পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতে ‘চাওয়ালা’ এবং ‘চৌকিদারে’রই বিজয় হলো। পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি নানা বিতর্ককে ছাপিয়ে নিজেকে একজন ‘চাওয়ালা’ হিসেবে ভোটারদের সামনে তুলে ধরে বিজয়ী হয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর ভোটের আগে শাসক পরিচয়ের পরিবর্তে নিজেকে ‘চৌকিদার’ হিসেবে তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন। ভারতের ভোটাররা চাওয়ালা ও চৌকিদারকে ফেরায়নি। তারা তাকেই বেছে নিয়েছে। পাঁচ বছর আগে নির্বাচিত ‘চাওয়ালা’ ক্ষমতায় গিয়ে যে ভারতের সাধারণ মানুষের জন্য ধারণার চেয়েও ভাল কাজ করেছেন, তার প্রতিদান আরও বেশি করে এবারের নির্বাচেনে পেয়েছেন। চাওয়ালা শাসক না হয়ে চৌকিদার হয়ে জনগণের পাশে ছিলেন বলে এবার আরও বেশি ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের আগে মোদি স্লোগান তুলেছিলেন, ‘আব কি বার ৩০০ পার’। তার এ স্লোগানে দেশটির জনগণ সাড়া দিয়েছে। সরকার গঠন করার জন্য যে ২৭২ আসন প্রয়োজন মোদির বিজেপি একাই তা পার করে তিনশ’র উপরে নিয়ে গেছে। পরপর দুইবার ভূমি ধ্বস বিজয়ের মধ্য দিয়ে মোদি ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। ভারতের ইতিহাসে মোদি হচ্ছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দুই বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। এর আগে জওহরলাল নেহরু পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৬৭ ও ১৯৭২ সালে পরপর দুইবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
দুই.
মোদি ও তার দল পরপর দুইবার ক্ষমতায় আসার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে হিসাব-নিকাষ শুরু হয়েছে। এটি ভারতের জন্য ভাল হলো নাকি মন্দ হলো-এ বিশ্লেষণ চলছে। তবে যারা ভারতের সেক্যুলারিজম-এ বিশ্বাসী তারা মোদির এই বিজয়কে মেনে নিতে পারছেন না। এর কারণ, মোদি মূলত ক্ষমতায় এসেছেন উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে। মুখে যতই গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কথা বলুক না কেন, তার নেপথ্যে যে ভারতকে ধর্মভিত্তিক একটি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করা তা সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝতে পারছে। মোদির এই উগ্র হিন্দুইজম ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে আন্দোলিত করেছে। বলা যায়, মোদি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের যে ধর্মবিশ্বাস তাকে পুঁজি করে এবং উস্কে দিয়ে ভোটের মাঠে গোল দিয়েছে। ধর্মই মোদির লক্ষ্য পূরণ করে দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে যদি দেখা যায়, ভারত তার সেক্যুলারিজম হারিয়ে একটি ধর্মভিত্তিক হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অন্যদিকে কংগ্রেস ও তার মিত্রদের যে সেক্যুলার ভারত নীতি, তা জনসাধারণের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল তাও জনগণের কাছে পরিষ্কার ছিল না। তাদের মূল পুঁজি ছিল গান্ধী পরিবারের রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। অর্থাৎ অভিজাত শ্রেণীর নেতৃত্ব নিয়ে মাতামাতি। অন্যদিকে মোদি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস এবং ভারতের দরিদ্র মানুষের কাছে প্রিয় চরিত্র চাওয়ালা এবং ক্ষমতায় গিয়ে নিজেকে সাশক ভাবেননি, চৌকিদার ভেবেছেন-এ বিষয়টি সুচতুরভাবে তুলে ধরেছেন, যা তারা সহজে নিজেদের আপন মানুষ ভেবে কোলে তুলে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, মোদির প্রথম শাসনামলে রেকর্ড বেকারত্ব, নোট বাতিলের ভোগান্তি, ঋণগ্রস্ত কৃষকদের রোকর্ড আত্মহত্যা ও বিক্ষোভ, গরুর পবিত্রতা রক্ষার নামে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনা, রাফায়েল জঙ্গিবিমান কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ ভোটারদের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। এর কারণ ধর্ম। ভোটাররা মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদকেই এগিয়ে রেখেছে। বলা যায়, তার এই ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির ঝড়ে ভারতের সেক্যুলারিজমের ধারক-বাহকরা উড়ে গেছে। একই সাথে ভারতেরও এই চরিত্রের পলেস্তেরা উঠতে শুরু করেছে। অচিরেই তা হিন্দু ধর্মের দ্বারা ডিস্টেম্পারড হবে তা বলা যায়। এর ফলে যা হবে, ভারতের যেসব মুসলমান নাগরিক রয়েছে তারা বিলুপ্তির শিকার হবে। না হয়, নেতৃত্বের কোনো জায়গায়ই তাদের ঠাঁই হবে না। বলা যায়, ভারতীয় মুসলমানরা পরিত্যক্ত হতে চলেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদ ভারতীয় মুসলমানদের কোনঠাসা এবং বিতাড়িত করতে উদ্বুদ্ধ করছে। গত বছর আসামে মুসলমান বাংলা ভাষাভাষীদের বিতাড়নের লক্ষ্যে নাগরিকত্বের তালিকায় নাম থাকা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়ে ৪০ লাখের বেশি মুসলমানকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এবারের নির্বাচনী প্রচারণাও বিজেপির সভাপতি ঘোষণা দিয়েছেন, পাশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী রাজ্যে নাগরিকত্বের তালিকা কার্যক্রম শুরু করা হবে। অর্থাৎ ভারত থেকে মুসলমান বিতাড়নের কাজ বেশ জোরেসোরে চলছে। আর এদের বিতাড়ন করে রোহিঙ্গাদের মতো বাংলাদেশেই পাঠাবে। ২০১৪ সালে বিজেপি যখন চমক জাগিয়ে ক্ষমতায় এলো, তখন অনেকে ভেবেছিলেন এটা একটা ফ্লুক বা হঠাৎ ঘটে যাওয়া বা পচা শামুকে পা কাটা। সময় গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে তারা সেখানের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নার্ভ বুঝতে পারেননি। মোদি ঠিকই বুঝেছেন এবং তাদের নার্ভ বুঝে নিজে যেমন চলেছেন, তাদের মধ্যেও তা ধারণ করিয়ে দিয়েছেন। যে ধর্মেরই হোক সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বাসী মানুষের সাথে শাসক শ্রেণী বা শাসন করতে ইচ্ছুকদের মতের মিল হয়ে গেলে তার বিজয় ঠেকিয়ে রাখা যায় না। মোদি এই কাজটিই করেছেন। ফলে এবার আরও অধিক ভাল ফল করে ক্ষমতায় এসেছেন। তা না হলে, ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ইন্ধনদাতা হিসেবে যে মোদিকে ‘বুচার অব গুজরাট’ বা গুজরাটের কসাই বলা হয়, সেই মোদিকেই কেন ভোটাররা বেছে নেবে? ভারত নিজেকে যত আধুনিক ভাবুক না কেন বা শাইনিং ইন্ডিয়া স্লোগান দিক না কেন, এই আধুনিকতার মধ্যেও তার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মের প্রতি অত্যন্ত দুর্বল। তারা ধর্ম দ্বারা শাসিত হতে চায় এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় এমন এক ব্যক্তি ও দলকেই দেখতে চায়। এতে কে অবাক হলো আর কে গালি দিল তাতে কিছু যায় আসে না। যারা সেক্যুলারিস্ট তারা মানুক বা না মানুক কিংবা তাদের চেঁচামেচিতেও কিছু যায় আসে না। বাস্তবতা হচ্ছে, এই পৃথিবীতে সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বর্জন করা হয়। এটাই স্বাভাবিক। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপরীতে গিয়ে টিকে থাকা যায় না। তবে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা যদি সংখ্যালগিষ্ঠদের সাথে সহাবস্থান বা সহমর্মি হয়ে চলতে চায়, তবে তাই সভ্যতা। যদি এমন হয়, আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ, ক্ষমতা পেয়েছি, কাজেই সংখ্যালগিষ্ঠদের উড়িয়ে দেব, কোথাও তাদের ঠাঁই দেব না-তবে তাতে সভ্যতা বলে কিছু থাকে না। ভারতে এখন দ্বিতীয় ঘটনাটিই ঘটতে যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিজেপি সেখানের মুসলমানদের উৎখাত করতে চাচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। নির্বাচনে পাস করতে না করতেই মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালানো শুরু করেছে। যতই দিন যাবে মুসলমানদের পরিস্থিতি কী হবে, তা বুঝতে বাকি থাকে না।
তিন.
ভারতের সেক্যুলারিজমের যে তত্ত্ব তা মোদির দ্বিতীয়বার বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিলুপ্তির পথ অনেকটাই প্রশস্ত হয়েছে। মোদির যে লক্ষ্য, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করবে, তাই ঘটতে যাচ্ছে। মুসলমানরা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় ১৫%) জনগোষ্ঠী হওয়ায় তাদের ঠিকমতো ছাফছুতরা করতে না পারলে এ লক্ষ্যে কিছুটা দাগ থেকে যাবে। তাই তাদের যেভাবেই হোক স্টেটলেস করা বা বিতাড়িত করা দরকার। তা করতে না পারলে কোনঠাসা করে রাখা, যাতে কেউ বলতে না পারে ভারতে কোনো মুসলমান আছে। আর অন্য যে ধর্মের মানুষ রয়েছে তারা এমনিতেই হিন্দু ধর্মের নিচে ঢাকা পড়ে যাবে। এই লক্ষ্য হাসিল করতে পারলে ভারত একটি পরিপূর্ণ হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হবে এবং তখন একই জনগোষ্ঠী নিয়ে গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন একসঙ্গে করা যাবে। অনেকে হয়তো ভাবতে পারে এ কাজ করা কঠিন হবে। তবে বদলে যাওয়া বিশ্বে যে এখন অনেক অকল্পনীয় ঘটনা অহরহ ঘটছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা বদলে অভাবনীয় অনেক ঘটনা সামনে এসে হাজির হচ্ছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মোদি দেশ শাসন করুক তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে তার হিন্দুত্ববাদের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বিভ্রান্ত করে শাসন করাটা সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মধ্যে অনেকেই মোদির উগ্রহিন্দুত্ববাদকে পছন্দ করে না। অবশ্য যার হাত ধরে ভারতের স্বাধীনতা এসেছে সেই মহাত্মা গান্ধীও হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে তিনি উগ্রতা নয়, একজন সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসী হিসেবে অহিংসবাদ নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মাই লাইফ ইজ ডেডিকেটেড টু সার্ভিস অফ ইন্ডিয়া থ্রু দ্য রেলিজিয়ন অফ ননভায়োলেন্স হুইচ আই বিলিভড টু বি দ্য রুট অফ হিন্দুইজম।’ গান্ধীর এই সরল স্বীকারোক্তিই স্বাভাবিক। তিনি তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে কথা বলেননি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতেই বিশ্বের সিংহভাগ রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। যারা ধর্ম নিরপেক্ষতা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তারা আসলে একটা ফিকিরবাজি ও স্বার্থবাদ থেকেই তা করে থাকেন। তারা এটা বুঝতে চান না, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা, এর অর্থ আমি কোনো ধর্মেরই পক্ষে নই। কোনো বিশ্বাসী মানুষ তা বলতে পারে না। নাস্তিক হলে ভিন্ন কথা। বাস্তবতা হচ্ছে, সারাবিশ্বে ধর্মাশ্রয়ী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তারা বিপদে আপদে সুখে-দুঃখে যার যার পথে সৃষ্টিকর্তারই সাহায্য চায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার প্রথম ভাষণের শেষ দিকে বলেছিলেন, ‘আন্ডার গড উই আর গ্রেট নেশন।’ এখনও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে তাদের মন্ত্রীরা ভাষণ শেষ করেন, ‘গড ব্লেস আমেরিকা।’ অথচ আমাদের দেশে কিন্তু সরকার প্রধান বা মন্ত্রী-এমপিরা তাদের ভাষণ শেষে বলেন না, ‘আল্লাহ বাংলাদেশের মঙ্গল করুণ।’ এর চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ আর কী হতে পারে! আমাদের দেশে যারা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে সোচ্চার এবং ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে মানতেন, তারা এখন কী বলবেন? তারা এখন কিসের উদাহরণ দেবেন? মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদ কারো কারো পছন্দ না হলেও তার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তো তা পছন্দ করেছে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। এটাই বাস্তবতা। আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক সেক্যুলারিস্টের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বাস্তবতার বিষয়টি উপেক্ষার প্রবণতা দেখা যায়। তুমি সংখ্যাগরিষ্ঠ, তুমি সংখ্যালগিষ্ঠ-এ বিষয়টি তারা সুনির্দিষ্ট করে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ ধরনের চিন্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে কখনোই ছিল না। এই সেক্যুলারিস্টরা স¤প্রদায়গত বিষয়টিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জাগিয়ে বিভক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা হাসিল করতে চায়। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে মুসলমানরা, খ্রীস্টানদের দেশ খ্রীস্টানরা, বৌদ্ধদের দেশে বৌদ্ধরা, হিন্দুদের দেশে হিন্দুরা ক্ষমতায় আসবে, প্রাধান্য পাবে-এটাই স্বাভাবিক। ঐসব দেশে তো এ নিয়ে কোন কথা হয় না। উগ্র হিন্দুত্ববাদের ধারক হয়ে মোদি যে ক্ষমতায় এসেছে, এ নিয়ে কি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা অসন্তুষ্ট? বরং তারা বিপুলভাবে মোদিকে জয়ী করে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার রায় দিয়েছে। ইংল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কাজেই বিশ্বের অপরাপর মুসলিম বিশ্বের মতো আমাদের দেশের বাস্তবতা মেনে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া জরুরী। ভৌগোলিকভাবে ছোট হলেও আমাদের জনগোষ্ঠী ছোট নয়। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। দুঃখের বিষয়, তাদের ঐক্যবদ্ধ করার মতো দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের রাজনীতিতে দেখা যায় না। দক্ষ, যোগ্য ও সৎ রাজনীতিক গড়ে তোলার উদ্যোগও নেই। বরং চলমান রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে দেশের তরুণ সমাজ। দেশের শিক্ষিত তরুণ শ্রেণী, যাদের হাতে দেশের ভবিষ্যত, তারা রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেম ও জনসেবার মনোভাবসম্পন্ন রাজনীতিকের অভাব রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
চার.
গভর্ণমেন্ট অফ দ্য পিপল বাই দ্য পিপল ফর দ্য পিপল- আমাদের দেশে এই নীতি এখন অচল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। অবশ্য কেউ কেউ দেশে রাজনীতি আছে, এ কথা এখন মানতে চান না। অনেকে বলেন, রাজনীতি থাকলেও তা একতরফা। এভাবে জতিকে ঐক্যবদ্ধ করা কঠিন। ভারতে যে উগ্র হিন্দুত্ববাদের জয়জয়কার তাতে আমাদের জন্য যথেষ্ট শংকার কারণ রয়েছে। সেখানে মুসলমান বিদ্বেষ ও বিতাড়ন শুরু হলে তার রেশ আমাদের উপর এসে পড়তে পারে। মুসলমানদের ঠেলে আমাদের দিকে দিলে রোহিঙ্গাদের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এতে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ লেগে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে আমাদের জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরী। সেখানের মুসলমানরা যে অত্যন্ত ভয় ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় আছে তা দেশটির দুই মুসলমান শীর্ষ নেতা মোদির কাছে চিঠি লিখে মুসলমানদের খুন হওয়া অটকানো এবং তাদেরকে নির্ভয়ে শান্তিতে বসবাস করতে দেয়ার আহ্বান জানান। নির্বাচনের পর বিজেপি কর্তৃক মুসলমানদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তারা এ আহ্বান জানিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, মোদি জাতি ও ধর্মের ভেদাভেদ হবে না বললেও তার এ কথায় তার দলের উগ্র সমর্থকরা তা কানে তুলছে না। তারা মুসলমান নিধনে অত্যাচার, নির্যাতন, খুন চালিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে আশংকার বিষয় হচ্ছে, যতই দিন যাবে এ নির্যাতনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বিজেপি সভাপতির ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে নাগরিকত্বের তালিকা করার ছুতায় মুসলমান উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বিজেপি যে তা করবে তাতে সন্দেহ নেই। এখানেই বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত রয়েছে। ভারতীয় মুসলমানদের যদি বাংলাদেশি মুসলমান বলে ঠেলে দেয় তবে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ সরকারের একার পক্ষে তা মোকাবেলা করাও সম্ভব হবে না। এজন্য বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং করতে হবে। গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজেপির পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হবে না। আমরা আশা করব, সরকার এ ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক থাকবে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগী হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।