চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আল্লাহ তায়ালা জুমার দিনকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। দিয়েছেন শ্রেষ্ঠদিনের মর্যাদা। এটি এমন একটি দিন, যাকে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দিনের নামে একটি সূরার নামকরণও করা হয়েছে। পুরো সপ্তাহে যে দিনের মতো আর কোনো দিন নেই। সম্মান ও মর্যাদায় পূর্ণ একটি দিন এটি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সূর্য ওঠা দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন।’ (মুসলিম)। জুমার শপথ করে আল্লাহ বলেন, ‘এবং শপথ সেই দিনের, যে উপস্থিত হয় এবং যাতে উপস্থিত হয়।’ (সূরা বুরুজ : ৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যে উপস্থিত হয় অর্থ জুমার দিন আর যাতে উপস্থিত হয় অর্থ আরাফার দিন।’ এ জুমার দিনে মহাজগৎ-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি রয়েছে। এ দিনে আল্লাহ আসমান-জমিন সৃষ্টির পূর্ণতা বিধান করেছেন। আল্লাহর এরশাদ, ‘তোমাদের রব তিনি, যিনি আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আরাফ : ৫৪)। ইবনে কাসির (রহ.) এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘এই দিনে অর্থাৎ জুমার দিনে সব সৃষ্টি একত্রিত হয়েছে।’
এ দিনে আদম (আ.) ও তার সন্তান-সন্ততিদের জন্য মর্যাদার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ দিনের রয়েছে স্মরণীয় ঘটনাবলি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এ দিন আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং জান্নাত থেকে তাকে বের করা হয়েছে।’ (মুসলিম)। এর আরেকটি ফজিলত, এ দিনে আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। ইহুদি এক ব্যক্তি ওমর (রা.) কে বলল, হে আমিরুল মোমিনিন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে। যদি তা আমাদের ওপর অবতীর্ণ হতো; তাহলে তাকে আমরা ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, সেটি কোন আয়াত? সে বলল, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সূরা মায়িদা : ৩)। ওমর (রা.) বললেন, ‘এটি নাজিল হওয়া দিনের কথা আমি জানি। যে স্থানে এটি অবতীর্ণ হয়েছে, সেটিও আমি জানি। এটি জুমার দিন রাসুল (সা.) এর ওপর আরাফার ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
জুমার দিনে মর্যাদা বৃদ্ধি ও গোনাহ মাফ হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা থেকে অন্য জুমা মাঝের সব গোনাহকে মাফ করে দেয়; যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গোনাহে লিপ্ত না হয়।’ (মুসলিম)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময়টিতে একজন মুসলমান যে কল্যাণের দোয়া করবে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন।’ (মুসলিম)। আর এটি আসরের একেবারে শেষ সময়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আসরের পরে একবারে শেষ সময়ে দোয়া কর।’ (আবু দাউদ)। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘অধিকাংশ হাদিস জুমার দিন আসরের পরে দোয়া কবুলের আকাঙ্খার প্রমাণ। আর কেয়ামত দিন এক ভয়াবহ দিন। যা এ দিনেই ঘটবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত জুমার দিন সংঘটিত হবে।’ (মুসলিম)। এ দিনে বনি আদম ছাড়া সব সৃষ্টি আতঙ্কে থাকে, না জানি কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীতে জুমার দিন বনি আদম ছাড়া সব প্রাণী কেয়ামত হয়ে যাওয়ার ভয়ে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কান পেতে থাকে।’ (নাসাঈ)।
জুমার দিনের ফজিলত মোমিনের জন্য জান্নাত পর্যন্ত বিস্তৃত। জান্নাতে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো, আল্লাহর দর্শন লাভ। প্রত্যেক জুমায় আল্লাহ তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। আর এটিই হলো জান্নাতে বাড়তি নেয়ামত। আল্লাহর এরশাদ, ‘তারা তথায় যা চাইবে; তাই পাবে এবং আমার কাছে আছে আরও বেশি।’ (সূরা ক্বাফ : ৩৫)। আনাস (রা.) বলেন, ‘তাদের তথা জান্নাতবাসীদের জন্য আল্লাহ প্রত্যেক জুমার দিনে প্রকাশ হবেন।’ এটি সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা অবলম্বনের দিন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের ওপর গোসল আবশ্যক এবং মেসওয়াক ও যথাসম্ভব সুগন্ধি ব্যবহার করা।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
ধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (মুসলিম)।
অন্য সব দিনের মধ্যে জুমার আরও বেশকিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি এ উম্মতের জন্য আল্লাহর অশেষ দান। এটি পরস্পর নেক আমলে প্রতিযোগিতার উন্মুক্ত এক ময়দান। তাই একজন মুসলমানের জন্য দিনটিকে মর্যাদা প্রদান ও একে সৌভাগ্যের দিন হিসেবে প্রহণ করা, ইবাদতের জন্য পুরোপুরি অবসর করা এবং নিজের অন্তরকে সবধরনের গোনাহখাতা থেকে নিরাপদ রাখা উচিত। এবং বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়া উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।