Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীনের আশ্বাস

| প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে ৯টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। গত বৃহ¯পতিবার সকালে চীনের গ্রেট হল অব পিপল-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা, অর্থনীতি ও বাণিজ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন, কানেক্টিভিটি ও ভিসা সংক্রান্ত পাঁচটি ইস্যু বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে তিনি রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করেছেন। বৈঠক শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে উভয় দেশের মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। জাপানের পর চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার এ বিষয়টি অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিকে অনেকদূর নিয়ে যাবে। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা এবং উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে চেষ্টা করবে। চীনের প্রধামন্ত্রী বলেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা।

দীর্ঘদিন ধরেই চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশে শিল্প-বাণিজ্য, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে চীন জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হয়ে আছে। বিশ্বে চীন এখন শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তি। বিশ্ব জুড়েই তার বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন অনুন্নত দেশ চীনের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এমনকি পাকিস্তানও চীনের সহযোগিতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরাও পিছিয়ে থাকতে পারি না। গেøাবাল ইকোনোমিক্স রেসে আমাদের শামিল হওয়ার জন্য চীনের মতো শক্তভিত্তির অর্থনৈতিক দেশের সহযোগিতা অনস্বীকার্য। আশার কথা, আমাদের সাথে চীনের এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ক্রমেই নিবিড় হয়ে উঠেছে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। আবার দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য চরম সমস্যা হয়ে ওঠা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর ক্ষেত্রে চীন অনেকটা নিশ্চুপ রয়েছে। পুরো বিশ্ব যখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সোচ্চার, তখন চীন এক্ষেত্রে কিছু কূটনৈতিক ভাষায় বক্তব্য দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জোরালো কোনো ভূমিকা পালন করছে না। তার আচরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো। চীনের এ ধরনের শিথিল আচরণের কারণ হিসেবে যে বিষয়টি ফুটে ওঠে তা হচ্ছে, মিয়ানমারের সাথে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক। মিয়ানমারে তার বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। ফলে সে মিয়ানমারকে জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশেও চীনের বিপুল বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। চীনা পণ্যের একটি বড় বাজারও বাংলাদেশ। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের ভয়াবহ সমস্যায় তার সহযোগিতা পাওয়া স্বাভাবিক। দেখা যাচ্ছে, চীনের কাছ থেকে এ ধরনের কার্যকর কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্যকরণে বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশ কঠোর ভাষায় চাপ প্রয়োগ করলেও তাতে মিয়ানমার কোনো গা করছে না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক কংগ্রেসম্যান রাখাইনকে বাংলাদেশের অংশ করার প্রস্তাবও দেয়। এত কিছুর পরও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্টো নতুন করে রাখাইনে নির্যাতন শুরু করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারের কোনো কিছু তোয়াক্কা না করা এবং এ অধরনের অসদাচরণ করার নেপথ্য শক্তি হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে চীন। এমন এক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সফরে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী এ আহŸানে সাড়া দিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। দেখার বিষয় হচ্ছে, চীন এক্ষেত্রে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে আক্ষরিক অর্থে চীনের চাপ দেয়া উচিত। এটাই হবে ন্যায়সঙ্গত ও ন্যায্য আচরণ। চীন যে সহযোগিতার কথা বলেছে, তা দ্রæত এবং দৃশ্যমাণ বাস্তবায়ণ জরুরি। এক্ষেত্রে বিলম্ব হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশের পক্ষে বছরের পর বছর ধরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে এবং পড়বে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের নানা ধরনের অপকর্ম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে সহায় হয়ে উঠছে। দেশের একটি অংশের পরিবেশ এবং পাহাড় ও বন ধ্বংসের মাধ্যমে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে তা দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমিকি হয়ে উঠতে পারে। উন্নয়ন সহযোগী দেশ এবং বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে চীনকে বাংলাদেশের এই সমস্যা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশটি যেমন মিয়ানমারের স্বার্থ বড় করে দেখছে, তেমনি বাংলাদেশের সমস্যা ও ন্যায্য দাবীর বিষয়টিও সমান দৃষ্টিতে দেখা তার কর্তব্য। অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে চীনকে বাংলাদেশের সমস্যা ও সংকটে পাশে পাওয়াই স্বাভাবিক প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন