Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গ্যাস চুরি থামছে না

৩১ ডিসেম্বর অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের টার্গেট

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের সকল অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে এ কার্যক্রম শুরুও করে দিয়েছে গ্যাস বিতরণ সংস্থাগুলো। অবৈধ গ্যাস সংযোগ ২৬৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন এবং ৬৩ হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত গ্যাস চুরি হচ্ছে। যা ঠেকাতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষ বলে জানাগেছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ গঠিত অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এক বৈঠকে চলতি মাসের মধ্যেই সব অবৈধ গ্যাসের লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে সরকার আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে আবার দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। স¤প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে দ্রæত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। পাশাপাশি নতুন লাইন প্রতিস্থাপনে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিতরণ সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে বলা হয়েছে। রাজধানীর গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থাকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, জরাজীর্ণ পাইপলাইনে জোড়াতালি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে গ্যাস সরবরাহ। তার সঙ্গে যুক্ত আছে অবৈধ সংযোগ। অন্যদিকে গ্যাস লাইনের ক্ষতি হচ্ছে বছরজুড়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতেও। আর এসব কারণেই প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে যে সংখ্যক অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে তার এক তৃতীয়াংশই গ্যাসের পাইপ লাইনের লিকেজ থেকে। গত বছরে সংঘটিত এক হাজার অগ্নিকান্ডের জন্য গ্যাসকে দায়ী করেছে সংস্থাটি। সারাদেশে ছয়টি সরকারি কোম্পানি গ্যাস বিতরণ করে থাকে। তিতাস, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল, জালালাবাদ, বাখরাবাদ এবং সুন্দরবন এই ছয় প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ৩৮ লাখ। তাদের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে মোট ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭ জন গ্রাহক রয়েছে তিতাসের। তিতাসসহ বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৭৫টি অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে চলতি মাসের গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আড়াই লাখ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এ সময় ৩৪৪ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগের পাইপ লাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে এখনও এ ধরনের ২৬৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে।যা দিয়ে নিয়মিত গ্যাস চুরি হচ্ছে। আর ৬৩ হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। গ্যাস বিতরণ সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে বড় তিতাসের আওতায় রয়েছে ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন। এরমধ্যে ঢাকায় সাত হাজার কিলোমিটার রয়েছে। সাত হাজার কিলোমিটার লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরেও ১ হাজার ৬২২টি লিকেজ চিহ্নিত করেছে তিতাস। এরমধ্যে ৭৮১ টি সংস্কার করা হয়েছে। লিকেজ দেখা দিলে তা সারাই করে চলছে দিনের পর দিন। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগের কারণে দুর্ঘটনা আরো বাড়ছে। বর্তমানে তিতাসের দুইশ কিলোমিটারের বেশি লাইন অবৈধ রয়েছে। গ্যাসের বর্তমানে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকায় অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে।

রাজধানী ঢাকার থেকেও আশেপাশের শহরগুলোতে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। আবাসিক ও কারখানা দুইপর্যায়ে থাকা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিকের নামে মামলা করেছে তিতাস। নারায়নগঞ্জে ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী মো. জহিরুল ইসলাম একাই শতাধিক অবৈধ সংযোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এবার সিস্টেমলস কমানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে দেশের সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিতরণ সংস্থাগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেভ নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছরই অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে এবার অনেকটা শক্তভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস বিতরণ করা হয়েছে, সেখানে তার ছয় ভাগের মতো সিস্টেমলস রয়েছে। দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে সরকার প্রতিদিন ৬শ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করছে। বেশি মূল্যে আমদানি করা এলএনজির খরচ তুলতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এর চাপ পড়ছে গ্রাহকদের ওপরে। অন্যদিকে অবৈধ সংযোগের কারণে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। এ কারণেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।



 

Show all comments
  • হারুন ভুঁঞা ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:৫৯ এএম says : 0
    গ্যাস চুরির সাথে অফিসের লোকজন জড়িত।সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে সরকারের প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকার গ্যাস অপচয় রোধ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ গ্যাস সংযোগ

২৪ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ