পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্তমান সময়টি সামগ্রিক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে সঙ্কটপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। সঠিক বুঝতে না পারলেও ভুল বোঝার জন্য রাস্তা খোলা; ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ উন্মুক্ত। যেকোনো আলাপে, সংলাপে, আলোচনায়, পাঠ-উদ্ধারে, সঠিক মর্ম হৃদয়ঙ্গম করতে বা সঠিক বক্তব্য বুঝতে সময় লাগে, কষ্ট হয়। কিন্তু ভুল বুঝতে একদম সময় লাগে না, চটজলদি ভুল বোঝাবুঝি হয়েই যায়। ফেসবুক বা ভার্চুয়াল জগতের আবির্ভাবের সাথে সাথে ধৈর্য কমে যাচ্ছে। কারণ, তাৎক্ষণিক মন্তব্য দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা যদি সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই, আমরা যদি লুক্কায়িত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই, আমরা যদি প্রতিশ্রুতিকে ফলপ্রসূ করতে চাই; তাহলে চিন্তায় সমন্বয় এবং সংহতি প্রয়োজন। ২০১৮ সাল ছিল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির সময়। ২০১৮ সালের ২৯-৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনটি যা-ই হোক না কেন, সেটা যে কলঙ্কময় ছিল, সেটা যে রাজনৈতিকভাবে আগ্রাসী এবং অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল; এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিগত পার্লামেন্ট নির্বাচন বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। এই বিপর্যয় পরিহার করা যেত কি যেত না, সেটি একটি গভীর আলোচনার বিষয়, যে আলোচনা এখন করছি না। ২০১৪ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের সাড়ে পাঁচ বছর পর প্রশ্ন উঠছে, ওই নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি আসলে কে নিয়েছিলেন বা কার প্রভাবে নেয়া হয়েছিল বা কার আগ্রহে নেয়া হয়েছিল বা কার অনুপ্রেরণায় নেয়া হয়েছিল কিংবা না যাওয়ার কাজটি সঠিক হয়েছিল কি হয়নি? এখন অনেকেই আফসোস করছেন, অনেকেই সঠিক বলছেন। এই বলার পেছনে কারণ, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের সাথে তুলনা। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠত না, যদি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপর্যয় না ঘটত। ২০১৮ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হয়েছিল, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। সুতরাং এখন থেকেই যদি আমরা রাজনৈতিক কর্মীরা নিজেদের চিন্তা ও কর্মের মধ্যে সংহতি ও সমন্বয় সৃষ্টি না করি, অতীতের ভুল থেকে যদি শিক্ষা না নিই, সহকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার প্রক্রিয়া যদি বন্ধ না করি, বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার প্রবণতা যদি বন্ধ না করি, রাজনীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রবণতা যদি বন্ধ না হয়, অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় নেতৃত্ব যদি অবিলম্বে স্থির না করি, সাংগঠনিক কাজ সম্পাদনে সময় ক্ষেপণের প্রবণতা যদি বন্ধ না করা হয়; তাহলে আমরা আবারো বিপদে পড়তে বাধ্য। এরূপ প্রবণতা বন্ধ করতে হলে, ইতিবাচক সংহতি ও সমন্বয় সৃষ্টি করতে গেলে; অতীত রাজনৈতিক নিজস্ব কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণ তথা সমালোচনা তথা আত্মসমালোচনা করা একান্তই জরুরি। কর্মব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মীরা বলতেই পারেন, এত পড়ালেখা দিয়ে কী হবে? তারা বলতেই পারেন, আগে নেতারা ‘ঠিক’ হন, তাহলে আমরা কর্মীরা অবশ্যই ‘ঠিক’ হয়ে যাবো। অতএব, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনৈতিক বাদানুবাদে যাওয়া সমীচীন মনে করি না। জাতীয়তাবাদী ঘরানার রাজনীতিকে রক্ষা করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ও ধর্মীয় ম‚ল্যবোধের চেতনার সমন্বিত রাজনীতির প্রসার করার জন্য যা করা প্রয়োজন তা নীরবে করে যাওয়াই উত্তম মনে করি। নেলসন ম্যান্ডেলা জেলখানা থেকেই সমাজকে প্রভাবান্বিত করেছেন; ইমাম খোমেনি ইউরোপের একটি দেশের একটি রাজধানীতে বসেই তেহরানকে প্রভাবিত করেছেন। কারণ, তাদের রাজনৈতিক চরিত্র, জ্ঞানের চরিত্র ছিল নিষ্কলুষ এবং স্বচ্ছ। অতি স¤প্রতি মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইবরাহিমের রাজনৈতিক রূপান্তর এবং তার প্রভাবও একটি উদাহরণ।
ইতোমধ্যে ২০ দলীয় জোটে প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যথাসম্ভব, এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রমের আহ্বান ও প্রস্তাবিত কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে, ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়ায়, প্রাণচাঞ্চল্য ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপি, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বেগম জিয়ার মুক্তি ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় ২০ দলীয় জোটের আমি, জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা গোলাম পারওয়ার, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, বিএনপির বেশ কিছু সুপরিচিত নেতানেত্রী, বিএনপি দলীয় বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন বা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। নতুন নির্বাচন এবং বেগম জিয়ার মুক্তিসহ ১৮ দফা দাবিতে এলডিপির চেয়ারম্যান ও অন্য নেতৃবর্গ গত বৃহস্পতিবার ২৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে নতুন সংগঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। উদ্দেশ্য, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করা এবং আর একটি স্বচ্ছ সংসদ নির্বাচন অতি দ্রুত নিশ্চিত করা।
২০১৯ সালের ছয় মাস গত হতে যাচ্ছে; জুলাইয়ের পরই আগস্ট। ১৫ আগস্ট হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীদের কর্তৃক বঙ্গবন্ধু হত্যার কলঙ্কময় দিন; ইতিহাসে শোকাবহ দিবস। মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা থাকবে। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পবিত্র কোরবানির ঈদ হবে এবং এ উপলক্ষে মানুষের দৃষ্টি ত্যাগমুখী ও ঘরমুখী থাকবে। ডিসেম্বর হলো বিজয়ের মাস, পুরো মাস অনুষ্ঠানমালা থাকবে। ২০২০ সাল বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবার্ষিকী বছর। আমরা সব অনুষ্ঠানমালার সুশৃঙ্খল বর্ণিল সাফল্য কামনা করি। ২০২১ সাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশতবার্ষিকী। আশা করি, দেশবাসীকে নিয়ে, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সাথে নিয়ে সরকার অনুষ্ঠানমালা সাজাবে। আশা করি, উচ্চপর্যায়ের বিদেশি মেহমানেরা উপস্থিত থাকবেন। এ তো গেল দেশ প্রসঙ্গে বৃহত্তর আশা; এর সাথে ক্ষমতাসীন সরকার জড়িত। কিন্তু যারা আমরা সরকারে নেই, যারা রাজনীতির অঙ্গনে আছি; আমাদের কী হবে?
২০১৪ সালের আগেও বিবিধ ধরনের প্রলোভনের মুখে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাইনি, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও বিবিধ প্রলোভনের মুখে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাইনি। অতএব উপসংহার হলো, ২০ দলীয় জোটকে শক্তিশালী করেই আমাদের থাকতে হবে এবং আমরা থাকব। কিন্তু শক্তিশালী হওয়ার পন্থাগুলো কী? এটা আলোচনার বিষয়। একটি উদাহরণ হতে পারে, ২০ দলীয় জোটের শরিক সব রাজনৈতিক দল নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে অথবা দু’টি বা তিনটি দল মিলে বেগম জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সার্বিক কর্মসূচি পালন করবে। আর একটি উদাহরণ হলো, বিএনপি জোটের প্রধান শরিক হিসেবে কর্মসূচি পালন করবে এবং অন্য শরিকেরা সব সময় তার পাশে থাকবে। আসলে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানমালা বা কর্মসূচি হুবহু ঘোষণামতো চলে না। শুরু করার পর পরিস্থিতি সাপেক্ষে, সাফল্য-ব্যর্থতা আর পর্যালোচনা সাপেক্ষে কর্মসূচি সংশোধিত হয়; পরিশীলিত হয়। কর্মসূচির জন্য নিজ নিজ দলের বা দলগুলোর কর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়। এ জন্য মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিণা লাগে। এ প্রেক্ষাপটেই আমি আবেদন জানাই, ২০ দলীয় জোটের সক্রিয়তা পুনরুদ্ধার করার জন্য তথা রাজনীতির মাঠে সরব হওয়ার জন্য। জোটের রাজনীতিতে সাফল্যের কিছু শর্ত আছে তথা জোট রাজনীতির সফল অস্তিত্বের কিছু শর্ত আছে; দু-এক সপ্তাহ আগের কলামে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। শর্তগুলো বড় শরিক ছোট শরিক সবার জন্যই কম হোক বেশি হোক প্রযোজ্য। শুধু ভালো সময়ে থাকব, মন্দ সময়ে থাকব না- এই মানসিকতা কাম্য নয়। আবার অন্ধের মতো অনুসরণ করব- এই মানসিকতাও কাম্য নয়। আমার আট বছরের জোট রাজনীতির অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, ছোট শরিকেরা বেশি পায়, কম দেয়। কিন্তু ছোট শরিকেরা যা দেয়, সেটির গুরুত্ব কম নয়। বাগানে যেমন বিভিন্ন প্রকার ফুল থাকে, বন-জঙ্গলে যেমন বিভিন্ন প্রকৃতির উদ্ভিদ থাকে, সৃষ্টিজগতে যেমন বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির প্রাণি থাকে, তেমনি রাজনীতির অঙ্গনে বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির দল থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব সমমনা দলের মোটিভেশন মোটামুটি এক রকম না হলে, আরাধ্য লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা। কল্যাণ পার্টির নেতাকর্মীদের সামনে গত ১১ বছরে বহুবার একটি কথা বলেছি, একজন নেতা বা কর্মীকে তার দলের জন্য অনেক প্রকারের অবদান রাখতে হলেও ওই অবদানগুলো চারটি শিরোনামের অধীনে প্রকাশ করা যায়। যথা- সময়, মেধা, শ্রম ও অর্থ। এই চারটির সমন্বয় করে নেতৃত্ব বা ইংরেজিতে ‘লিডারশিপ’। আমি উল্লেখ করছি, লিডার নয়, লিডারশিপ। যে নেতৃত্ব যত বেশি ক্যারিশমেটিক, তার সাফল্য তত বেশি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত- এ দলগুলোকে আমরা একটা ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারি। যথা- এগুলো বড় দল, ক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, দেশ পরিচালনায় সুবিধা-অসুবিধায় পরিচিত দল। অর্থাৎ এসব দলে কর্মীর সংখ্যা অসংখ্য, শুধু তাদেরকে ‘ধরে রাখতে’ পারলেই হলো। এসব বড় দলে নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে সময়, মেধা, শ্রম ও অর্থ দেয়ার জন্য লোকের অভাব নেই। দলের ভেতরে হোক অথবা বাইরে হোক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হোক, দেশের বাইরে হোক, কোনো দলের জন্য কোটি কোটি, কোনো দলের জন্য লাখ লাখ। কিন্তু যে দলগুলো আকৃতিতে অনেক ছোট, বয়সে অনেক ছোট, সম্পদে অনেক ছোট, সেসব দলের জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক আইন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশ এবং বিদ্যমান জনমানসিকতা বৈরী। দেশের মিডিয়া প্রশ্ন তুলবে, নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলবে যে, ‘আপনাদের কর্মসূচি কী? আপনারা কী করতে চান? আপনারা কী করতে পারবেন?’ ইত্যাদি। কিন্তু এই ছোট দলগুলোর পাশে অর্থশক্তি নিয়ে দাঁড়ানোর মতো সূত্রের বা ব্যক্তির বা সংগঠনের দারুণ অভাব। কথাটি অনেকটা এ রকম যে, গৃহস্থ গাছ থেকে ফল চান, কিন্তু গাছের গোড়ায় সার দিতে, পানি দিতে ইচ্ছুক নন। এ সমস্যার তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান আমাদের জানা নেই। এ সমস্যার মধ্যে থেকেই আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে। এ ধরনের ছোট দলগুলোর যেটি বড় সম্পদ, তা হলো নৈতিকতা, নেতৃত্বের মেধা, নেতাকর্মীদের নিবেদিতপ্রাণ আনুগত্য এবং দেশপ্রেম; আবার এই সম্পদগুলো যে সব ছোট দলের আছে, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কর্মী সংখ্যা, এসব দলের জন্য প্রধান সম্পদ নয়।
ওপরের অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় পাঠকদের প্রতি আমার নিবেদন। গত ১১টি বছর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। আজ থেকে আগামী সময়টিও কল্যাণ পার্টি এই চেষ্টা করে যাবে। নতুন নির্বাচন চাই। বেগম জিয়ার মুক্তি চাই। কোনটি আগে; বেগম জিয়ার মুক্তি আগে নাকি নতুন নির্বাচন আগে? এর উত্তরে বলব, যেটি আগে সম্ভব সেটিই আগে আদায় করতে হবে। বেগম জিয়া ‘গণতন্ত্রের মা’, তার মুক্তি হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে সবচেয়ে বড় মাইলফলক। আবার নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে যদি জাতীয়তাবাদী শক্তি ক্ষমতায় যেতে পারে, তাহলে বেগম জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত। তাই বলছি, কোনটি আগে কোনটি পরে, সেটি নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। আমাদের দরকার রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন। আমাদের দরকার জনগণের সুবিধা-অসুবিধা সম্পৃক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলন। আন্দোলন করতে গেলে কর্মসূচি দিতে হবে; তা শান্তিপূর্ণ হতেই হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদি ও অকৃত্রিম চেতনা এবং ধর্মীয় ম‚ল্যবোধের চেতনার আওতার মধ্যেই হতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য বা আস্থাযোগ্য নেতা বা নেতামণ্ডলীর অধীনে হতে হবে। অতীতের কলামগুলোতে লিখেছি, ক্যারিশমেটিক লিডার অতি প্রয়োজনীয়। অতীতের ক্যারিশমেটিক লিডারকে জীবন্ত রাখতে হয় অথবা নতুন করে উদ্যোগ নিয়ে ক্যারিশমেটিক লিডারকে সাজাতে হয়। ক্যারিশমা কিসের থেকে আসে? একজন লিডারের ক্যারিশমা আসে তার চরিত্র থেকে, তার রাজনৈতিক ব্যস্ততা থেকে, তার রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থেকে, তার রাজনৈতিক ত্যাগ থেকে, তার চরিত্রের বলিষ্ঠতা থেকে, তার কথা বলার সাহস ও প্রকাশ করার সাহস থেকে, মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার দক্ষতা থেকে। ২০১৯-২০২০ সালে চেষ্টা করে দেখতে হবে, পুরনোকে জীবন্ত করতে এবং আধা ক্যারিশমেটিককে পূর্ণ ক্যারিশমেটিক করতে।
রাজনীতি চলমান ও গতিময়। বর্তমানে পৃথিবীতে পাঁচ-সাতটি বা ১০-১২টি দেশ হয়তো আছে, যাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, তাদের দেশের বাইরের উপাদান দিয়ে প্রভাবিত হয় না বা হলেও কম হয়; যথা- আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ফ্রান্স, ইরান, তুরস্ক, ভারত, জার্মানি ইত্যাদি। পৃথিবীর অন্য দেশগুলো কম হোক বেশি হোক, তাদের নিজেদের দেশের বাইরের উপাত্ত বা উপাদান দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই প্রভাবিত অথবা তা হতে বাধ্য। এমন দেশগুলোর কিছু নাম নেয়া যায়, যথা- ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়া, সিরিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি। বাংলাদেশের ব্যাপারে আরো কয়েকটি কথা বলি। গত ৪৮ বছরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। ভালো কাজ অনেক হয়েছে, মন্দ কাজও অনেক হয়েছে। বাংলাদেশে বহির্বিশ্বের প্রভাব খুব লক্ষ্যণীয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটে, সমাধানের সন্ধানে বহির্বিশ্বের নেতৃবর্গ জড়িত হয়েছেন অতীতে। এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বহির্বিশ্বের অনেক দেশ জড়িত হয়েছে ও হচ্ছে। পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর আসরে বাংলাদেশের মর্যাদাকে উজ্জ্বল করার কাজে অনেক বিদেশি রাষ্ট্রের অবদান আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও বহির্বিশ্বের কিছু দেশের বা বাংলাদেশের কাছাকাছি দেশগুলোর আগ্রহ ও চেষ্টার কোনো কমতি নেই। তাই ২০১৯ সালের জুন মাসে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি চিন্তা হলো, বহির্বিশ্বের প্রভাবকে কতটুকু শোভনীয় রাখা যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বকীয়তা ইত্যাদিকে কী পন্থায় বাইরের প্রভাব থেকে মোটামুটি নিরাপদ রাখা যায়। বিশ্বায়নের এই যুগে, সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ভুখণ্ড দখল করার প্রবণতা নেই বললেই চলে। একটি দেশ বা জাতিকে ভৌতিকভাবে বা ভৌগোলিকভাবে দখল না করেও পরাভ‚ত করা যায়। কোনো একটি জাতির মানসিক ও নৈতিক শক্তি কতটুকু, তার ওপর নির্ভর করে সেই জাতি অ-ভৌতিক ও অ-ভৌগোলিক আক্রমণের মুখে কতটুকু টিকে থাকতে পারবে। তাই রাজনৈতিক আন্দোলন শুধু ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তনের জন্য নয়, এ আন্দোলনকে অবশ্যই সার্বিক নিরাপত্তা ও ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য হতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।