বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মোঃ আমিনুল হক মধুপুর, (টাঙ্গাইল) থেকে : আনারসের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মধুপুর গড়ে এখন আনারসের ভরা মৌসুম। এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আনারসের আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর দাম ভাল পাওয়ার কারণে এবার আনারসের আবাদ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এ বছর আনারসের দাম ভাল পেয়ে চাষিরা বেজায় খুশি। মধুপুর গড় এলাকার লাল মাটি আনারস চাষের জন্য ব্যাপক উপযোগী। এলাকার তাপমাত্রা ও আবহাওয়া পরিবেশ ভাল থাকায় আনারস চাষ করতে কোন সমস্যা হয় না। হয় না কোন ঝুট ঝামেলা। লাল মাটির উঁচু পাহাড়িয়া জমিতে পানি জমে থাকে না। তাই বৃষ্টি পাত বেশি হলেও উঁচু জমিতে পানি না উঠায় কৃষকরা অতিসহজে তাদের জমিতে আনারস চাষ করতে পারে। দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা আবার ঝুঁকছেন আনারস চাষে।
মধুপুর গড় এলাকার পিরোজপুর, চাপাইদ, কামারচালা, অরণখোলা, সীমলাপাড়া, কুড়াগাছা, পীরগাছা, মমিনপুর, কোনাবাড়ী, ধরাটি, সাইনামারী, নয়নপুর, জালিচিড়া, কালিয়াকুড়ি, সুবকচনা, শোলাকুড়ী, হরিণধরা, তিলেরতাল, কাকড়াগুনী, দোখোলা, চুনিয়া, জালাবাদা, লোহরিয়া, রাজাবাড়ী, হাগুড়াকুড়ি, বাগাডোবা, জলছত্র, পঁচিশমাইল, গাছাবাড়ী, রসুলপুর, জাঙ্গালিয়া, মাগন্তিনগর, বেরীবাইদ, গোবদিয়া, ইদিলপুর, গারো বাজার, মহিষমারা, মোটেরবাজার, সাগরদিঘী, আউশনারা, সন্তোষপুর, ছনখোলা, খামারচালা, আলোকদিয়া, ফুলবাড়ীয়াসহ মধুপুর গড় এলাকার প্রায় শতাধিক গ্রামে আনারসের চাষ হয়ে থাকে। মধুপুর, ঘাটাইল, ফুলবাড়ীয়া ও মুক্তাগাছাসহ গড় এলাকার লাল মাটিতে ব্যাপক পরিমাণে আনারসের চাষ হয়। আনারসের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে কৃষকরা তাদের বাগানে পেঁপে, আদা, কচু, হলুদসহ নানা ধরনের কৃষি ফসল চাষ করে থাকে।
মধুপুর গড় এলাকার আনারস চাষের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার আউশনারা ইউনিয়নের ইদিলপুর গ্রামের আদিবাসী ভেরেনা সাংমা চল্লিশ দশকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রচুর পরিমাণে আনারস চাষ হয়। পরে মেঘালয় থেকে ঘুরে আসার সময় কিছু আনারসের চারা গরুর গাড়ী দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তার বাড়ীতে নিয়ে এসে বাড়ীর আঙ্গিনায় যতœ করে লাগান। দুই বছর পরে আনারস ধরে। আনারসের এ জাতের নাম জায়েন্ট কিউ। এ জায়েন্ট কিউ জাতের আনারস রসালো এবং সুস্বাদু। তার দেখা দেখি ধীরে ধীরে মধুপুর গড় এলাকায় হয়ে উঠে আনারসের জনপদ। ভেরেনা সাংমার উত্তরসূরি ভেরেনা আর চিসিম (৮৪) জানান, মধুপুর গড় এলাকায় আনারস চাষের জনক আমাদের পরিবার। তিনি জানান, আনারসের আগের স¦াদ মেডিসিন দেয়ার কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার মধুপুর এলাকার জলছত্র, পঁচিশমাইল, পিরোজপুর, চাপাইদ ও সাইনামারীসহ কয়েকটি গ্রামের সরজমিনে পরিদর্শনে গেলে আনারস চাষী, পাইকার ও মহাজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার বৃষ্টি কম থাকার কারণে তারা আনারসের দাম ভাল পাচ্ছে। এ জন্য তাদের এবার লোকসান গুনতে হবে না। লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে তারা জানান। জলছত্র বাজারে গিয়ে কথা হয় আনারস চাষি মিজানুর রহমান (৩৫) এর সাথে। তিনি জানান, এবছর সে ৪০ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। এবার তার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন ভোরে ভ্যানযোগে আনারস বাজারে নিয়ে নগদ দামে বিক্রি করছে। সে পাঁচ ভ্যান গাড়ীতে ৫শ’ আনারস এনে ২৫ টাকা দরে প্রতিটি আনারস বিক্রি করছেন। কথা হয় আরেক চাষি মজনু মিয়া (২৮) এর সাথে। তার বাড়ী মাগন্তিনগর গ্রামে। তিনি এবার ৮ বিঘা জমিতে আনরস চাষ করেছেন। ভালভাবে যতœ নেয়ার কারণে ফলনও ভাল হয়েছে। প্রতিটি আনারস ২০-৩০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। মাগন্তিনগর গ্রামের আরেক কৃষক মুন্নাজ আলী (৪০) জানান, সে ১০ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। ১০ বিঘা জমিতে তার ৩০ হাজার আনারস ধরেছে। সার কীটনাশক ও বাগান ভালভাবে পরিষ্কার করেছেন। পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এবার সে সাড়ে ৭ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করতে পারবে বলে আশা করছেন। বাজার ঘুরে দেখা গেল প্রতিটি ছোট আনারস ৫-১০ টাকা, মাঝারি আনারস ১০-২০ এবং বড় আনারস ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ক্রেতার কমতি নেই। রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, সিলেট ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে আনারস ক্রয় করছেন। বাজার ব্যবস্থা ভাল থাকার কারণে ক্রেতারা তাদের মণ মতো আনারস ক্রয় করছেন। মধুপুর গড়ের আনারস রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। প্রতিদিন মধুরপুর থেকে ১০০-১৫০ ট্রাক আনারস দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাগম ঘটছে। আনারস ক্রয় করতে আসা কুষ্টিয়ার পাইকার শাজাহান (৫০) জানান, বাজার ব্যবস্থা ভাল থাকার কারণে আমরা এখান থেকে প্রতিদিন আনারস কিনি এতে লাভ ভাল হয়। মধুপুরের আনরস গুণগতমান ভাল থাকায় বিক্রি করতে কোন সমস্যা হয় না। মধুপুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকার কারণে অতিসহজেই দেশের যে কোন জায়গার পরিবহন পাওয়া যায়।
মধুপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন জানান, মধুপুর উপজেলায় এ বছর ৭ হাজার ১শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। অপরদিকে; কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গড় এলাকার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ীয়া ও জামালপুর জেলার কিছু অংশে ১০ হাজার হেক্টর এবং ঘাটাইলে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।