Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে থাইল্যান্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৯, ৫:২৫ পিএম

থাইল্যান্ড এখন কোন পথে হাঁটছে- গণতন্ত্র, নাকি গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরতন্ত্র? সাবেক সেনাশাসক প্রায়ুথ চান-ওচা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এ প্রশ্ন উঠেছে বেশ জোরের সঙ্গে৷ সমালোচকেরা বলছেন, দেশটির সিনেটের সবকজন সদস্যই নিয়োগ পেয়েছেন সেনাবাহিনীর পছন্দে৷

বলা হচ্ছে টানা ১০ ঘণ্টা পার্লামেন্টে ব্যাপক তর্ক-বিতর্কের পর প্রায়ুথ চান-ওচাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়েছে৷ কিন্তু শেষে ভোটের শেষে দেখা গেছে পার্লামেন্ট সদস্যদের ৫০০ জনই প্রায়ুথ চান-ওচার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন৷ অন্যদিকে সেনাবিরোধী দলগুলোর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পেয়েছেন কেবল ২৪৪ ভোট৷
২০১৪ সালে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী পদেই আছেন প্রায়ুথ চান-ওচা৷ কিন্তু মার্চের নির্বাচনের পর তার নেতৃত্বে সেনাশাসনকে গণতান্ত্রিক রুপ দেয়ার চেষ্টা চলছে৷ তবে বুধবারের ভোটাভুটির সময় পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন না প্রায়ুথ৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরও জনসম্মুখে আসেননি তিনি৷ এমনকি কখন জনগণের সামনে নিজের বক্তব্য তুলে ধরবেন, সে তারিখও এখনও ঠিক হয়নি৷ তবে বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটির পর ফেসবুক পেজে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি৷ সকল ‘দায়িত্ব’ সুষ্ঠুভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রায়ুথ চান-ওচা৷
গত পাঁচ বছরে দেশটির প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন৷ জান্তাবিরোধীদের অভিযোগ, গণতন্ত্রের নামে সেনাশাসনেরই আরেক ধারা চালু করা হচ্ছে৷ সেনা তত্ত্বাবধানে প্রণয়ন করা নতুন সংবিধান অনুসারে সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধা৷ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সব শাখার প্রধানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিনেটের সদস্য বনে যাওয়ার বিধানও রয়েছে এই সংবিধানে৷
এতোকিছুর মধ্যেও সরকার চালাতে প্রায়ুথকে বেশ বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষেই প্রায়ুথকে আগে আইন পাস করাতে হবে৷ কিন্তু সেখানে তার ১৯ দলীয় জোট মাত্র চার আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ ফলে, এই দুর্বল সরকার নিয়ে বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া প্রায়ুথের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পরতে পারে৷ সেনাপ্রধান হিসেবে যেভাবে একক সিদ্ধান্তে দেশ চালাতে পারতেন প্রায়ুথ, এখন আনুষ্ঠানিক নির্বাচনে পার্লামেন্ট গঠিত হওয়ায় সে সুযোগ আর থাকছে না৷ অতীতে সেনা নিয়োজিত অ্যাসেম্বলিতে যেকোনো সিদ্ধান্ত পাশ করানো তার পক্ষে যতোটা সহজ ছিল, এখন বিরোধীদের সামনে দাঁড়িয়ে তা ততোটাই কঠিন হবে৷
ব্যাংককের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক থিতিনান পংসুধিরাক মনে করেন, ‘এতোদিন একটা স্ট্রংম্যান ভাব ধরে থাকলেও, এখন প্রায়ুথকে আরো বেশি জবাবদিহি ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷ ফলে এবার তাকে আমরা প্রায়শই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে দেখবো৷ তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, তাঁর জোট সরকার টিকবে কতোদিন৷’
২০১৪ সালে ক্ষমতা দখলের পর সংবিধান বাতিল করে একটি মধ্যবর্তী সংবিধান প্রণয়ন করে সেনাবাহিনী৷ সে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রায়ুথকে কারো অনুমোদন ছাড়াই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়৷ সে ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বাস্তবে ও অনলাইনে সেনাশাসনের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কিছু আইন প্রণয়নও করেন তিনি৷ নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগের পর এই আর্টিকেল স্বয়ংক্রিয়বাবে বাতিল হয়ে যাবে বটে, কিন্তু এর অধীনে করা আইনগুলো থাকবে বলবৎ৷ এমন প্রেক্ষাপটে, দেশটির একদা শক্তিশালী অর্থনীতি আরো নাজুক রূপ নেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা৷ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই অস্থিতিশীল ও দুর্বল সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতিতে কতোটা আস্থা রাখতে পারবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়৷
একদিকে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিরোধীদের শক্তিশালী অবস্থান, অন্যদিকে এতোগুলো দল মিলে নামমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতা জাতীয় বাজেটের মতো বড় বড় সিদ্ধান্তকে ফেলতে পারে জটিলতার মুখে৷ বড় যেসব সরকারি বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলোর জন্য অর্থ ছাড়ও হবে কঠিন৷
এমন পরিস্থিতে এখনই দেশটিতে বড় বিনিয়োগের দিকে যেতে চাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা৷ সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিবিদ তার্নোন বুনুচ বলছেন, ‘দুর্বল ও স্বল্পস্থায়ী সরকারের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে৷ ফলে ব্যবসা নীতিও এক থাকবে কীনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা৷ এ পরিস্থিতি প্রভাব ফেলবে প্রবৃদ্ধিতেও৷’
২৪ মার্চের নির্বাচনে কোনো পক্ষই এককভাবে নির্বাচিত না হওয়ায় তখন থেকেই উদ্বিগ্ন বিনিোগকারীরা৷ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি বছরের প্রথম চার মাসে কেবল ২.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে৷ ২০১৪ সালের পর থেকে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন৷ পরিস্থিতি জটিল হতে থাকলে তা আরো নীচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা৷ সূত্র: রয়টার্স, এপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: থাইল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ