পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে বাড়তি ক্ষমতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর আয়কর রিটার্ন এবং ব্যাংক হিসাব তলবের ক্ষমতা চায় দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। তবে বিদ্যমান বাস্তবতায় দুদককে এসব তলবি ক্ষমতা দেয়া হলে তার অপব্যবহার বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, ব্যাংক ও এনবিআরের পক্ষ থেকেও দুদকের এ ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মতে, দুদককে এ ধরনের ক্ষমতা দেয়া হলে করদাতার সংখ্যা কমবে, বিদেশে টাকা পাচার বাড়বে এবং ব্যাংকিং খাত আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুদকের মহাপরিচালক বলছেন, দুর্নীতি কার্যকর ভাবে দমন করার লক্ষ্যে তারা দুদকের আইন সংশোধন করে আয়কর ও ব্যাংক হিসাব তলবের ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই দুদকের প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রনালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে । তবে করদাতা রির্টাণের তথ্য তলবে দুদকের প্রস্তাবটি আয়কর দাতাদের নিরুৎসাহিত করবে এবং আয়কর সংগ্রহের লক্ষমাত্রা বৃদ্ধির উদ্যোগকে ব্যহত করবে বলে এনবিআর’র পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে এখন সারাদেশে আয়কর জরিপ চালাচ্ছে এনবিআর। দুদকের প্রস্তাব পাস হলে আয়কর সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও প্রশাসন গড়ে তোলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক)লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো বিকল্প নাই। তবে সবার আগে দুর্নীতি দমন কমিশনকেই স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন গত এক দশকেও সেই স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারেনি। রাজনৈতিক পক্ষপাতসহ নানা রকম বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে দুদকের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের সবই অমূলক বা রাজনৈতিক ব্লেইম গেম নয়। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, ব্যাংকিং সেক্টরে ঋণ জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, পুঁিজবাজারের কারসাজির মত বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে জাতীয় সংসদে ও গণমাধ্যমে অনেক তথ্য প্রকাশিত হলেও এসব ক্ষেত্রে দুদককে তেমন কোন শক্ত ভ’মিকায় দেখা যায় নি। দুদক প্রভাবশালী মহলের আজ্ঞাবহ হয়ে বিরোধীদলের নেতা ও সমর্থক ব্যবসায়ীদেরই বেশী হয়রানি করছে বলে বিভিন্ন সময় বিরোধীদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আসামীদের সাথে গোপণ যোগাযোগ, আর্থিক লেনদেন এবং গোপণ তথ্য ফাঁসের অভিযোগে সম্প্রতি দুদকের একজন পরিচালক বরখাস্ত হয়েছেন। বরখাস্ত হওয়া উক্ত পরিচালক ছাড়া অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও অনুরূপ দুর্নীতির প্রবণতা নেই বা থাকতে পারে না, এমনটি হলফ করে বলা যাবে না। অর্থাৎ শর্ষের ভেতর ভুতের অবস্থান সম্পর্কে অনেকেই সন্দিহান।
দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো সুখবর নেই। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে খরা কাটছে না। নানামুখী সংকটে ব্যাংকিং খাত দেউলিয়াত্বের কাছাকাছি পৌছে গেছে। বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের ভীতি ও অনাস্থার সংকট দূর করা যাচ্ছে না। এনবিআর ও দুদকের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে অনাস্থা ও ভীতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। বিশেষত দুদকের মামলা ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও হয়রানির অভিযোগ এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্থাটির কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারের প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে নিস্পৃহ থাকলেও বিরোধিদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বেশী আগ্রহ ও তৎপরতার কারণেই এই প্রশ্ন উঠে এসেছে। এ কারণেই বিনিয়োগে মন্দা কাটছে না। ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা দেখা যাচ্ছে না। পরিকল্পিত কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে বার বার টাকা লুটে নিয়ে সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করে দেয়া হলেও প্রকৃত অপরাধীরা অধরাই রয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে দুদকের আইনগত সক্ষমতা বৃদ্ধির দাবী অগ্রাহ্য করা যায় না। তবে বিদ্যমান বাস্তবতায় দুদকের কর্মকান্ডের নমুনা, স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতার উপর দাড়িয়েই কেবল দুদক বাড়তি ক্ষমতা দাবী করতে পারে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে। আয়কর লক্ষমাত্রা অর্জনে এক প্রকার সংশয় দেখা দিয়েছে। এহেন বাস্তবতায় আয়কর রির্টান ও ব্যাংক হিসাব তলবে দুদকের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এর অপব্যবহারের আশঙ্কা অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত হিসেবে গণ্য হচ্ছে। নাজুক অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের প্রয়াসকে ব্যহত করবে, এমন যে কোনো পদক্ষেপ ও উদ্যোগ থেকে সরকার বিরত থাকবে, এটাই সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।