বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমাদের মধ্যে একটি কথা খুবই প্রচলিত। ‘সর্ব অঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা’। বস্তুত সর্বাঙ্গই যদি ব্যথা-বেদনায় জর্জরিত হয়ে যায়, দেহের প্রতিটি পরতে পরতে যদি দুঃখ-কষ্ট ও দহন-জ্বালার অনল দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে, কিন্তু প্রতিকার, উপশম ও নিরাময়ের কোনো পথই যদি খোলা না থাকে, তাহলে ধুঁকে ধুঁকে মরা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আর থাকে না বলেই একবিংশ শতাব্দীর চলমান যুগ-সন্ধিক্ষণে বিশ্বজোড়া ইসলাম ও নাম-ডাক সর্বস্ব মুসলিম মিল্লাতের শোচনীয় অধঃপতন এতখানি তলানিতে এসে পৌঁছেছে, যার প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করা খুবই দুরূহ ব্যাপার।
লক্ষ করলে দেখা যায় যে, ইসলাম ও মুসলমানদের চিহ্নিত শত্রæরা বুদ্ধিবল, অস্ত্রবল, জনবল, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বল, কলাকৌশল প্রয়োগের বল, ধন সম্পদের বল, প্রচারযন্ত্রের বল, চরিত্র হননের বল, মোটকথা এমন কোনো বল নেই, যা তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংসের কাজে ব্যয় করছে না।
এরই হাজারো দিকের মধ্যে একটি দিকের ওপর বর্তমানে জোর দেয়া হচ্ছে বেশি। তা হলো বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা.-এর হাদিসকে অস্বীকার করা এবং হাদিসের গুরুত্ব ও সত্যতাকে চিরতরে বিনষ্ট করার ক‚টকৌশল অবলম্বন করা। এই ঘৃণ্য কৌশলের ফাঁদে পা রেখে মহানন্দে নাগরদোলায় জেঁকে বসেছে বহু মুসলিম নামধারী রাজা-বাদশাহ, আমীর-উমারা, সুধী, গুণী ব্যক্তিরা। যাদের একমাত্র কামনার ধন হলো ‘ফুলুস’ অর্থাৎ অর্থকড়ি, টাকা পয়সা, বিশেষ করে ডলার বা রিয়ালের কচকচে মচমচে আনাগোনা।
ফুলুসের এই শরাবান তহুরার আমেজ মন বর্ণনার নৃত্য চপল ছন্দ, তাদের এতখানি আন্দোলিত ও বিমোহিত করে তুলেছে যে, তাদের গতি-প্রকৃতি ও ধর্মাদর্শের খতিয়ান বলতে কিছুই নেই। যদি বলা হয় কেন নেই, কি জন্য নেই, তার উত্তর একটাই- তা হালো, তারা আজ দিশাহারা, ছন্নছাড়া, পাগলপারা। তাদের স্বকীয় তাল, লয়, ছন্দ, সুর ও মূর্ছনার ঝঙ্কার তোলার শক্তি ও সামর্থ্য কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। অতল তলে তলিয়ে গেছে চেতনার বাতিঘর।
ইদানীং একজন ইটালিয়ান ক্রিষ্টান পাদ্রী ফেসবুকে জোরগলায় বলে বেড়াচ্ছে যে, সহীহ মুসলিম শরীফের একটি বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে হাদিস লিখে রাখার নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ আছে। বিশ্বনবী সা. হাদিস লিখে রাখতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং হাদিস লিখে রাখার নিষেধাজ্ঞা সব সময়ই বলবৎ ছিল এবং আছে।
এই পাদ্রী বেচারা ও তার অনুসারীদের প্রচার-প্রপাগান্ডা উত্তর আমরা অত্যন্ত ঠান্ডামাথায় দেয়ার চেষ্টা করব। কারণ, মূল সত্য হতে যারা বিচ্যুত, সত্যবিবর্জিত জীবনাচারে যারা অভ্যস্ত, তাদের সত্যের পথে আহবান করার ক্ষেত্রে যেমন কোমলতা ও নমনীয়তা থাকা দরকার, তেমনি মূলনীতি ও আদর্শের সুষ্ঠু বাস্তবায়নও অপরিহার্য। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের হাদিস বিশারদগণের নীতি ও বিধানকে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করতে প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।
সহীস মুসলিম শরীফে সংকলিত একটি হাদিসে যেমন হাদিস লিখে রাখার নিষেধাজ্ঞা লক্ষ করা যায, তেমনি হাদিসের অন্যান্য কিতাবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর বাণী লিখে রাখার নির্দেশও পাওয়া যায়। এ জাতীয় হাদিসের সংখ্যা এগারোর অধিক। এই না- সূচক ও হ্যাঁ-সূচক পরস্পরবিরোধী বর্ণনাবলির মাঝে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে হাদিস বিশারদগণ নি¤œলিখিত গ্রহণযোগ্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
যথা- ১. সহীস মুসলিম শরীফে সংকলিত নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদিসটি মারফু না মাওকুফ এ ব্যাপারে হাদিস যাচাই-বাছাইকারীদের বিস্তর মতভেদ আছে। কাজেই একাধিক মারফু হাদিসের বিপরীতে এই হাদিসটি গ্রহণযোগ্য নয়। ২. অথবা এর অর্থ হলো একই কাগজে কোরআন ও হাদিস লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, এর ফলে কোরআন ও হাদিস মিশ্রিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৩. নিষেধাজ্ঞার হুকুম ওই সকল ব্যক্তির জন্য ছিল, যারা উত্তমরূপে লিখতে জানত না। কিন্তু যারা উত্তমরূপে লিখতে জানত তাদের জন্য হাদিস লিখে রাখার নির্দেশ ছিল। ৪. অথবা সহজভাবে বলা যায় যে, সহীস মুসলিম শরীফে সংকলিত নিষেধাজ্ঞা সূচক হাদিসটি মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর নির্দেশ সূচক হাদিসগুলো নাসিখ বা রহিতকারী। (আল ফাতহুল বারী : খন্ড ১, পৃ. ২০৮; শরহুল নববী আলা সহীহ মুসলিম: খন্ড ২, পৃ. ৪১৫; ফাতহুর মুলহিম: খন্ড ১, পৃ. ২৬০; তাদরীবুর রভী: পৃ. ৬৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।