নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কোনো শিরোনামেই কি এই ম্যাচের চিত্র তুলে ধরা সম্ভব?
নির্ধারিত সময় শেষে ইনজুরি সময়ও পেরুতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড বাকি। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষা। ২৩ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার চূড়ান্ত উদযাপনের অপেক্ষায় আমস্টার্ডামের ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনার স্বাগতিক সমর্থকরা। ঠিক এমন সময় তাদের হৃদয়ে বিষাক্ত তীর ছুড়লেন হ্যাটট্রিক হিরো লুকাস মৌরা। নিজেকে বিশ্বাস হচ্ছিল না কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনোর, মাঠের সবুজ গালিচায় নুইয়ে পড়ল। টেলিভিশন ধারাভাষ্যকর ভাব প্রকাশের ভাষা হারিয়ে নিশ্চুপ! অবিশ^াসের মোড়কে মঞ্চস্থ এমনই এক নাটকীয় ম্যাচে আয়াক্সকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে টটেনহাম হটস্পার।
পরশু নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডামে সেমিফাইনালের ফিরতি লেগের রোমাঞ্চকর ম্যাচে আয়াক্সকে ৩-২ গোলে হারায় সফরকারী টটেনহাম। প্রথম লেগে লন্ডন থেকে ১-০ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছিল আয়াক্স। দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-৩। অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে ১ জুন মাদ্রিদের মেত্রপলিতানো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে নিজেদের নাম লিখিয়ে নেয় মাউরিসিও পচেত্তিনোর দল। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রিমিয়ার লিগের আরেক দল লিভারপুল। ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হতে যাচ্ছে অল-ইংলিশ ফাইনাল।
আগের রাতেও ঠিক এমনি এক নাটকীয় ম্যাচে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-০ গোলের ঐতিহাসিক জয়ে দুই লেগ মিলে ৪-৩ গোলে এগিয়ে ফাইনালে ওঠে ইয়ুর্গুন ক্লপের লিভারপুল। মৌসুমটাই যেন ‘অবিশ্বাস্য প্রত্যবর্তনের মৌসুম’।
নকআউট পর্বে রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসকে হারিয়ে ফুটবল ভক্তদের মন জয় করা আয়াক্সের শুরুটা এদিনও ছিল সেই পরিচিত ভঙ্গিমায়। প্রথমার্ধে মাতিয়াস ডি লিট ও হাকিম জিয়াসের গোল টটেনহামের আশা ধুসর করে দেয়। উড়তে থাকা দলটির বিপক্ষে তখন তিন গোলের কঠিন সমীকরণ মেলানোর চ্যালেঞ্জ স্পার্সদের সামনে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জোড়া গোল করে লন্ডনের দলটির আশার সলতে উজ্জ্বল করেন লুকাস মৌরা। আবার তারই শেষ মুহূর্তের গোলে স্বাগতিকদের রূপকথার যাত্রায় যতিচিহ্ন বসে যায়।
কি ছিল না ম্যাচে! আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, দুই গোলেরক্ষকের দুর্দান্ত সব সেভ, বল পোস্টে বাধা পেয়ে সমর্থকদের হতাশা বাড়ানো। রুদ্ধশ্বাস সময় পার করতে হয়েছে সরাসরি এই ম্যাচের সঙ্গে যুক্ত থাকা সকল ফুটবল প্রেমীদের।
ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে তিনটি বাছাইপর্ব পেরিয়ে সেমিফাইনালে উঠে অনন্য কীর্তি গড়া আয়াক্স ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে হেডে দলকে এগিয়ে নেন ডি লিট। ৩৫তম মিনিটে দুসান তাদিচের বাড়ানো বল বাম প্রান্ত থেকে জোরালো উঁচু শটে জালে পাঠিয়ে ব্যবধান ২-০ করেন জিয়াস।
বিরতি থেকে ফিরে ভিন্ন রূপে দেখা দেয় টটেনহাম। ৫৫তম মিনিটে দলীয় পাল্টা আক্রমনে দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন লুকাস মৌরা। চার মিনিট বাদে আবারো গোল করে সফরকারীদের নিভু নিভু আশা উজ্জ্বল করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। আর যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে ডেলে আলির বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে নিচু শটে জয় নিশ্চিত করেন মৌরা। বিষ্ময়মাখা আনন্দের মাতম ওঠে টটেনহাম শিবিরে। মাঠে লুটিয়ে পড়ে স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় ভাষা হারিয়ে ফেলা আয়াক্স খেলোয়াড়রা।
পরাজিত দলের মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াং, আগামী গ্রীষ্মে যিনি বার্সেলোনায় যোগ দেবেন, তিনি দুষছেন দ্বিতীয়ার্ধকে, ‘এ নিয়ে টানা তিন অ্যাওয়ে ম্যাচে আমরা জিতেছি কিন্তু একই সময় নিজেদের মাঠে ব্যর্থ হয়েছি। কারণটা সত্যিই আমি জানি না। আমরা সব সময় হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচে একই খেলা খেলতে চাই। যদি আমরা প্রথমার্ধের পারফর্ম্যান্স ধরে রাখতে পারতাম তাহলে আজকের (পরশু) সন্ধ্যায় আমরাই জিততাম।’ আয়াক্স দলপতি মাথিস ডি লিট বলেন, ‘মনে হচ্ছিল আমাদের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। এটা (ফাইনাল) খুবই নিকটবর্তি ছিল।’
ম্যাচের নায়ক মৌরা নিজেদের উপর থেকে বিশ্বাস না হারানোর গল্প করলেন, ‘আমি সব সময় আমার সতীর্থদের উপর আস্থা রাখি। আমাদের অনেক যোগ্যতা রয়েছে, এমনকি দলের আসল খেলোয়াড়কে ছাড়াই। এটাই আমাদের দল, আমাদের পরিবার।’ হ্যাটট্রিক তারকা রয়েছেন বিষ্ময়ের ঘোরে, ‘ফুটবল আমাদের এমন মুহূর্ত উপহার দেয় যা কখনো আমরা ভাবতেই পারি না।’ ‘এটা আমার জীবনের, ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত।’ ‘আমার অনুভূতি এখন ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।’
বিজয়ী কোচ পচেত্তিনোর মতে এটা তার জন্য ঐতিহাসিক রাত, ‘আমার আবেগ ও অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাত। যেভাবে ম্যাচটা শেষ হলো, যা কিছু ঘটল, প্রথমার্ধ, যেভাবে আমরা খেলার পরিকল্পনা করলাম, তিন মিনিট পর যখন আমরা গোল হজম করার পর যেভাবে পরিকল্পনা ভেঙে পড়ল এবং আমি মনে করি সবকিছুই ছিল দুর্দান্ত।’ সব কৃতিত্ব তিনি দিচ্ছেন শিষ্যদের, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা আমি বলতে চাই তা হলো, আমার খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানানো। আমার কাছে তারা সবাই নায়ক। গত ছয় মাস আমি আপনাদের এটা বলছি। আবারও আমি বাক্যটা পুনরাবৃত্তি করছি।’ ‘ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছে দেওয়াটা অলৌকিক ঘটনার খুব কাছাকাছি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।