গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর রেললাইন থেকে তাসলিম আলম (২৪) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি উত্তরায় একটি বেবি গার্মেন্টসের শো-রুমে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাটিকে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে পরিবারের দাবি, কে বা কারা প্রথমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাসলিমকে অপহরণ করে। পরে তাকে হত্যার উদ্দেশে জখম করে রেললাইনে ফেলে গেছে।
গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে খবর পেয়ে উত্তরা ৮ নম্বর রেলগেইট এলাকার রেললাইনের উপর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাসলিমকে উদ্ধার করেন তার সহকর্মীরা। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তাসলিমকে স্থানীয় বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তরুণের চাচী রেহানা আজিজ জানান, নিহত তাসলিমের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। তিনি বিগত ৭-৮ বছর ধরেই উত্তরায় চাকরি করছিলেন। তিনি রাজলক্ষ্মী মার্কেটের পেছনে একটি মেসে বসবাস করতেন।
রেহানা আজিজ আরও জানান, গত ২৯ জুন সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হওয়ার পর তাসলিমের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা তার কর্মস্থলে যোগাযোগ করে জানতে পারেন সে কর্মস্থলেও যায়নি। রাত পর্যন্ত অনেকবার চেষ্টার পরেও তাসলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে রাতেও বাসায় ফিরেনি সে।
সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে পরদিন ৩০ জুন ঢাকায় বসবাসরত তাসলিমের চাচী রেহানা এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানায় জিডি করেন। এদিন রাতেই তাসলিম তার বাড়িতে ছোট বোনের কাছে ফোন করে বলেন, ‘আমি খুব কষ্টে আছি, মাকে কান্না করতে না করিস। আমি আসবো।’ এরপর থেকে আবারো তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার দুপুরে তাসলিম আবার তার বোনকে ফোন করে একই কথা বলেন। কিন্তু কোথায় আছেন বা কি হয়েছে এসব কিছু না বলেই ফোন কেটে দেন। এরপর থেকে আবারো তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
রেহানা আজিজ বলেন, সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমরা খবর পাই উত্তরায় রেললাইনে তাসলিমের লাশ পাওয়া গেছে। তখন আমি তার নাম্বারে ফোন করলে কেউ একজন ফোন রিসিভ করে এ ঘটনার কথা জানায় এবং দ্রুত বাংলাদেশ মেডিকেলে আসতে বলে। এরপর বাংলাদেশ মেডিকেলে এসে তাসলিমের লাশ দেখতে পাই।
দক্ষিণখান থানার এসআই কবির হোসেন জানান, গত ৩০ জুন তাসলিম নিখোঁজ হওয়ার পর একটি জিডি লিপিবদ্ধ করা হয়েছিলো। গত সোমবার রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাসলিমকে রেললাইন থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার সহকর্মীরা। এরপর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথার পেছনে ও মুখে জখম হয়েছে এবং পায়ের গোড়ালি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে তাসলিমের চাচী রেহানা আজিজ অভিযোগ করে বলেন, তাসলিমকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কেউ অপহরণ করে। পরে তাকে জখম করে রেললাইনে ফেলে গেছে। রেলে কাটা পড়লে তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। তাছাড়া, সে দুইদিন ধরে নিখোঁজ ছিলো, এটি অবশ্যই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
তিনি আরও বলেন, রোববার থানায় গেলে পুলিশ প্রথমে জিডি নিতে চায়নি। পরে অনেক অনুরোধের পর জিডি নিলেও পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। আমদের ছেলেতো গেছেই, এখন আমরা এ ঘটনার সঠিক কারণ জানতে চাই।
এসআই কবির হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী রেলওয়ে পুলিশের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হবে। এরপর পরবর্তী তদন্ত তারাই করবেন।
যেহেতু নিহত তাসলিম দুইদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন এবং এ বিষয়ে একটি জিডি হয়েছে, তাই থানা পুলিশ তদন্ত করবে কি না- জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।