Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আজিমপুরে মেয়র হানিফ মসজিদের খাদেম খুন

আটক ৩, অভ্যন্তীরণ কোন্দলের ইঙ্গিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন মেয়র মো. হানিফ জামে মসজিদের কক্ষ থেকে বস্তাবন্দী এক খাদেমের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম মো. আবু হানিফ (২৯)। গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মসজিদটির দ্বিতীয় তলায় খাদেমের কক্ষের কাছে গুদামঘর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই খাদেম ও এক মোয়াজ্জিনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহতের পরিবার বলছে, অন্য খাদেমের সঙ্গে মনোমালিন্য থেকে হানিফকে হত্যা করা হতে পারে। পুলিশও বলছে, খাদেমদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন হানিফ।

জানা গেছে, আবু হানিফ গত রমজানের প্রথম দিকে ওই মসজিদে চাকরি নেন। তিনি আজিমপুরে একটি মাদ্রাসায় দাওরা শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি মসজিদে চাকরি করতেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। স্ত্রী ও তিন মাস বয়সী সন্তান গ্রামে থাকে। আর আবু হানিফ মসজিদটির দ্বিতীয় তলায় আরো তিনজন খাদেমের সঙ্গে একই কক্ষে থাকতেন।

মসজিদটির খাদেম আলম ও ঝাড়–দার ছানাউল্লাহ জানান, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে খাদেম আবু হানিফকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার ফোনে কল দিলে প্রথমে রিং বাজে। কিন্তু রিসিভ হয়নি। পরে মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। তার মাদ্রাসায়, গ্রামের বাড়িতে, ঢাকা মেডিক্যাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজা হয়। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে বুধবার রাতের দিকে খাদেমদের কক্ষের দিক থেকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। পরে গুদামঘরে গিয়ে বস্তাবন্দী একটি লাশ দেখে মসজিদ কমিটিকে জানানো। মসজিদ কমিটি থানায় জানালে পুলিশ এসে বস্তার ভেতর থেকে খাদেম হানিফের লাশ উদ্ধার করে।

লালবাগ থানার এসআই আব্দুর কাদির বলেন, খবর পেয়ে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় তারা বস্তাটি খুলে পেটে ছুরিকাঘাত অবস্থায় খাদেম হানিফকে পান। তাকে মেরে গায়ে প্লাস্টিক ও পলিথিন পেঁচিয়ে বস্তার ভিতরে ঢুকিয়ে ওই কক্ষে ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অন্য খাদেম বাহার উদ্দিন, ফরিদ ও মোয়াজ্জিন এরশাদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।

মসজিদ কমিটির লোক ও মুসল্লিরা জানান, আরেক খাদেম সাইফুলের সঙ্গে হানিফের বিভিন্ন কারণে বনিবনা হতো না। আবার যেদিন বিকেল থেকে হানিফকে পাওয়া যাচ্ছিল না, সেদিন বিকেলে সাইফুলও কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়িতে চলে যায়। পরে রাতে কমিটির একজনকে ফোন করে তার বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি জানায়।
মসজিদ কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন জানান, কাউকে কিছু না জানিয়ে সাইফুলের চলে যাওয়াটা সন্দেহজনক। তবে ঠিক কি কারণে এই ঘটনা ঘটেছে তা তারা এখনো নিশ্চিত নয়।

কমিটির আরেকজন মনোয়ার হোসেন মনি। তিনি বলেন, চারজন খাদেম একই কক্ষে থাকত। কেউ কাজ বেশি করত, কেউ কম কাজ করত-এক খাদেমের বিরুদ্ধে অন্য খাদেমের প্রায়ই এই অভিযোগ শোনা যেতো। সাইফুলও মাঝে মধ্যে হানিফের বিরুদ্ধে কাজ কম করার বা কষ্টের কাজ কম করার অভিযোগ তুলতো। এ নিয়ে হয়তো তাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব ছিল। আর তা থেকে সাইফুর হত্যা করতে পারে বলে তার ধারণা।

খবর পেয়ে গতকাল ভোরেই ঢাকায় আসেন নিহতের শ্বশুর জাকির হোসেন ওরফে সিরাজ এবং তার দুলাভাই। জাকির হোসেন বাদী হয়ে গতকালই লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সাইফুল, খাদেমসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বছরই তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য আবু হানিফকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই খাদেম সাইফুলের সঙ্গে হানিফের বনিবনা হচ্ছিল না। হানিফ এই মসজিদে কাজ করবেন না বলেও স্বজনদের জানিয়েছিলেন। এ ঘটনা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। ঘটনায় জড়িত সকলকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফউদ্দিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে হানিফকে খুন করা হয়েছে। পলাতক খাদেম সাইফুলের ঠিকানা আমাদের কাছে আছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মসজিদটি গত বছর উদ্বোধন করা হয়। তবে মেয়র সাঈদ খোকন মসজিদটি পরিচালনার জন্য তার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে দায়িত্ব দেন। কমিটিতে আত্মীয়করণ ও কাছের লোকজন থাকায় বিভিন্ন ঝামেলা লেগেই আছে। জানা যায়, পালতক সাইফুল আগে ছাপরা মসজিদের খাদেম ছিল। পরে ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মানিকের মাধ্যমে ওই মসজিদে চাকরি নেয়। তবে যে বা যারা মসজিদ কমিটির লোকের মাধ্যমে মসজিদে চাকরি নেয়, তারা সবকিছুতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

স্থানীয় মুসল্লিরা বলছেন, মসজিদের সকল খাদেম খুব ভালো ছিলেন। একমাত্র সাইফুল উগ্র প্রকৃতির ছিল। সে কাউন্সিলর মানিকের কাছের লোক হওয়ায় অন্যান্য খাদেমদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত। বিষয়টি মসজিদ সংশ্লিষ্ট সকলে জানলেও সবাই নিরব ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ