পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ একটি শান্তি-প্রিয় দেশ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথেও সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। আমাদের দেশে বসবাসকারী মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের ও বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ইতিহাস নতুন নয়। এটা অতীতকাল থেকে এখনো চলমান। সুখ- দুঃখে একে অপরের সঙ্গী হয়েছে। বাংলাদেশ অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করে নি।দুর্বলের পাশে দাঁড়িয়েছে বারবার। স¤প্রতি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার অমর সব সাক্ষী রেখেছে বিশ্বের বুকে। তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে আমাদের সরকার অনেক প্রশংসা পেয়েছে। ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর ধর্ষণ, নির্যাতন, নৃশংস নিপীড়ন ও অমানবিক নির্যাতন চালানো শুরু করে।রোহিঙ্গাদের অর্থ-সম্পদ লুট করে নেয়,বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। একবার ভেবে দেখেছেন, কত জঘন্য অপরাধ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা? তারা মিয়ানমারকে শুধুমাত্র বৌদ্ধ রাষ্ট্র তৈরি করতে চায়। মুসলমানদের অস্তিত্ব তারা মেনে নিতে চায় না। রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক সেটার স্বকৃীতি দেয় না। অথচ রোহিঙ্গারা সেই দেশেই জন্মেছে, বড় হয়েছে। এখন সেই আপন ভূমি থেকেই পালিয়ে আসতে হয়েছে। কি অদ্ভূত! আমরা তাদেরকে শুধুমাত্র মানবিক দিক বিবেচনা করে এদেশে আশ্রয় দিয়েছি। প্রায় ১০ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া কি সহজ ব্যাপার? মোটেও সহজ নয়। আমাদের মতো দেশ তাদের বিপদে পাশে থেকেছে এটাই অনেক বড় কথা। যখন এই কথা মনে পড়ে তখন হৃদয়ে শান্তি অনুভব করি। ভারতের দিকে একটু নজর দেন।
কী নিষ্ঠুর! তারা রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ঢুকতেই দিলো না। তাদের সীমান্তে আশ্রয়ের জন্য যেসব রোহিঙ্গা গিয়েছিল তাদেরকে আামাদের দিকেই চেপে দিল।
এখন সব সমস্যা আমাদের। এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই সম্ভব হচ্ছে না। একটি চুক্তির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকটি পরিবারকে পাঠানোর উদ্দ্যেগ নিলেও রোহিঙ্গাদের আন্দোলনের মুখে সব ভেস্তে গেল। দিন দিন এরা ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হুমকি। এরা এখন দেশের জন্য বড় সমস্যা। বাংলাদেশর পক্ষে এতো বড় জনগোষ্ঠীর চাপ সহ্য করা সম্ভব নয়। যেখানে আমাদের দেশের মানুষের দিন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে তাদের দেখাশোনা করা অসম্ভব। একটা বিষয় ইতিমধ্যেই সবাই বুঝে গেছে যে, রোহিঙ্গাদের কারনে দেশের অভ্যন্তরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা গুলোও চেষ্টা করছে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এসব কথায় কোনো কান দিচ্ছে না। এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শিশু জন্মের হার বেড়েই চলেছে। প্রায় দেড় লক্ষাধিক। রোহিঙ্গাদের কুসংস্কার ও মূর্খতাই এর জন্য দায়ী। বর্তমানে রোহিঙ্গারা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়েছে। ইদানীং তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট তৈরি করে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য রাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর খবর শোনা যাচ্ছে। এরা প্রথমে দালান চক্রের মাধ্যমে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। তার পর স্থানীয়দের সাথে থেকে কথা-বার্তা, চাল-চলন সব ঠিক করে নিচ্ছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।তবে সবক্ষেত্রে সফল হচ্ছে না। আমি মনে করি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদেরকে যেসব স্থানীয় লোক আশ্রয় দিবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।তাহলে কেউ আর সাহস পাবে না। জনগণের উচিত রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে দেশের অন্য কোথাও দেখলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া। কেননা এরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। একটি বিষয়ে আমার খুব চিন্তায় হয়। সারাবিশ্বে যেভাবে জংগী সংগঠনের উত্থান ঘটে চলেছে তা অত্যন্ত ভয়ংকর। বর্তমান বিশ্বে জংগী বিরোধী অভিযান আরো প্রবল আকার ধারণ করেছে। কিন্তু তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে নির্মূল করা খুব কঠিন।সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বিভিন্ন উপায়ে লোকবল সংগ্রহ করে জংগী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েও লোকবল সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে পারে। এটা আমাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।আরেকটি সন্দেহের বিষয় থেকে যায় সেটি হলো যেসব দেশি-বিদেশি এনজিও সেখানে কাজ করছে সেগুলোরও জংগী সংঘটনের সাথে সম্পৃক্তা থাকতে পারে। সুতরাং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে সাথে সেখানে কর্মরত সকল ব্যক্তি, দল ও সংস্থার যাবতীয় কর্মকাÐের উপর সরকারের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘অতিভক্তি চোরের লক্ষণ’। একটা বিষয় পরিষ্কার যে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে সমস্ত সংস্থাগুলো কাজ করছে তারা চায় না যে রোহিঙ্গারা দেশে ফেরত যাক। কেননা তাহলে তো তাদের আরাম-আয়েশ বন্ধ হয়ে যাবে, সকল সুযোগ-সুবিধা হারাবে।
বাংলাদেশকেই সকল ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। একবার ভেবে দেখুন, কত বড় জটিল সমস্যায় ভুগছে দেশ! রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে একা এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব নয়। দুই দেশের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। তবে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে চাচ্ছে না। এজন্য প্রতিনিয়ত তালবাহানা করেই যাচ্ছে। সারাবিশ্ব রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাদের এই ঐকমত আন্তরিকতা শূন্য। যার ফলে মিয়ানমার সরকারের উপর তেমন কেনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত, চীন ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়াচ্ছে তারা আমাদের পাশে আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তারা সবসময় সহযোগিতা করবে। প্রশ্ন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তারা কতটুকু সহযোগিতা করল? কিছুই করেনি। বরং তাদের চাল-চালন দেখে এটা বুঝতে পারা যায় মিয়ানমারের পক্ষেই তাদের অবস্থান। আর আমাদেরকে শুধু আশার আলো দেখানো হচ্ছে। আসলে কোনো দেশই আমাদের ভালো চায় না। দেশের উন্নতি সহ্য করতে পারছে না। এজন্য কতিপয় রাষ্ট্র চেষ্টা করছে বাংলাদেশকে যেকোনো জটিল সমস্যার ভিতরে রেখে দিতে।আর ঠিক তেমনি একটি সমস্যা হলো রোহিঙ্গা সমস্যা। এই সমস্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এখন যত দ্রæত সম্ভব এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।মুসলিম বিশ্বের আস্থা ওয়াইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারের উপর সবধরনের অবরোধ করা। তাহলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অনেকটা সহজ হবে। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো জোরালো করতে হবে। রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। সেই সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাÐে। যা আমাদের দেশের জনগণের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।