Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৪ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন, ৩০ হাজার অবৈধ সংযোগ

সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ৩:০৪ পিএম

সরকারী নির্দেশনাযায়ী তিন বছর গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিদিনই নতুন গ্যাস সংযোগ হচ্ছে। মাইলের পর মাইল নতুন লাইন বসানো হচ্ছে। গ্যাস বিতরনকারী কর্তৃপক্ষ বাখরাবাদ অসহায় হয়ে পড়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী সিন্ডিকেটের দৌরাত্বের কাছে। নাজেহাল হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। অফিস এমনকি বাসায় গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমিক দেয়া হয়েছে কাউকে কাউকে। নানা ভয়ভীতির কারনে ঠুটো জগন্নাথ হয়ে পড়েছে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস বিতরণকারী এই প্রতিষ্ঠানটি । এতে অবৈধ সংযোগের স্বর্গ হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া । বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৩ হাজার ৯৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ২৩টি অবৈধ গ্যাস লাইন চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে ৫ হাজার। কিন্তু অফিসের অন্য সুত্র মতে, অবৈধ সংযোগ সংখ্যা ৩০ হাজার। একদিকে কর্তৃপক্ষ অবৈধ লাইন চিহ্নিত করছে অন্যদিকে মাইলের পর মাইল নতুন লাইন বসিয়ে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ ৩০ হাজার হয়ে থাকলে সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারাচ্ছে ২কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই সংযোগ বৈধভাবে হলে সিকিউরিটি মানি হিসেবে প্রতিটি সংযোগ থেকে আসতো ১৬’শ টাকা। ৩০ হাজার সংযোগে সিকিউরিটি মানি হিসেবে ৪কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
২০১১ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস বিতরনকারী কর্তৃপক্ষ ছিলো তিতাস। বাখরাবাদ দায়িত্ব নেয়ার সময় আবাসিক গ্রাহক ছিলো ১৪ হাজার। পরে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত আরো ৮ হাজার সংযোগ দেয় বাখরাবাদ। বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ২২হাজার। কিন্তু এই সময়ে বাখরাবাদ নতুন কোন নেটওয়ার্ক করেনি বলেই জানান কর্মকর্তারা। বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর এবং শহর থেকে দক্ষিন দিকে রামরাইল পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এবং শহর বাইপাস সড়কের দু’পাশে সর্বোচ্চ এক কিলোমিটার পর্যন্ত বাখরাবাদের গ্যাস নেটওয়ার্ক (সম্প্রসারন লাইন) আছে বলে জানান তারা। অবৈধভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার পথের দু’পাশে এবং দক্ষিন দিকে রামরাইল পর্যন্ত যতোগ্রাম আছে সবখানেই গ্যাসের লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে। গ্রামের পর গ্রামে স্থাপিত হয়েছে গ্যাসের অবৈধ নেটওয়ার্ক (সম্প্রসারন লাইন)। এই সম্প্রসারন লাইন থেকে শতশত বাড়িঘরে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে। বাখরাবাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্যাস বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ এপর্যন্ত সুহিলপুরের কলামুড়ি কবরস্থান থেকে তাজুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত ৪ হাজার ফুট, ঘাটুরা মামুন মোল্লার বাড়ি এলাকায় ৩ হাজার ফুট, দারমা ও নন্দনপুরে ৪ হাজার ফুট, কোনাহাটি-মাইঝহাটি জড়জড়িয়া পাড়া ও মালিহাতায় ৫হাজার ফুট, রামরাইল থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, সুহিলপুরের হাড়িয়ায় ৪ হাজার ফুট, তেলীপাড়ায় ৭ হাজার ফুট, গৌতমপাড়া কাঠবাড়িয়া দীলিপদাশের বাড়ি এলাকায় ৬ হাজার ফুট, এছাড়া সুহিলপুর তেলীহাটি, হিন্দুপাড়া, গৌতমপাড়া, কেন্দুবাড়ি এলাকায় প্রায় ৮ হাজার ফুট, রাজঘর, নাটাই, ভাটপাড়া ও আমতলীতে ৬ হাজার ফুট, রামরাইলের ভোলাচংয়ে ৩ হাজার ফুট, বুধলগ্রামে ৬ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন চিহ্নিত করেছে। এছাড়া বুধলবাজার থেকে তৈয়ব চেয়ারম্যানের বাড়ি পর্যন্ত, শালগাঁও-কালীসীমায় গ্রামে হাজার হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী অবৈধ লাইন বসানো হয়েছে সুহিলপুরে। এরপর বুধল ইউনিয়নে। সেখানে অবৈধ ভাবে সম্প্রসারন করা গ্যাস লাইন থেকে হাজারের মতো সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। এছাড়া নাটাই ইউনিয়নের আমতলী, রাজঘর ও ভাটপাড়াতে ৩’শ ও বুধলের মালিহাতা প্রায় দেড়শো অবৈধ সংযোগ রয়েছে। খাটিহাতা ঈদগাহ রোড এবং খাটিহাতা গ্রামে ২ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন বসিয়ে দেড়শোর মতো অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিখাতা গ্রামে। প্রায় প্রতিদিনই সংযোগ দেয়া হচ্ছে কোন কোন স্থানে।
বাখরাবাদের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চক্রটি অফিসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এরা অনেক শক্তিশালী। তারা পাইপ আনছে, লাইন বসাচ্ছে, রাইজার উঠাচ্ছে। বিল বই দিচ্ছে। সবই করছে। প্রশাসনও শঙ্কিত। তিনি জানান, গত মাসের ১০ তারিখে ৫০/৬০ হজার খরচ করে অবৈধ লাইন অপসারনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। অভিযানের দিন সদর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাকে ফোন করলে আসতে পারবেননা বলে জানান। বার বার জেলা প্রশাসকের সহায়তা চাইছি। কোম্পানীর এমডিকে দিয়ে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করাচ্ছি ম্যাজিষ্ট্রেট দেয়ার জন্যে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ গ্যাস

২৪ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ