Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজেপির বিজয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশিদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কট্টর হিন্দুবাদী দল বিজেপির দ্বিতীয়বারের মত নিরঙ্কুশ বিজয় উত্তাপ ছড়িয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশিদের মাঝে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে- এমন খবর আসার পর থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে চলছে নানা মন্তব্য-বিশ্লেষণ। আবার কেউ কেউ অভিনন্দন জানিয়ে নতুন সরকার বাংলাদেশের স্বার্থে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।

বিজেপি পুনরায় বিজয় অর্জন করায় ফেসবুকে এক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘‘মোদীর পুনরায় বিশাল বিজয় অনেককিছু প্রমান করে। তার একটি হচ্ছে ভারত এখন প্রায় চুড়ান্তভাবে একটি সাম্প্রদায়িক ও উগ্র রাষ্ট্র। প্রতিবেশীদের অসাম্প্রদায়িক থাকার চেষ্টাকে তাহলে এরা কিভাবে উৎসাহিত করবে? কিভাবে এমনকি তা দাবী করবে? আমার আশংকা, উপমহাদেশের রাজনীতি আরো কলুষিত, সংঘাতময় ও জটিল হতে পারে বিজেপির বিজয়ে। ফারুক হোসেন ভুল ভারত মুখে পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি কামনা করলেও, বাস্তবে নিজেরা হচ্ছেন উগ্র সাম্প্রদায়িক সাম্রাজ্যবাদী!! বর্তমান নির্বাচনে আবারও তা প্রমাণিত হয়েছে!’’

হাফিজ এনামুল লিখেছেন, ‘‘হেরে গেছে মানবতা জিতে গেছে সাম্প্রদায়িকতা, ভোট হয়েছে ধর্মের নামে।’’ ফেসবুকে মো. দেওয়ান মন্তব্য করেছেন, ‘‘ভারতীয় জনগণ একটি উগ্রবাদী দলকে ভোটে জয় পাইয়ে দিয়ে অত্যন্ত ভুল করলো, যার খেসারত সবাই ভোগ করবে, সাধারন মানুষ হবে হতাশ!’’

মোদির বিজয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এস নিশান লিখেছেন, ‘‘মানবিক ও নৈতিকতার দিক থেকে ভারত কে ধংস্ব করতে মোদি একাই যথেষ্ট। ভারত ধংস্ব অনিবার্য।’’

‘‘ভারত এখনো অন্ধকারে থেকে গেল এক কট্টর হিন্দুকে জিতিয়ে দিয়ে হেরে গেছে মানবতা জিতে গেছে সাম্প্রদায়িকতা, ভোট হয়েছে ধর্মের নামে’’ লিখেছেন ফেরদৌস।

তবে নরেন্দ্র মোদির কাছে দ্বিতীয় মেয়াদে ইতিবাচক ভূমিকা আশা করেছেন বাংলাদেশি যুবক আব্দুস সোবহান। তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দেশ। সেখানে বিভিন্ন জাতি যুগ যুগ দরে বসবাস করে আসতেছে। নরেন্দ্র মোদি সকল নাগরিকদের সমান ভাবে দেখবেন এটাই কাম্য। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারত কে ভুমিকা রাখতে হবে।’’

এদিকে, ভারতীয় মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়, বিজেপির আবারও পাঁচ বছর মেয়াদে ক্ষমতায় আসা নিয়ে আতঙ্কিত দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানরা। আজ বৃহস্পতিবার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকো খবরটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে বেশ উত্তাপ ছড়ায় যা নিয়ে নানাজন করছে নানা মন্তব্য।

এপ্রসঙ্গে রিয়াদ হাসান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, ‘‘আমার মতে, মুসলিম রা আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পায় না। মোদী এমন সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ডে মদদ দিলে তা ৯০ কোটি ভোটারের জন্য হবে অপমানজনক বিষয়। নিশ্চই কোনো সভ্য জাতি একাজ করবে না যদি সভ্য হয়ে থাকে।’’

মোদির বিজয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ফেসবুক ব্যবহারকারী নুরনবী সাকিব লিখেছেন, ‘‘..এই বিজয় শুধু ভারতের নয় এই অঞ্চলের রাজনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে ভীতিকর হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বাম ভোট বিজেপি পেয়েছে। আমি দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছি এই অঞ্চলের বাম রাজনীতি মুলত প্রচ্ছন্ন হিন্দুত্ববাদ; এই অনুমান পশ্চিমবঙ্গ আরো স্পস্ট করেছে।
এই অঞ্চলের সামনের দিনগুলো রাজনৈতিকভাবে হবে আরো কঠিন এবং ভয়ংকর।’’

এদিকে, মোহাম্মাদ ফিরোজের আশঙ্কা, ‘‘কলকাতা এবং আসাম থেকে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের পুশ ব্যাক করা হবে, আর আমরা রোহিঙ্গাদের মত একটা এলাকা ছেড়ে দিবো, এটাই প্রত্যাশা।’’

তবে বিজেপির বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশের প্রাইমারি স্কুলশিক্ষিকা সেলিনা বেগম লিখেছেন, ‘‘অভিনন্দন! বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে টানা ২য় বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় বিশ্ব মানবতার জননী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও লাল গোলাপ শুভেচ্ছা!’’

‘‘পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন। আশাকরি এবার তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন হবে এবং সেই সাথে আশাকরি সীমান্ত দিয়ে আর একটা গরুও বাংলাদেশে ঢুকবে না’’ আশা মাসুম রেজার।

এসআর সোহেল রেহান লিখেছেন, ‘‘ভারতের যেই প্রধানমন্ত্রী হোক, বাংলাদেশের কোন লাভ নেই, বাংলাদেশকে যেমন চোষা চুষতেছে, যেই সরকারী আসুক, তারা সারাজিবন এমনি চুষেই যাবে,, তাই কে পাশ করলো, আর কে ফেল করলো এই নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই,,,,বাংলাদেশের জন্য, যেই লাউ সেই কদু।’’

‘‘নরেন্দ্র মোদীর বিজয় প্রমাণ করল, ভারতের হিন্দুরা সত্যিকারের হিন্দু। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের বিজয় প্রমাণ করে বাংলাদেশের মুসলমানেরা মিথ্যাবাদী মুসলিম। কারণ ৯০% মুসলিম হয়েও ইসলামপন্থী সরকার গঠন করতে পারলি না। নিজেদের আর মুসলমান বলিস না’’ লিখেছেন শাহ হুসাইন আলবানী।

ফেসবুক ব্যবহারকারী আল আমিন খান লিখেছেন, ‘‘সাম্প্রদায়ীক একটা দলের উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। পৃথিবীর সর্বনিকৃষ্ট একটা উগ্র দল শাসন করবে মোঘল সাম্ররাজ্যের গড়া এই সভ্য ভারত! ভাবতেই ভারতের জনগনের প্রতি করুনা হয়। বাংলাদেশি হিসেবে কোন প্রত্যাশা নেই। আমাদের কাছে ভারতের যেসব নিঃশর্ত প্রত্যাশা আছে তা পূরনের জন্য আমাদের সরকার উদার হস্তে বসে আছে।’’#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোশ্যাল মিডিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ