্চিত অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপর বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া দেশের আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হওয়ার ফলেও নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগে সঞ্চয়পত্রকে অধিক লাভজনক হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের এই প্রবণতায় পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং খাতসহ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মূলধারার খাতগুলো অর্থ সংকটে পড়ছে। মূলত: এসব খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতেই সঞ্চয়পত্রে ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিদের জন্য বিনিয়োগ ও আয়ের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করেই সঞ্চয়পত্রের উপর উৎসে কর আরোপ গ্রহণযোগ্য নয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা মূলত পেনশনার ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য হলেও এক শ্রেণির বিত্তবান মানুষও নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। এ ক্ষেত্রে বড় অংকের বিনিয়োগের উপর উৎসে কর আরোপের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা থাকলেও সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের উপর ৫ শতাংশ উৎস কর কর্তন সমর্থনযোগ্য নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত জনমতের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
এবারের জাতীয় বাজেটে বেশকিছু নতুন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষিত হয়েছিল। রেমিটেন্সের উপর প্রণোদনা, আবাসন খাতের উন্নয়নে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ফি হ্রাসের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল সংশ্লিষ্টরা। তবে কর বৃদ্ধি বা নতুন কর আরোপের মত সিদ্ধান্তগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নে অতি উৎসাহি হয়ে উঠলেও কর হ্রাস বা প্রণোদনা দেয়ার মত জনবান্ধব সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে রাজস্ব বোর্ডের গড়িমসি অগ্রহণযোগ্য। আইন নেই, নীতিমালা নেই ইত্যাদি বক্তব্য দিয়ে রেমিটেন্সের প্রণোদনা ঠেকিয়ে রাখার ফলে রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে স্টক ডিভিডেন্টের উপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আশ্বাসের পরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই এ নিয়ে রাজস্ব বোর্ডের অতি উৎসাহের কারণে পুঁজিবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেনতেন প্রকারে দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে কর আদায়ের কলাকৌশলে লিপ্ত থাকলেই চলবে না, তাদেরকে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সামগ্রিক ভালমন্দের দিকেও নজর রাখতে হবে। যেখানে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, জালজালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরকে দেউলিয়া করে ফেলা হচ্ছে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রফতানির কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার; সে সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আইনানুগ কঠোরতা আরোপ না করে স্বল্প আয়ের মানুষের বিকল্পহীন খাত হিসেবে সঞ্চয়পত্রে মাত্র ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের উপর উৎস কর আরোপের মাধ্যমে লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তোলা হচ্ছে। অর্থনীতির মূল খাতগুলো শক্তিশালী করার দিকে নজর দিতে হবে। পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগের প্রতি মানুষকে আস্থাশীল করে তুলতে হবে এবং পুঁজির নিরাপত্তা দিতে হবে। কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগের খাতগুলো বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকে করমুক্ত রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।