Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রাকৃতিক ঔষধ আনারস

মোঃ জহিরুল আলম শাহীন | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৯, ৭:৩২ পিএম

বর্ষাকালীন নানা ফলের মধ্যে আনারস অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। কাঁচা আনারস অ¤ø হলেও মধুর রসে টুইটুম্বর, সুমিষ্ট গন্ধ ও পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ আনারস অতুলনীয়। রসালো এই ফলটি নানা খাদ্য উপাদানে বরপুর যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধে বিরাট ভ‚মিকা পালন করে। পরিচিতি ঃ বিশ্বের অন্যতম সেরা ফল হলো আনারস। পৃথিবীতে (প্রায়) ৯৫ প্রজাতির আনারস চাষ হয়। সোনার বাংলাদেশে চাষ হয় চার জাতের আনারস: এগুলো হলো: জয়েন্ট কিউ কুইন, হরিচরণ, ভিটা ও বারুইপুর। বাংলাদেশের হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার, নরসিংদী, ঢাকা, ঘোড়াশাল, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় এ সব জাতের চাষ বেশী হয়। তাছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায় বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ হয়। আনারসের ইংরেজি নাম চরহবধঢ়ঢ়ষব (পাইন অ্যাপেল) বৈজ্ঞানিক নাম অহধহধং ঝধঃরাঁং অ্যানানাস স্যাটিভাস। উদ্ভিদ জগতের ইৎড়সবষরধপবধব পরিবারভুক্ত গুচ্ছাকৃতির এক প্রকার বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ।
রাসায়নিক উপাদান : আনারসের পাতা ও অপক্ক ফলে থাকে স্টেরলস, ট্রাইটার্পিনস, আর্গোস্টেরল পার অক্সাইড, বিটা-সিটাস্টেরল, ক্যাম্পেস্টেরল, স্টিগমাস্টেরল ইত্যাদি। কান্ডে থাকে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম, ব্রোমেলিন, স্টার্চ, অ্যানাসিক এসিড, ক্যাফিক এবং কমারিক এসিডের গিøসারিল ইস্টার। ফলে তাকে পলিফেনলস, ফেনলিক এসিড অ্যাসকরবিক এসিড, ভিটামিন এ, বি, সি, খনিজ পদার্থ ও উদ্বায়ী সুগন্ধকারী উপাদান।
পুষ্টি উপাদান : পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম তরতাজা খাবার উপযোগী আনারসে পুষ্টি উপাদান নি¤œরূপ: জলীয় অংশ ৯২.৪, খনিজ পদার্থ ১৩.১২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, শর্করা ১২.৬৩ গ্রাম, চিনি ৯.২৬ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১২ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ভিটামিন সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ১৮৩০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১৮ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, বি-৬ ০.১১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৪৮৯ মিলিগ্রাম, প্যান্টোথেলিক এসিড ০.২০৫ মিলিগ্রাম, ফলেট ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.৯২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৮ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১১৫ মিলিগ্রাম, জিংক ০.১০ মিলিগ্রাম, আনারসের জাত, জন্মস্থান, জলবায়ু ইত্যাদি পরিবর্তনের সাথে সাথে পুষ্টিমানের কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
উপকারিতা : সব বয়সের মানুষের নিকট খুবই মজাদার ফল। আনারস মানব দেহের নানা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মহান আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামত আনারস। আনরসে খাদ্যের প্রায় বেশী ভাগ উপাদানই আছে। বিশেষ করে ভিটামিন এ, বি, সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ফলেট। হলদে রঙের রসে ভরা এ ফলটিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে যা আমারে চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং শিশুদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। আবার আনারসকে ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস বলা হয়। ভিটামিন সি ভ্যাপসা গরমে হঠাৎ সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হলে আনারস তা প্রতিরোধ করে। তাছাড়া দাঁত ও রক্ত সঞ্চালন ও চামড়ার রোগ প্রতিরোধ করে আনারস। দাঁতের অপারেশন, দেহের কাটা ছেঁড়া, দাঁতের মাড়ির অসুখে আনারস একটি চমৎকার প্রাকৃতিক ঔষধ হিসাবে কাজ করে। দেহের রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে শিরা ও ধমনীতে রক্ত জমার বা চর্বি জমা হওয়ার সুযোগ পায় না। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিন্ডকে সুস্থ সবল রাখে। আনারসে গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ব্রোমেলেইন ও প্রোটিও লাইটিক থাকে যা প্রোটিন ভেঙ্গে পরিপাক ক্রিয়াকে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আনারস খেলে বাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। গেঁটে বাত প্রতিরোধে আনারস ভালো কাজ করে। এটি দেহের বিভিন্ন গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়ার ক্ষেত্রে এটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আনারসে প্রচুর পটাসিয়াম আছে যা দেহের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। মানব দেহের পরিপাক তন্ত্রের বিশেষ করে ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবাণু ধ্বংস করে। এটি মহিলাদের জরায়ু, স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও চামড়ার ক্যান্সার প্রতিরোধে বিরাট ভ‚মিকা পালন করে। মধ্য বয়স হতে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তির সমস্যা দেখা দেয়। মৌসুমী এ ফলটি খেলে চোখের নানা রোগ নিরাময় হয়। আনারসে প্রচুর খনিজ লবণ আছে যা দাঁত ও চুলকে শক্তিশালী করে। চামড়ার মৃত কোষগুলোকে দূর করে এবং ত্বক বা চামড়াকে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে। ফলে তারুণ্যতা বজায় থাকে। আনারসে কোন কোলেস্টেরল নেই এবং সামান্য পরিমাণে চর্বি থাকে। সুতরাং এ ফলটি খেয়ে মোটা হয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আনারসের ম্যাঙ্গানিজ দেহের হাঁড় ও যোজক কলা গুলোকে শক্তিশালী করে এবং দেহে শক্তি উৎপাদন করে।
ঔষধি কাজ : প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে আনারস কাজ করে। তাই আনারস রোগ নিরাময়ে যথেষ্ঠ ভ‚মিকা রাখে। * যাদের ঘন ঘন সর্দি, নাক দিয়ে পানি পড়ে, কাশি হয়, গলা ব্যথা করে তারা নিয়মিত পরিমাণ করে আনারস খান উপকার পাবেন। * যারা মৌসুমী জ্বরে ভোগছেন শরীরে বিষ, ব্যথা করে মুখের রুচি কমে গেছে তারা নিয়মিত পরিমাণমত আনারস খান উপকার পাবেন। * আর যাদের পেট ফাঁপা থাকে, ঢেকুর দেয়, হজম হয় না, গ্যাস জমে তারা আনারসের টুকরাতে সামান্য লবণ ও গুল মরিচ দিয়ে খান সমস্যা কমে আসবে। * যারা ঘন ঘন কৃমিতে আক্রান্ত হন তারা খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে সকালে আনারস টুকরো টুকরো করে খান কৃমি মরে মলের সাথে বেরিয়ে যাবে। * যারা গুঁড়া কৃমিতে বেশী আক্রান্ত হন তারা আনারসের পাতার রস ২/৩ দিন সকালে খালি পেটে খান খুবই উপকার পাবেন। * যে সব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা নিয়মিত আনারস খান মা এবং শিশু দুজনেই সবল এবং শক্তিশালী হবেন। * যাদের পায়খানা শক্ত হয় বা কম পায়খানা হয় তারা আনারস খান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। * যাদের শরীরে বিষ বেদনা থাকে জ্বর জ্বর ভাব থাকে এ ফলটি খান উপকার পাবেন। * গরমে কাজ করে দুর্বল হয়ে গেলে টাটকা আনারস খান দুর্বলতা কমে যাবে শক্তিও পাবেন। * যাদের হঠাৎ করে ঠান্ডা লাগে, টনসিলের সমস্যা হয় এবং সাইনোসাইটিসে ভুগছেন তারা নিয়মিত আনারস খান বেশ উপকার পাবেন। * হৃৎপিন্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে আনারসের উপাদান রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিন্ডকে সুস্থ সবল করে গড়ে তোলে। * যাদের হাঁপানি আছে তারা আনারস খান বেশ উপকার পাবেন। এর বিটা ক্যারোটিন এ রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। * আনারস শরীরে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল উৎপাদনে বাধা দেয় তাই দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে। * আনারসের উচ্চ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট অর্থাৎ ভিটামিন সি, বিটা ক্যারেটিন, কপার, জিংক, ফোলেট আছে তাই যাদর সন্তান হয় না বা সন্তান হওয়ার সমস্যা তারা আনারস খান উপকার পাবেন। * কিডনিতে পাথর পাথর হওয়ার প্রবণতা আনরস কমিয়ে দেয়।
সতর্কতা : যেসব মহিলারা বাচ্চা নিতে যাচ্ছেন বা গর্ভবতী তারা আনারস খাবেন না তাদের জন্য খুবই বিপদজনক। গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আনারস খাওয়ার কিছুক্ষন আগে অথবা পরে দুধ খাবেন না। আনারস কেটে খোলা অবস্থায় বেশী সময় রাখবেন না এতে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। নিয়মিত দেশীয় ফলমূল খান সুস্থ থাকুন।

শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আনারস

৩০ জুলাই, ২০১৯
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->