পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ক্রিকেট তারকা-অধিনায়ক থেকে রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাশিত বৈঠকটি গত রবিবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়ার অন টেররিজমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সহযোগী দেশ পাকিস্তানের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপোড়েন চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। গত বছর ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রতি প্রতিশ্রæত অর্থসহায়তা কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করায় দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন নতুন মাত্রা লাভ করে। এরপর গত আগস্টে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের দল তেহরিকে ইনসাফ বিজয়ী হয়ে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইমরান খানের সাথে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্ক এবং কাশ্মির উপত্যকা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার কারণেই হয়তো এতদিন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রত্যাশিত বৈঠকটি সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন পরে হলেও ট্রাম্প-ইমরান বৈঠকে দীর্ঘদিনের শীতলতার বরফ গলার আভাস পাওয়া গেছে। দুই নেতা নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বেশকিছু মতৈক্য এবং খোলামেলা মতামত প্রকাশ করেছেন। বিশেষত আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে পাকিস্তানের সহযোগিতার প্রশ্নে তালেবানদের সাথে আলোচনা ও সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই বলে বৈঠকে মত দিয়েছেন ইমরান খান। অন্যদিকে ইতিপূর্বে নিজের করা অভিযোগের বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করার পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তান দ্ব›দ্ব নিরসনে কাশ্মির ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব করেছেন।
কাশ্মির ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই তাকে দিয়েছিলেন বলে হোয়াইট হাউজে ইমরান খানের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ট্রাম্প জানিয়েছেন। কাশ্মিরের রাজনৈতিক সংকট উপমহাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কাশ্মিরকে ঘিরে পরাশক্তি দুই প্রতিবেশী দেশ ইতিমধ্যে অন্তত তিন বার যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে বড় ধরনের সংঘাতের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। কাশ্মির সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের প্রশ্নে গত ৭০ বছরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ব্যর্থ হয়েছে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদিদের অনাগ্রহ বা নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এই সমস্যার কোনো সমাধান সম্ভব হয়নি। অথচ সুদান, তিমুর, বসনিয়ার রাজনৈতিক সংকট আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। কাশ্মির ও ভারত-পাকিস্তান দ্ব›দ্বকে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে নিয়ে আসার যে কোনো প্রয়াস এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে গণ্য হতে পারে। বিশেষত প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের মধ্যস্থতার উদ্যোগকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই স্বাগত জানানো উচিত। তবে হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্পের এই আগ্রহের প্রশ্নে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক সুস্পষ্ট অবস্থান পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পকে মধ্যস্থতা করতে অনুরোধ করেছেন বলে দাবি করা হলেও ভারতের পক্ষ থেকে এখন তা অস্বীকার করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইমরান খানের বৈঠক নিয়ে কূটনৈতিক রশিটানাটানি হয়েছে বলে জানা যায়। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং ইমরান খানের সাথে বৈঠকটি যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি বলে জানা যায়। ইতিমধ্যে আঞ্চলিক রাজনীতির পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব সৃষ্টি হলেও চীন ও রাশিয়ার সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের বিশেষ অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের অবস্থান প্রতিবেশীদের জন্য সুখকর নয়। তাদের আধিপত্যবাদী নীতি আঞ্চলিক শান্তির জন্যও বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈরী চীন ও রাশিয়ার সাথেও শান্তি ও সমঝোতার কথা ভাবতে বাধ্য হয়। এমনকি দুর্বল শক্তি আফগানিস্তানের তালেবানদের সাথেও আলোচনা ও সমঝোতার কথা ভাবতে হচ্ছে, সেখানে প্রায় ৭০ বছর ধরে আঞ্চলিক অশান্তি ও যুদ্ধের খড়গ হয়ে থাকা কাশ্মির প্রশ্নে শান্তি ও সহাবস্থানের নীতির কোনো বিকল্প নেই। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মত একজন মধ্যস্থতাকারী যদি আন্তরিক ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন তা অবশ্যই ভারত ও পাকিস্তানকে সমঝোতা ও শান্তির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। এ ধরনের প্রস্তাবকে যারা শুরুতেই অগ্রাহ্য করবে তারা শান্তির পক্ষে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইমরান খান ও ট্রাম্পের মধ্যকার বৈঠকে যেমন দুই দেশের কূটনৈতিক দূরত্ব অনেকটা কমেছে, একইভাবে কাশ্মির ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইমরান-মোদির মধ্যে শান্তি ও সমঝোতার পথ বেরিয়ে আসুক, এটাই উপমহাদেশের সব শান্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।