বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত সাহল ইবনে সা’দ সাঈদী রা.-এর বর্ণনা, একবার মুশরিকদের সঙ্গে এক যুদ্ধ হলো। যুদ্ধের এক পর্যায়ে উভয় দল নিজেদের ছাউনিতে চলে গেল। এমন সময় নিজেদের পক্ষে বীরবিক্রমে লড়াই করা এক ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামী।
এ কথা শুনে উপস্থিত একজন তাকে অনুসরণ করল। যখন সেই লড়াকু লোকটি যুদ্ধের জন্য বের হলো, তখন এ অনুসরণকারীও তার সঙ্গে বের হলো। একজন যখন দৌড়ায় তখন অপরজনও দৌড়ায়। একজন দাঁড়ালে অপরজনও দাঁড়িয়ে যায়। এভাবেই সে তাকে অনুসরণ করছিল। একপর্যায়ে লড়াকু লোকটি ভীষণভাবে আক্রান্ত হলো। আঘাতের তীব্রতায় টিকতে না পেরে সে মাটিতে নিজের তরবারি রেখে তা দিয়েই আত্মহত্যা করল। তা দেখে অনুসরণকারী ছুটে গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট। বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসূল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন - কী বিষয়? সে বলল, একটু আগে আপনি যে লোকটিকে জাহান্নামী বলেছিলেন আর অন্যরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছিল না, আমি তাদেরকে বলেছিলাম, আমি তোমাদের হয়ে তার বিষয়টি দেখছি। এরপর আমি তার পেছনে পেছনে বেরিয়ে পড়ি। যুদ্ধের একপর্যায়ে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়ে। তখন নিজের তরবারি দিয়েই নিজেকে সে শেষ করে দেয়।
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কাউকে দেখে মনে হয়, সে জান্নাতীদের মতোই আমল করে যাচ্ছে, অথচ সে জাহান্নামী। আবার কাউকে দেখে মনে হয়, সে জাহান্নামীদের মতো কাজ করে যাচ্ছে, অথচ সে জান্নাতী।’ (সহি বুখারী, হাদিস ৪২০১)
এ হাদিসের এক মর্ম এমন- মৃত্যুর সময় যে ঈমান নিয়ে যেতে পারবে, আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখে সে-ই সুখী হবে। আর সারা জীবন ভালো ভালো আমল করেও যদি মৃত্যুর সময় ঈমান কারো খোয়া যায়, তাহলে যন্ত্রণাদায়ক জাহান্নামই হবে তার স্থায়ী ঠিকানা।
এর পাশাপাশি এ হাদিসটি আমাদেরকে আরেকটি মহাসত্যের নির্দেশ করছে- দুনিয়ার এ জীবনে বাহ্যত একটু ভালো কাজ করেই, কিছুটা নেক আমল করেই পরকালীন শাস্তি থেকে মুক্তির বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। একটু একটু নেক আমলের পাশাপাশি মরণটাও যদি ঈমানের সঙ্গে হয়, তাহলেই চিরসুখের নিশ্চয়তা। কিন্তু মৃত্যুর সময়টি কার কেমন যায়, কে জানে?
ঈমান হারানোর আশঙ্কা তো পদে পদে। চলার পথের প্রতিটি বাঁকে শয়তান ওঁৎ পেতে আছে। হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা না করে উল্টো অহঙ্কার করার অপরাধে যখন তাকে জান্নাত থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তখনই সে আদমসন্তানদের বিভ্রান্ত করার শপথ করে নিয়েছে।
কোরআনের ভাষায়, ‘সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, তাই আমি(ও) শপথ করছি, আমি তাদের জন্য তোমার সরল পথে ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর আমি তাদের ওপর হামলা করব তাদের সম্মুখ থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকেও। আর তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।- সূরা আ’রাফ (৭) : ১৬-১৭।
এরপর থেকে শয়তান তার মিশনে সদা অবিচল। বনি আদমকে বিভ্রান্ত করার চক্রান্তে সে সদা মশগুল। একজন মুমিন যখন এ চক্রান্তকারী শয়তানের সব জাল ছিঁড়ে চলতে থাকে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে, মহান প্রভুর সন্তুষ্টির পথে, সিরাতে মুসতাকিমে, শয়তান তার পিছু ছাড়ে না। তাকে পথহারা করার শেষ চেষ্টাটি সে করে মৃত্যুর সময়।
মৃত্যুর মাধ্যমে যেমন এ জীবনের সমাপ্তি ঘটে, সমাপ্তি ঘটে এ জীবনের পরীক্ষারও। যে পরীক্ষার ক্ষণে ক্ষণে পদস্খলনের আশঙ্কা, সে পরীক্ষায় তো আর নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। মুমিনমাত্রই তাই এ নিয়ে শঙ্কিত থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।