পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের নদনদীগুলো নানাভাবে সংকটজনক অবস্থায় পড়েছে। একদিকে উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের কারণে নদনদীগুলো নাব্য হারিয়ে বিশীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আভ্যন্তরীণ শিল্পদূষণ ও দখলবাজির কারণে নদনদীর উপযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত প্রভাবশালী মহলের দখলবাজি ও শিল্প দূষণের কারণেই নদনদীগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দেশের পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি দেশের উচ্চ আদালতও নদী রক্ষায় একের পর এক রুল, নির্দেশনা জারি করে চলেছে। আদালতের সুপারিশে ইতিমধ্যে নদীরক্ষা কমিশনও গঠিত হয়েছে। তবে আসল কাজ তেমন কিছু হচ্ছে না। নদনদীর উপর দূষণ ও দখলবাজি এখনো অব্যাহত আছে। ঢাকার চারপাশের নদীর উপর প্রভাবশালী মহলের দখলবাজি ঠেকাতে ৬-৭ বছর আগেই নদীর সীমানা নির্ধারণ এবং সীমানা পিলার স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছিল। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে সীমানা পিলার স্থাপনের পরও দুর্নীতি, ত্রæটি-বিচ্চুতি, অস্বচ্ছতার কারণে এ প্রকল্পের সুফল পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে আদালতের নজরদারি নির্দেশনা ও জবাব তলবের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। তবে নদী রক্ষায় হাইকোর্টের তরফ থেকে একের পর এক রায় ও নির্দেশনা জারি হলেও দখলবাজ ও দূষণকারিদের অপতৎপরতা অব্যাহত সমান তালে অব্যাহত রয়েছে।
নদনদীর উপর দশকের পর দশক ধরে চলা দূষণ ও দখলবাজি বন্ধে আদালতে রিট দায়েরের পর মামলা পরিনতি লাভ করতেও বছরের পর বছর সময় লেগেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের গাফিলতি, প্রশ্রয় না থাকলে গণদাবি ও ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি হওয়া সত্তে¡ও দখলদাররা কোনো ভ্রæক্ষেপ করছে না। দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে চলতি বছরের প্রথমদিকে নদী রক্ষায় হাইকোটের একটি যৌথ বেঞ্চ এক যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করে। ফেব্রæয়ারির ৩ তারিখে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ প্রথমত তুরাগসহ দেশের নদনদীগুলোকে লিগ্যাল জুরিসটিক পারসন বা জীবন্ত সত্তা বলে স্বীকৃতি দেয়। সেই সাথে রায়ে নদী দখলকারীদের ব্যাংক ঋণ ও নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নদী রক্ষায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সাফল্যের বেশ কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। কথা ছিল ফেব্রæয়ারি মাসের শেষ নাগাদ সারাদেশের নদী দখলকারিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে ইতিমধ্যে ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও নদী দখলকারীদের নামের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে গত সোমবার সেই যুগান্তকারী রায়টি সুপ্রীম কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ নদী দখল ও দূষণ বন্ধের প্রত্যাশিত কার্যক্রম যেন শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশনা এবং সংশ্লিষ্ট মহলের আমলাতান্ত্রিক তৎপরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবে কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না।
মানবজাতির টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। আমাদের উচ্চ আদালতের সেই যুগান্তকারী রায়ে এই সত্যের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। আর যারা দখল-দূষণের মাধ্যমে, বাঁধ নির্মাণ, পানি প্রত্যাহার বা ভরাটের মধ্য দিয়ে নদী হত্যায় লিপ্ত রয়েছে তারা নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধেই অপরাধ করছে। এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। শুধু নির্বাচনে অযোগ্য বা ব্যাংক ঋণ থেকে বঞ্চিত করেই এ ধরনের অপরাধের শাস্তি শেষ হয়ে যায় না। মানবজাতির অস্তিত্বকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার মত অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। একের পর এক আদালতের রায় ও নির্দেশনা জারি হওয়ার পরও নদী দখলবাজরা নিবৃত্ত হয়নি। এখনো বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ, ধলেশ্বরীসহ ঢাকার চারপাশে এবং দেশের সব অঞ্চলের নদনদী অব্যাহতভাবে দখল ও দূষণের শিকার হয়ে এক প্রকার মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। এদের কারণে দেশের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। মাঝে মধ্যে অনেক টাকা খরচ করে ডাকঢোল পিটিয়ে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফুটপাথ দখলের মত উদ্ধারকৃত জমি হাত বদল বা পুনরায় দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা দখলদারদের কোনো শাস্তি না হওয়ায় নদনদীর দূষণ ও দখলবাজি বন্ধ হচ্ছে না। নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রায় ঘোষণার পর নদী রক্ষায় আর কোনো মামলা বা নতুন রায়ের প্রয়োজন নেই। নদী রক্ষা কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন দেশের সব নদীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিবে। দখল ও দূষণের সাথে জড়িতরা যত প্রভাবশালী হোন না কেন তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সেই সাথে নদীতীরবর্তী ভূমির সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনার স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু আইন করলেই হবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।