মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চীনের যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা এখন মার্কিন নৌ বাহিনীর চেয়ে বেশি। অনানুষ্ঠানিক ভাবে চীনা নৌ বাহিনী নামে পরিচিত পিপল’স লিবারেশন আর্মি নেভির (পিএলএএন) যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা সম্প্রতি রেকর্ড সংখ্যা ৩০০ স্পর্শ করেছে। এ সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যার চেয়ে ১৩টি বেশি।
সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে সেটাই সব নয়। জাহাজ বাই জাহাজ ভিত্তিতে আমেরিকার নৌ বহর অনেক বড়। মার্কিন নৌ বহরে রয়েছে পরমাণু শক্তি চালিত ১১টি বিমানবাহী জাহাজ ও প্রায় সমসংখ্যক উভচর আক্রমণকারী জাহাজ।
দি সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসএইএস)-এর চায়না পাওয়ার প্রকল্প পিএলএএন বনাম বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দেশ ও বড় শক্তিগুলোর একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ৩০০ যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে চীনের পিএলএএন হচ্ছে বিশে^র বৃহত্তম নৌ বাহিনী যাতে রয়েছে বিমানবাহী জাহাজ, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, করভেট, সাবমেরিন ও উভচর আক্রমণকারী জাহাজ।
যুক্তরাষ্ট্র ২৮৭টি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। ৮৭টি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে রাশিয়া তৃতীয়, ৭৫টি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে যুক্তরাজ্য চতুর্থ স্থানে এবং ৪৮টি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। সিএসআইএস-এর মতে, জার্মানি, ভারত, স্পেন ও যুক্তরাজ্যের সম্মিলিত যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যার চেয়েও চীনের যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা বেশি।
চীনের নৌ বাহিনীতে রয়েছে ২৩টি ডেস্ট্রয়ার, ৫৯টি ফ্রিগেট, ৩৭টি করভেট অর্থাৎ পানির উপরি ভাগের যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা ১১৯টি। আর পানির নীচে রয়েছে ৭৬টি সাবমেরিন যার মধ্যে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন, পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন ও ডিজেল ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিন আছে।
চীনা নৌ বাহিনীর প্রধান অংশই হচ্ছে সারফেস শিপ বা পানির উপরের যুদ্ধ জাহাজ। এর অনেকগুলোই দূর পাল্লার উপযোগী বা অভিযান যোগ্য নয়। উদাহরণ স্বরূপ, জিংদাও-ক্লাস টাইপ ০৫৬ করভেটগুলো ছোট, হালকা অস্ত্রসজ্জিত জাহাজ যা পতাকা প্রদর্শন ও চীনের উপক‚লে বা কাছাকাছি এলাকাগুলোতে সাবমেরিন সন্ধানের কাজেই শুধু ব্যবহার যোগ্য।
পরের যুদ্ধ জাহাজ হিসেবে রয়েছে জিয়াংকাই-২ ক্লাস টাইপ ০৫৪এ ফ্রিগেট। এগুলো সামান্য বড়, কিন্তু বিমানবাহী জাহাজ ব্যাটলগ্রুপের প্রতিরক্ষায় বা দূর পাল্লার আঘাত হানতে তা সক্ষম নয়। এ দুই ধরনের যুদ্ধ জাহাজই চীনা নৌবহরের এক তৃতীয়াংশ।
চীনের নৌ বাহিনীর ক্ষেত্রে সমস্যা কী? দূর পাল্লার নৌ অভিযান পরিচালনায় কোনো নৌ বাহিনীর অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন হচ্ছে বড় ধরনের শক্তি প্রদর্শনী প্ল্যাটফর্ম। চীনের মাত্র একটি বিমানবাহী জাহাজ আছে, হেলিকপ্টার এবং এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক হামলাকারী বিমান বহনে সক্ষম কোনো উভচর আক্রমণকারী জাহাজ নেই। তার নেই ডেস্ট্রয়ারের চেয়ে বড় কোনো ক্রুজার। বিমানবাহী জাহাজ বা উভচর জাহাজকে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন নৌ বাহিনীতে যে রকম জাহাজ রয়েছে, তাও চীনের নেই।
যদিও মার্কিন নৌ বাহিনীতে চীনের চেয়ে ১৩টি যুদ্ধ জাহাজ কম আছে। কিন্তু সার্বিক টনেজের দিক থেকে চীনা নৌ বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পিছিয়ে আছে। আমেরিকার নৌ বাহিনী ওজনের দিক দিয়ে চীনের চেয়ে ৩০ লাখ টন বেশি এগিয়ে যা তাদের জন্য এক বিশাল সুবিধা। মার্কিন যুদ্ধ জাহাজগুলো গড়ে চীনা জাহাজগুলোর চেয়ে বহু গুণে বড় যা সেগুলোকে নির্ধারিত মিশনে দায়িত্ব পালনে অনেক বেশি যোগ্য করেছে ও দেশ থেকে বহদূরে সমুদ্র যাত্রার সক্ষমতা দিয়েছে।
মার্কিন নৌ বাহিনীর এগিয়ে থাকার একটি বড় কারণ হল ১১টি পরমাণু শক্তি চালিত বিমানবাহী জাহাজ। এগুলোর প্রতিটির ওজন প্যায় এক লাখ টন যা মার্কিন নৌ বাহিনীকে ১০ লাখ টন প্লাস সুবিধা দিয়েছে। এরপর রয়েছে ওয়াস্প ও আমেরিকা ক্লাস উভচর আক্রমণকারী জাহাজ। প্রতিটি ৪০ হাজার টনের এ রকম জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের আছে ১০টি। মার্কিন নৌ বাহিনীর রয়েছে ২২টি গাইডেড মিসাইল ক্রুজার, চীনের একটিও নেই। নৌ বাহিনীর গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ারগুলো চীনের এ ধরনের ডেস্ট্রয়ারগুলোর চেয়ে বড় ও অস্ত্রশস্ত্রে অনেক বেশি শক্তিশালী।
চীনের যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটা হচ্ছে একটি সুপারচার্জড অর্থনীতির ফল যা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তার প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার অনুমোদন দিয়েছে। তা এখনো শেষ হয়নি। চীন ২০১৬ সালে ১৮টি যুদ্ধ জাহাজ ও ২০১৭ সালে ১৪টি যুদ্ধ জাহাজ চালু করে (যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালে ৫টি এবং ২০১৭ সালে ৮টি যুদ্ধ জাহাজ চালু করে।)
চীন তার দ্বিতীয় বিমানবাহী জাহাজ টাইপ ০০২ নির্মাণের পর তাতে ফিনিশিং টাচ দিচ্ছে। সে আরো ২টি টাইপ ০০৩ উন্নত বিমানবাহী জাহাজ নির্মাণ করছে। ওয়াসপ ও আমেরিকা ক্লাসের ন্যায় কমপক্ষে একটি টাইপ ০৭৫ উভচর আক্রমণকারী জাহাজ নির্মাণের কাজ চলছে। সর্বশেষ চীন কমপক্ষে ৪টি রেনহাই-ক্লাস ০৫৫ যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ করছে যেগুলোকে পেন্টাগন গাইডেড মিসাইল ক্রুজার বলে শ্রেণিকৃত করেছে। চীন শুধু তার যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যাই বাড়াচ্ছে না, বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম যুদ্ধ জাহাজও যোগ করতে যাচ্ছে যা মার্কিন নৌ বাহিনীকে বিপুল সুবিধা দিয়েছে।
মার্কিন ও চীনা নৌ বাহিনীর তুলনা করা আপেল ও কমলার মধ্যে তুলনা করার মত। তবে চীন আপেল তৈরিও শুরু করেছে। বর্তমান যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ অব্যাহত থাকলে দেশটি অল্প কয়েক দশকের মধ্যেই মার্কিন নৌ বাহিনীর সমান হবে।
চীনের জনসংখ্যার বয়স ও অর্থনীতির ধীর গতির প্রেক্ষাপটে চীনা সামরিক বাহিনী ২০৩০ সাল নাগাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশটি আরো ১৫৪টি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ করবে। চীন কী ধরনের যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ করে এবং তার নৌ বহরের আকার শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়, সেটাই প্রশান্ত মহাসাগরে শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণ করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।