Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মোদি আতঙ্কে ভারতীয় মুসলিমরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মাগরিবের নামাজের পর অবসরপ্রাপ্ত ছয় মুসলিম শিক্ষাবিদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য পুনঃনির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন। ইসলামি পাÐিত্য ও কবিদের জন্য বিখ্যাত উত্তরাঞ্চলীয় নগরী আজমগড়ের মহিউদ্দিন আজাদ এএফপিকে বলেন, আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হতে মাত্র এক ধাপ দূরে আছি। উত্তর প্রদেশের আরবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আজাদ বলেন, মোদি আবার ক্ষমতায় এলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। তার কথার সুর ধরে রসায়নের সাবেক অধ্যাপক হাসান খালিদ আজমি বলেন, প্রথম মেয়াদ ছিল মহড়া। তারা ক্ষমতায় ফিরলে অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রæততার সাথে করবে। মোদির বিজেপির উৎপত্তি হিন্দুত্ববাদী দল আরএসএস থেকে। তারা ভারতকে পুরোপুরি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
অন্যদিকে ভারতে বাস করে ১৯ কোটি মুসলমান। এ দিক থেকে ভারত হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। তবে ১৩০ কোটি জনঅধ্যুষিত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ভারত সরকারিভাবে সেক্যুলার দেশ। মোদি যখন ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এলেন, তখন অনেক মুসলিম হুমকি অনুভব করে। অনেক নগরীর মুসলিম নাম বদলে ফেলা হয়, ভারতে মুসলিম অবদান খাটো করে দেখা হতে থাকে।
তথাকথিত গোরক্ষকদের হাতে অনেক মুসলিম প্রাণ হারায়। এছাড়া অন্যান্য বিদ্বেষের শিকারও হয় মুসলিমেরা। মুসলমানেরা নিজেদের আলাদা কোনো দল গঠনের ইচ্ছা লালন করত না। তাদের মনে হতো, বিদ্যামান দলগুলোই তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমান পার্লামেন্টে ৫৪৫ জন এমপির মধ্যে মুসলিম হলো ২৪ জন। তাদের কেউ বিজেপির নয়। ১৯৪৭ সালের পর এবারই পার্লামেন্টে মুসলিম সংখ্যা সবচেয়ে কম। সর্বোচ্চ ৪৯ জন ছিল ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে। চলতি নির্বাচনে মোদির বিজেপি সাতজন মুসলিমপ্রার্থী মনোনীত করেছে। ২০১৪ সালেও ছিল একই সংখ্যক। তবে তাদের কেউ জয়ী হয়নি। আর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে ৩০ জন। উত্তর প্রদেশে ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিজেপি একজন মুসলিমকেও প্রার্থী করেনি। অথচ প্রদেশটির ২০ কোটি লোকের মধ্যে প্রতি ৫ জনে একজন মুসলিম। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মুসলিমবিরোধী বাগাড়ম্বড়তার জন্য কুখ্যাত। অনেকে তাকে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করে।
তবে কেবল বিজেপিই নয়। সমালোচকেরা বলছেন, কংগ্রেস ও অন্যান্য দলও ‘নমনীয় হিন্দুত্ববাদী’ নীতি গ্রহণ করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সমর্থন পাওয়ার জন্য। তারা মুসলিমদেরকে নির্বাচনী বোঝা মনে করছে।
বর্তমান নির্বাচনী প্রচারণায় নিজেকে নিবেদিতপ্রাণ হিন্দু হিসেবে দেখানোর জন্য কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী হিন্দু মন্দিরে পূজা দিচ্ছেন। শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র নেতৃত্ব না থাকায় মুসলিম স¤প্রদায়ের সমস্যাবলী জটিল হচ্ছে।
ভারতের সবচেয়ে পরিচিত মুসলিম এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি (অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তিহাদুল মুসলিমিন পার্টির নেতা) বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে মুসলিমরা কোনো নেতা পায়নি। তিনি দিল্লিতে তার বাড়িতে এএফপিকে বলেন, তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়েও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ভারতীয় গণতন্ত্রের সফলতা নির্ভর করছে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ওপর, সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতন্ত্রের ওপর নয়।
আজমগড়ের ইসলামি পÐিত সারভার আহমদ বলেন, রাজনৈতিক প্রান্তিকরণ উপর্যুপরি সরকারগুলোর আমলে ধীরে ধীরে ঘটেছে। তিনি এএফপিকে বলেন, আমাদেরকে সন্তান জন্মদানকারী, সন্ত্রাসী, উইপোকা, অদেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
আজমগড়ের সাড়ে চার লাখ লোকের ১৫ ভাগ মুসলিম। মুসলিম শিক্ষায় শিবলি কলেজের খ্যাতি অনেক দিনের। তবে ২০০০-এর দশক থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি মুসলিম জঙ্গিদের আস্তানা বলে সমালোচনা হচ্ছে। সূত্র : এসএএম ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোদি

২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ