Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ৩টি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

৪টি হাইস্পীড ফেরি বোট ও ডাইভিং বোট-এর কিল লেয়িং

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৯, ৪:৪২ পিএম

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য নির্মিত ৩টি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল-এর আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর সহ আরো ৪টি হাইস্পিড ফেরি বোট ও হাইস্পিড ডাইভিং বোট-এর কিল লেয়িং অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন দেশের নৌ প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধিতে খুলনা শিপইয়ার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে জানিয়েছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে এসব নৌযানের উদ্বোধন ও কিল লেয়িং করে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকার সন্ত্রাশ ও জঙ্গীবাদ সহ মাদক ও দূর্ণীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এক্ষেত্রে অভিষ্ট লক্ষে পৌছতে হবে। খুলনা শিপইয়ার্ড-এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কমোডর আনিসুর রহমান মোল্লা (এল) এনইউপি, পিএসসি-বিএন’এর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক জাকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হক এনইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসিÑবিএন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহকারী প্রধান, খুলনা নৌ এরিয়ার কমান্ডার ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং মহানগর পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজি ছাড়াও উর্ধতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এ উপমহাদেশে নৌযান নির্মিত হত। হারিয় যাওয়া সে ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। তিনি বলেন, আমাদের কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নৌযান নির্মান করে রপ্তানি করছে। এটাকে আরো এগিয়ে নিতে হবে বলে জানান সচিব। বঙ্গবন্ধুর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরন করে তার যোগ্য উত্তরসুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ১৯৯৯সালে প্রধানমন্ত্রী খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে যে দুরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন, তার বাস্তব রূপ আজকের এ ইয়ার্ড। এখানে এখন বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজ থেকে সব ধরনর নৌযানই তৈরী হচ্ছে।
২০১৬-এর ২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২৬৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এসব আইপিভি;র নির্মান কাজের সূচনা করেন। চীনা কারিগড়ি সহায়তায় সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে নির্মিত এসব আইপিভি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের নিবিড় টহলদারী সহ সক্ষমতা আরো বৃদ্ধির করবে। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথ এবং নদ-নদীর নিরাপত্তার সাথে ইলিশ সহ আমাদের মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন ও সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে দায়িত্বশীল মহল। গত বছর ২ মে অপর এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এসব নৌযান-এর লঞ্চিং করেছিলেন।
উপক’লীয় বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্ধার তৎপরতা এবং ডাইভিং অপারশেন সহ টহল কাজে অংশ গ্রহনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ দুটি হাইস্পীড ডাইভিং বোট ও দুটি হাইস্পীড ফেরি বোটের নির্মান কাজের সূচনা করেন স্বরাষ্ট্র সচিব। ফ্রান্সের নৌযান জরিপ ক্লাসিফেকেশন সোসাইটি ‘ব্যুরো ভেরিটাস’এর তত্বাবধানে এসব হাইস্পীড ফেরি ও ডাইভিং বোট সমুহ নির্মিত হবে বলে খুলনা শিপইয়ার্ডের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
৬৭ফুট দৈর্ঘ ও প্রায় ২১ফুট প্রস্থ দুটি হাইস্পীড ফেরি বোট কোষ্টগার্ডের বিভিন্ন ঘাটি ও অপরেশনাল কার্যক্রমে ব্যাবহৃত হবে। ৫৫ টন পানি অপসারন করে ঘন্টায় প্রায় ৩৪ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে সক্ষম এসব নৌযানে জাপানের ‘ইনয়নমার’ ব্রান্ডের ৪৭৮ কিলোওয়াটের ২টি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও একই ব্রান্ডের ৩৬.৮ কিলোওয়াটের ২টি জেনারেটর সংযোজন করা হবে। খুলনা শিপইয়ার্ড’ই দেশে প্রথমবারের মত এধরনের বিশেষায়িত আধা সামরিক নৌযান নির্মান করতে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য মাঝারী থেকে বড় ধরনের যুদ্ধ জাহাজ ছাড়াও সাবমেরিন অপারেসনাল টাগ সহ বিভিন্ন ধরনের সমর নৌযানের নির্মান সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছে। প্রতিষ্ঠনটি কোস্ট গার্ডের জন্যও টাগ বোট, ভাসমান ক্রেন ও পন্টুন তৈরী করছে। খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যে কন্টেইনার শীপ, অয়েল ট্যাংকার, প্যাসেঞ্জার শীপ, ট্যুরিস্ট বোট, ফায়ার ফাইটিং বোট ও ফেরীসহ সব ধরণের নৌযান নির্মান কাজও সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যও নানা ধরনের নৌযান নির্মান করেছে।
গত অর্থÑবছর খুলনা শিপইয়ার্ড প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা করপূর্ব মুনফা অর্জন করে। এক সময়ে রুগ্ন ও বিরাষ্ট্রীয়করন তালিকাভূক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে প্রায় পৌনে ২শ কোটি টাকার দায়দেনা সহ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্যাবস্থাপনা কতৃপক্ষ সহ কর্মীদের সততা, আন্তরিকতা এবং নিরলশ প্রচেষ্টায় সব দায়দেনা পরিশোধ করে গত প্রায় দু দশকে খুলনা শিপইয়ার্ড ৫শ কোটি টাকার মত নীট মুনফা অর্জনেও সক্ষম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হস্তান্তরিত আইপিভি ৩টি চায়না ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি’র সরাসরি তত্বাবধানে এসব নির্মিত হয়েছে। এসব আধা সামরিক টহল নৌযানে ৩০ মিলিমিটারের ২টি করে সেমি অটোমেটিক গান ছাড়াও ১৪.৫ মিলির দুটি গান এবং দুটি করে এলএমজি সংযোজন করা হয়েছে।
কোস্ট গার্ডকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষে ২০১৫ থেকে ’৩০ সাল পর্যন্ত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়ন সহ বাস্তবায়ন চলছে। উপকুলীয় এলাকার নিরাপত্তা, সম্পদ আহরন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। দেশের অভ্যন্তরীন ও উপকুলীয় এলাকায় নিয়মিত টহল প্রদানের মাধ্যমে চোরাচালান ও মাদাক বিরোধী অভিযান ছাড়াও সুষ্ঠু ও নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ রক্ষার সাথে আইনÑশৃংখলার ক্ষেত্রেও কোস্ট গার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। আর এ লক্ষ্যেই সরকার কোস্ট গার্ডকে একটি আধুনিক আধা সামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোস্ট গার্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ