Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঘবন্দি মিসির আলি

আ লী এ র শা দ | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:১৭ এএম

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমদ। জীবদ্দশায় নিজের এমন জনপ্রিয়তা খুব লেখকই দেখে যেতে পারেন, সেদিক দিয়ে হুমায়ুন আহমদ খুব সুভাগ্যবান। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে তাঁর মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন (বর্তমানে আয়েশা ফয়েজ নামে পরিচিত)।
শৈশবে হুমায়ূন আহমেদের নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর একটি লেখা থেকে জানা যায়, তাঁদের পিতা ছেলেমেয়েদের নাম পরিবর্তন করতেন। তাই তিনি নিজেই পুত্রের আগের নাম পরিবর্তন করে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে হুমায়ূন ছিলেন সবার বড়।
বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার, বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন জেলায়। সিলেট জেলা শহরের কিশোরীমোহন পাঠশালায় তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা। ১৯৬৫ সালে তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন (রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান) ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি (সম্মান) এবং ১৯৭২ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে ১৯৮২ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ময়মনসিংহ) প্রভাষক হিসেবে শুরু হয় হুমায়ূন আহমেদের কর্মজীবন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি অধ্যাপনা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং সার্বক্ষণিক সাহিত্যর্চ্চায় মনোনিবেশ করেন। এর পাশাপাশি চলে নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ।
তিনি ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইর্য়কে মৃত্যুবরণ করেন। গাজীপুরের ‘নুহাশ পল­ী’-তে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
হুমায়ুন আহমদের সৃষ্টি তুমুল পাঠকপ্রিয় চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মিসির আলি। প্রায় বিশটির মতো বই লিখেছেন মিসির আলিকে নিয়ে। মিসির আলি সিরেজের বইগুলো হচ্ছে- দেবী, অন্যভুবন, বিপদ, মিসির আলির অমীমাংসিত রহস্য, তন্দ্রাবিলাস, আমিই মিসির আলি, বাঘবন্দি মিসির আলি, নিশীথিনী, নিষাদ, বৃহন্নলা, কহেন কবি কালিদাস, মিসির আলির চশমা প্রভৃতি।
বাঘবন্দি মিসির আলি বইটি কয়েক বছর পূর্বে যখন পড়েছিলাম, শুরু থেকে শেষাবধি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। যতবারই হুমায়ুন আহমদের লেখা পড়েছি ততবারই টের পেয়েছি তাঁর লেখার মধ্যে রয়েছে অন্যরকম এক আকর্ষণ শক্তি যা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় টেনে ধরে রাখতে পারে। একজন লেখক কতটা শক্তিশালী হলে পাঠককে এমন আবিষ্ঠ করে রাখতে পারেন তা ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার।
একজন লেখক যা বিশ্বাস করেন, জীবনকে যেভাবে দেখেন, জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে যে অনুযোগ, অভিযোগ থাকে তা তাঁর লেখার মধ্যে বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেন। লেখকরা কখনো কপট হতে শেখেননি, হুমায়ুন আহমদও তেমনি একজন লেখক। তিনি তাঁর যাপিত জীবনের নানা বিষয়গুলো তাঁরই সৃষ্টি চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়ন করেছেন সচেতনভাবে।
(অসমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাঘবন্দি মিসির আলি

১৯ জুলাই, ২০১৯
আরও পড়ুন