দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
এ, কে, এম ফজলুর রহমান মুন্্শী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আমরা জানি পূর্বতন নবী এবং রাসূলদের আমলেও সালাতের প্রচলন ছিল। কিন্তু তাদের সে সালাতের নির্দিষ্ট কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা ছিল না। কাহারো আমলে দুই রাকাত, তিন রাকাত বা চার রাকাত সালাত আদায়ের বিধান ছিল। কিন্তু দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয় নূরনবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর উম্মতদের ওপর। মহান আল্লাহপাক তাঁকে যে জীবন বিধান দান করলেন, তা হলো ইসলাম। ইসলামই একমাত্র জীবন বিধান যা আল্লাহপাকের মনোনীত ও পছন্দনীয়। এ ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান হতেই পারে না।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, রাসূলে পাক (সা.)-এর আসল নাম পবিত্র কোরআনে ‘মুহাম্মদ’ (সা.) চারবার উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য আসমানি কিতাবে তাঁর নাম ‘আহমাদ’ ব্যাখ্যা হয়েছে। আহমাদ নামটি আল কোরআনে একবার এসেছে। আরবি আহমদ শব্দটিতে চারটি বর্ণ আছে। যথাÑ আলিফ, হা, মীম এবং দাল। এই চার সংখ্যাটি মূল প্রেমাস্পদ আল্লাহর প্রতি নিবেদিত। আর আরবি “মুহাম্মদ” শব্দটিতে পাঁচটি বর্ণ আছে। যথাÑ মীম, হা, মীম, মীম এবং দাল। মুহাম্মদ (সা.) হলেন হাবীব এবং আল্লাহপাক হলেন মাহবুব। মাহবুব যেহেতু হাবীবের সকল কাজেই সন্তুষ্ট থাকেন সেহেতু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে “হাবীবুল্লাহ” উপাধিতে বিভূষিত করা হয়েছে। এই শ্রেষ্ঠতম উপাধি আর কোনো নবী-রাসূলের জন্য ছিল না। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহব্বতকেই পবিত্র কোরআনে আল্লাহর প্রতি নিবেদিত মহব্বত হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে।
আমরা এও জানি যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল মি’রাজের রাতে। হিসেব করলে দেখা যায়, আরবি মিরাজ শব্দটিতে পাঁচটি বর্ণ আছে। যথাÑ মীম, আইন, রা, আলিফ এবং জ্বিম। এই পাঁচ সংখ্যাটি ‘মুহাম্মদ’ (সা.) নামের পাঁচ সংখ্যার সাথে ঘনিষ্ঠ ও সম্পর্কযুক্ত।
মি’রাজের প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সফরসঙ্গী যিনি ছিলেন, তিনি হলেন হযরত জিব্রিল ফেরেশতা। আরবি জিব্রিল শব্দেও পাঁচটি বর্ণই আছে। যথাÑ জিম, বা, রা, ইয়া এবং লাম।
মি’রাজের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাহক ছিল বোররাক। আরবি বোররাক শব্দটিতেও পাঁচটি বর্ণই আছে। যথাÑ বা, রা, রা, আলিফ এবং ক্বাফ।
মি’রাজের লগ্নে রাসূলে পাক (সা.) আল্লাহর সামনে পাঁচবারই ফিরে ফিরে গিয়েছিলেন এবং আল্লাহর তরফ হতে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করেছিলেন।
রাসূলেপাক (সা.) যে পরিপূর্ণ জীবন বিধান দিয়ে গেছেন তার নাম হলো ইসলাম। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি ইসলাম শব্দটিতে পাঁচটি বর্ণই আছে। যথাÑ আলিফ, ছিন, লাম, আলিফ এবং মীম।
ইসলামের জন্য প্রধান যে শর্ত তা হলো ঈমান। ঈমান ছাড়া ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করা যায় না। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আরবি ঈমান শব্দটিতেও পাঁচটি বর্ণ আছে। যথাÑ আলিফ, ইয়া, মীম, আলিফ এবং নুন। ঈমানের যথার্থতা নিরূপিত হয় তাছদীক বা সত্যতার স্বীকৃতি ও আমল বা কর্মানুষ্ঠানের দ্বারা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আরবি তাছদীক শব্দে পাঁচটি বর্ণই আছে। যথাÑ তা, ছোয়াদ, দাল, ইয়া এবং ক্বাফ। অপরদিকে আমল শব্দেও পাঁচটি বর্ণই আছে। যেমন- আলিফ, আইন, মীম, আলিফ এবং লাম।
প্রতিটি বস্তুরই যেমন একটি ভিত্তি বা বুনিয়াদ থাকে, তেমনি ইসলামের বুনিয়াদও পাঁচটি জিনিসের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। যথা-ঈমান, সালাত, রোজা, যাকাত এবং হজ। সালাতের একান্ত নিবিড়তম মুহূর্তে মহান আল্লাহপাকের যে প্রশংসা করা হয় তা দুটি ভাগে বিভক্ত। যথাÑ তাসবীহ ও তাহমীদ। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি তাসবীহ শব্দে পাঁচটি বর্ণ আছে। যথাÑ তা, সিন, বা, ইয়া এবং হা। অপরদিকে তাহমীদ শব্দেও পাঁচটি বর্ণই আছে। যথা-তা, হা, মীম, ইয়া এবং দাল। সালাত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ফরজ ইবাদত। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবি ইবাদত শব্দেও পাঁচটি বর্ণই আছে। যথাÑ আইন, বা, আলিফ, দাল এবং তা।
একান্ত অপরিহার্য সালাতকে কায়েম করতে হলে বান্দাহর অন্তরে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহর মহব্বত থাকা দরকার। এই মহব্বতই বান্দাহকে পূর্ণ আন্তরিকতা ও গভীর মনোনিবেশের স্তরে উন্নীত করতে সক্ষম। হিসেবে করলে দেখা যায়, আরবি ‘মুহাব্বাত’ শব্দটিতেও পাঁচটি বর্ণই আছে। যথাÑ মীম, হা, বা, বা এবং তা।
সালাত কায়েম করতে গিয়ে বান্দাহ যখন কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ায় তখন তার মাঝে দুটি রূপ পরিদৃষ্ট হয়। একটি হলো, দৈহিক রূপ অপরটি হলো আন্তরিক রূপ। দৈহিক রূপে পাঁচটি বস্তু তার সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে। যেমনÑ আগুন, বাতাস, মাটি, পানি ও এর দ্বারা গঠিত দেহাবয়ব। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ পাঁচটি বস্তুর অতীত সূক্ষ্ম শক্তিও তাকে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেমনÑ ক্বলব, রূহ, ছির, খফি এবং আখফা। সুতরাং এখানেও পাঁচ সংখ্যার সাথে সম্পৃক্ততাই লক্ষ্য করা যায়।
সালাত কায়েমকারী সালাতের বিভিন্ন অবস্থা ও অনুষ্ঠানাদি সুষ্ঠভাবে কায়েম করতে গিয়ে সচেতনতার সাথে অগ্রসর হন। এই সচেতনতার পথে যে সকল ইন্দ্রিয় তাকে বিভিন্নভাবে উপযোগী অবস্থানে অধিষ্ঠিত করতে যৌথভাবে এগিয়ে আসে, এদের সংখ্যা পাঁচ।
যেমনÑ চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক এই ইন্দ্রিয়গুলোর সক্রিয় সহযোগিতা না হলে বস্তুজগৎ হতে যাত্রা শুরু করে বস্তুহীনতার অসীম সমুদ্রে সালাতের মাধ্যমে অবগাহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরিশেষে আমাদের মনে রাখা দরকার যে, পূর্ণ সচেতনতা, দেহ-মনের একাত্মতা, নির্মল মুহাব্বত, তাসবীহ ও তাহমীম সমৃদ্ধ ইবাদত এবং ইসলামের আলোকোজ্জ্বল পথে রাসূলে পাক (সা.)-এর প্রদর্শিত কর্মানুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে যে সালাত কায়েম করা হয় তা-ই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দীদার লাভের প্রকৃত পাথেয়।
এ পর্যন্ত আমরা সালাত শব্দটি ব্যবহার করে এসেছি। এই সালাত শব্দের প্রতিশব্দ নামাজ শব্দটি বাংলা, উর্দু ফার্সি ও হিন্দিতে বহুল প্রচলিত। এ সকল ভাষায় নামাজ বলতে সালাতকেই বুঝানো হয়ে থাকে। তাই, এখন হতে আমরা সালাতের বাংলা প্রতিশব্দ নামাজকে ব্যবহার করব।
নামাজ কি?
নামাজ কি? এর উত্তরে বলা যায়, নামাজ হচ্ছে সৃষ্ট মানুষের অন্তর, জবান এবং হাত-পা দ্বারা স্বীয় ¯্রষ্টার সামনে বন্দেগী ও আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যম। সে করুণাময় ও দয়ালু মনিবের স্মরণ। তাঁর দেয়া অগণিত নেয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপন। মূল ও অবিনশ্বর সৌন্দর্যের প্রশংসা এবং তাঁর একাকিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ান্ত স্বীকৃতি। নামাজ হচ্ছে প্রেমাস্পদের কাছে তৃষিত কাকুতি। স্বীয় করুণানিধানের সন্নিধানে দেহ ও মন সম্ভূত বন্দেগী। তা হচ্ছে, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির একান্ত কামনা। এ হচ্ছে আমাদের অন্তরের সহজাত কামনার অভিব্যক্তি। এ হচ্ছে ¯্রষ্টা এবং দৃষ্টির মাঝে গভীর সম্পর্ক স্থাপন ও সংরক্ষণের একান্ত মাধ্যম। এ হচ্ছে অশান্ত চিত্তের প্র¯্রবণ। ব্যথিত চিত্তের উপশম এবং নিরাশ চিত্তের আশার আলো। নামাজ প্রকৃতই সহজাত প্রকৃতির ধ্বনি। অনুভূতি ও উপলব্ধিপ্রিয় অন্তরের এ হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ প্রভঞ্জন। বস্তুত জিন্দেগীর সার ও অস্তিত্বের মর্মকথা নামাজের মাঝেই নিহিত রয়েছে।
কোনো অদৃশ্য শক্তির সামনে মস্তক অবনত করা এবং তাঁরই সকাশে আরজী ও ফরিয়াদ পেশ করা, এমনকি বিপদের দিনে তাঁরই কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভের আবেদন করা মানুষের সহজাত স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। মনে হয় মানুষের অন্তরের মণিকোঠায় এমনকি উৎস বা ছাঁচ রয়েছে, যা অজানাভাবেই অঙ্গুলির স্পর্শ ও ছোঁয়াচ হতে মুক্ত ও পবিত্র। আল কোরআনের ঘোষণা ‘আলাছতু বিরাব্বিকুম’। অর্থাৎ ‘আমি তোমাদের প্রতিপালক নই’ দ্বারা এরই অভ্যন্তরীণ সহজাত ধ্বনির প্রত্যুত্তর দান করা হয়েছে। আল-কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মানুষের এই সহজাত স্বাভাবিক অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তোমাদের ওপর যখন বিপদ আপতিত হয়, যখন সমুদ্রে তুফান ওঠে এবং তোমাদের জাহাজ সমুদ্রে আটকা পড়ে, তখন আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যাকে তোমরা আহ্বান কর?
মোট কথা মানুষের কপাল নিজেই একটি সেজদাস্থল তালাশ করে। যার সামনে সে অবনত হয় এবং মনের গোপন আরজি পেশ করে। সে নিজের কামনা-বাসনা তাঁর দরবারে উপস্থাপন করে। বস্তুত এবাদত হচ্ছে, অন্তরের এই সহজাত স্বভাবের জিজ্ঞাসার প্রত্যুত্তর। এই কামনা যদি না থাকে, তাহলে মানুষের অন্তরের উদাসীনতা ও বিদিশার কোনো চিকিৎসা মোটেই সম্ভব নয়। বন ও অরণ্যে জীবনযাত্রার মাঝেও এবাদতের কিছু না কিছু রুসুম ও রেওয়াজ দেখতে পাওয়া যায়, যা তাদের সহজাত স্বভাবের আহ্বানকে পরিপূর্ণ সান্ত¦না দেয়ার কাজ করে। সুতরাং ঐশী জীবন-দর্শনও এ থেকে খালি থাকবে, এমনটি হতেই পারে না। সুতরাং দুনিয়ার প্রত্যেকটি আসমানি ধর্মেই আল্লাহকে স্মরণ করার হুকুম এবং তাঁর স্মরণে পালনযোগ্য কতিপয় রীতি-পদ্ধতি আছে। ইসলামে হামদ ও তাসবীহ পাঠের নিয়ম আছে। ইহুদিদের মাঝে ‘মজলুম’ খৃস্টানদের মাজে দোয়া পার্সিদের মাঝে ‘জমজমা’ এবং হিন্দুদের মাঝে ভজনের রীতি আছে। দিনে এবং রাতে এই অপরিহার্য কাজ পালন করার জন্য সকল সম্প্রদায়ের মাঝেই সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে স্থির বিশ্বাস রাখা উচিত যে, নামাজ ও ধর্মীয় চেতনার দিক হতে এ সকল নিয়মনীতির অধীন। যে নীতি সম্পর্কে দুনিয়ার সকল মাযহাবই একমত। কুরআনুল কারীমের শিক্ষা অনুসারে জানা যায় যে, দুনিয়াতে এমন কোনো পয়গাম্বর আগমন করেননি যিনি স্বীয় উম্মতকে নামাজের তালীম দেননি বা এর জন্য তাগিদ করেননি। বিশেষ করে মিল্লাতে ইব্রাহীমিতে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন স্বীয় সাহেবজাদা হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে মক্কার বিরান ভূ-খ-ে আবাদ করলেন, তখন এই উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন, “হে আল্লাহ! সে যেন নামাজ কায়েম করতে পারে।” (সূরা ইব্রাহিম : রুকু-৬)
এক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে, আল-কোরআনের সমার্থক যাবুর ও তৌরাত হতেও পাওয়া যায়। জানা যায় যে, ইহুদিদের পুরনো সহিফাগুলোতে নামাজের জন্য প্রচলিত শব্দ “আল্লাহর নাম লওয়া” ছিল। সুতরাং তৌরাত এবং যাবুরে নামাজের জন্য সেই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) ‘বাইতে ঈল’ (বাইতুল্লাহ)-এর পাশে একটি ‘কুরবানগাহ’ নির্মাণ করেছিলেন এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করেছিলেন। (পয়দায়েশ : ১২-৪) হযরত ইসহাক (্আ.) আল্লাহর নাম নিয়েছিলেন (পয়দায়েশ : ২৬-২৫) হযরত দাউদ (আ.)ও আল্লাহর নাম স্মরণ করেছিলেন। (যাবুর : ১১৭-১২০) এই ব্যবহারিক দিকটি আল-কোরআনেও ব্যক্ত হয়েছে, “এবং তিনি স্বীয় প্রতিপালকের নাম স্মরণ করলেন এবং নামাজ আদায় করলেন।” (সূরা আ’লা) আল-কোরআনে সমার্থবোধক আয়াত আরও অনেক আঝ। ইহুদিদের প্রাচীন সহীফাসমূহ যেমনÑ ‘সফরে দানিয়াল’ এবং খৃস্টানদের সকল সহীফার মাঝে নামাজের জন্য দোয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা আরবি ‘সালাত’ শব্দটির সমার্থবোধক। এ জন্য ইঞ্জিলের উর্দু তরজমাগুলোতে দোয়া শব্দটি তরতাজা ‘নামাজ’ শব্দ দ্বারা করা হয়েছে। (মথি ১৭২১ এবং মথি ২৩-২৪)
অনুরূপভাবে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-ও স্বীয় সন্তান-সন্তুতির জন্য দোয়া করেছেনÑ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এবং আমার বংশের লোকদেরকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন।” হযরত ইসমাইল (আ.) সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করা হয়েছে, “তিনি স্বীয় পরিবার-পরিজনদেরকে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিতেন।” (সূরা মারয়াম : রুকু-৪) হযরত শুয়াইব (আ.) কে তাঁর স্ববংশীয় লোকেরা গালি দিয়ে বলত, “তবে কি তোমার নামাজ আমাদেরকে এই হুকুম দিচ্ছে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যেগুলোর পূজা করত, আমরা সেগুলো ছেড়ে দেই? (সূরা হুদ : রুকু-৮) হযরত লুত, হযরত ইসহাক, হযরত ইয়াকুব (আ.) এবং তাদের বংশের পয়গাম্বরদের ব্যাপারে আল-কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, “এবং আমি তাদেরকে নেক কাজের এবং নামাজ কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছিলাম।” (সূরা আম্বিয়া : রুকু-৫) হযরত লোকমান (আ.) স্বীয় পুত্রকে নসিহত করে বলেছিলেন, “হে আমার পুত্র! তুমি নামাজ কায়েম করবে।” (সূরা লুকমান : রুকু ২) হযরত মূসা (আ.)-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, “আমার স্মরণে নামাজ কায়েম কর,” অন্যত্র হযরত মূসা (আ.), হযরত হারুন (আ.) এবং বনী ইসরাঈলকে হুকুম করা হয়েছে, “নামাজ কায়েম কর।” (সূরা ইউনুস : রুকু-৯) বনী ইসরাঈলের সাথে ওয়াদা করা হয়েছিল যে, “যদি তোমরা নামাজ কায়েম কর তাহলে আমি তোমাদের সাথে থাকব।” (সূরা মায়েদাহ : রুকু-৩) হযরত যাকারিয়া (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ তিনি মিহরাবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেছিলেন।” (সূরা আলে ইমরান : রুকু-৪) হযরত ঈসা (আ.) বলেছেন, “আল্লাহপাক আমাকে নামাজের হুকুম প্রদান করেছেন।” (সূরা মারয়াম : রুকু-২)
উপরোক্ত আয়াতসমূহ ছাড়াও আল-কোরআনের মাধ্যমে একথা প্রতিপন্ন হয় যে, “ইসলামের আমলেও আরবের কোনো কোনো ইহুদি ও খৃস্টান নামাজ পাঠ করত।” “আহলে কিতাবের মাঝে কিছু লোক যারা দাঁড়িয়ে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে।” (সূরা আলে ইমরান : রুকু-১১) হাদিস শরীফেও ইহুদি এবং খৃস্টানদের নামাজের কথা বলা হয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন নামাজ পড়বে তখন লুঙ্গি পর ও চাদর গায়ে দাও, ইহুদিদের মতো খালি গায়ে থেক না।” “তোমরা ইহুদিদের মতো শুধু কাঁধের ওপর হতে চাদর লটকে দিয়ো না, বরং চাদর জড়িয়ে নামাজে ইহুদিদের মতো ঝুঁকে পড়ো না।” তোমরা ইহুদিদের বিপরীতে নামাজে জুতা এবং মোজা ব্যবহার কর।” আমার উম্মতে ওই সময় পর্যন্ত দ্বীনের কিছু না কিছু নমুনা বাকি থাকবে, যতক্ষণ না তারা ইহুদিদের মতো মাগরিবের নামাজে তারকা উদয় হওয়ার এবং খৃস্টানদের মতো ফজরের নামাজে তারা পুঞ্জ অস্ত যাওয়ার জন্য এন্তেজার করবে।” (এই হাদিসগুলো কানজুল উম্মাল চতুর্থ খ-ের বিভিন্ন স্থান হতে চয়ন করা হয়েছে। এই উদ্ধৃতিগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আরবের ইহুদি ও নাসারাদের কিছু লোক এমনও ছিল যারা নামাজ আদায় করত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।