শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
শাহনাজ বেগম
স্থাপত্য-শৈলী ও ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র নাটোরের রাজবাড়ী। বহুকালের ঐতিহ্য ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের কেন্দ্রভূমি হলো নাটোর জেলা। রাজবাড়ির সৌন্দর্য ও ইতিহাস মিলেমিশে আছে এখানে। রাজবাড়িটি এখন ভঙ্গুর হলেও এর বিশাল আঙিনাজুড়ে যত সব বিস্ময় আর রহস্য পাশাপাশি লুকিয়ে রয়েছে। রাজবাড়িটি নাটোরের সদর উপজেলায় অবস্থিত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগনা বানগাছির জমিদার গনেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। পরবর্তীতে দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারটি তার ভাই রামজীবনের নামে এ স্থানটি বন্দোবস্ত নেন। ১২০ একর আয়তনের নাটোর রাজবাড়ি। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ কিংবা মতান্তরে ১৭১০ সালে। এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। ১৭৩০ সালে রামজীবন মারা যান। ১৭৩০ সালে রানী ভবানীর সাথে রাজা রামজীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর রামকান্ত নাটোরের রাজা হয়। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। বগুড়া জেলার ছাতিনা গ্রামের আত্মরামচৌধুরী ও জয়দূর্গা দেবীর প্রথম কন্যা ছিলেন রানী ভবানী। মাতৃকূলের দিক থেকে তিনি ছিলেন উচ্চ বংশীয়। রানী ভবানী ছিলেন খুব সুন্দরী এবং আধ্যাত্মিক গুনের অধিকারী। তার স্বামীর মৃত্যুর পর অর্ধেক বঙ্গে রাজত্ব করেন। তাই তাকে বলা হত অর্ধ বঙ্গেশ্বরী। রাণী ভবানী একটি ঐতিহাসিক চরিত্র। রাণী ভবানী উদারপন্থী, প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন। জমিদার হিসেবে তার উদারতা ও বদান্যতা ছিল প্রণিধানযোগ্য। রানী ভবানীর একটি মাত্র কন্যাসন্তান ছিল, নাম তারা সুন্দরী। ১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যুর পর তার দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ রাজ্যভার গ্রহণ করেন। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর রাজবাড়ী বড় তরফ ও ছোট তরফ এ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
রাণী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত মূল ভবনটিই ‘রাণী ভবানীর রাজবাড়ী’ অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী নাটোর রাজবাড়ি। গোটা রাজবাড়িতে ছোট-বড় ৮টি ভবন, ২টি গভীর পুকুর ও ৫টি ছোট পুকুর আছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রবেশমুখে রয়েছে বিশাল একটি পুকুর, সেই পুকুরের শানবাঁধানো ঘাট দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। জলটুঙ্গি, তারকেশ্বর, গোপীনাথ, আনন্দ, ও মহাল নামে রাজবাড়ীর ছোট পুকুরগুলির নাম। রাজবাড়ি ঘিরে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি। জানা যায় এই বেড়চৌকি রাজবাড়িতে বহিশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করত।
রাজবাড়ি প্রঙ্গণে আটটি মন্দির রয়েছে, যার প্রাণ এক বিশাল শিবমন্দির। এখানে এখনো রীতি মেনে নিয়মিত পূজা হয়। দৃষ্টিনন্দন মন্দিরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। মন্দিরকে ঘিরে আছে একটি শিবমূর্তি, ফণা তোলা সাপের মূর্তি, একজন বাউলের মূর্তিসহ নানা রকম শৈল্পিক কাজ। মন্দিরটির দেয়ালজুড়ে টেরাকোটার শিল্পকর্ম।
হানি কুইন নামে একটা রেস্ট হাউজ, ১টি বৈঠকখানা, মালখানা, রানী ভবাণীর উন্মুক্ত মঞ্চ ও ১টি মৃত্যুকূপ রয়েছে। পুরো রাজবাড়ি ঘিরে আছে বিশাল সব গাছ। রয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। পাশেই নবনির্মিত কমিউনিটি সেন্টার। কমিউনিটি সেন্টার ধরে সামনে গেলে তারকেশ্বর মন্দির। আরেকটু সামনে এগিয়ে ডান দিকে বিশাল মাঠ।
মাঠের বিশাল প্রন্তরে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে রাজবাড়ির একতলা ভবনটি। এই অংশের নাম ছোট তরফ। এর ঠিক উল্টো দিকে বড় তরফ। যমজ প্রায় বড় তরফের সামনে রয়েছে বিশাল পরিখা ও পুকুর। সামান্য দূরেই রাণি মহলটিতে রাণি ভবানী বাস করতেন। এখন রাণি মহল আছে নামমাত্র। শুধু সাইনবোর্ডে লেখা দেখে চেনা যায়। এখানে একটি অতিথিশালা আছে, নাম মাত্র। তবু ভগ্নপ্রায় অতিথিশালা দেখে সে সময়কার নাটোর রাজার অতিথিসেবার কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। চলতি পথে দেখা গেল ছোট তরফের একটি ভবনের নাম হানি কুইন ভবন।
মহারাণী ভবানীর পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে জগদিন্দ্রনাথ ছিলেন স্বনামধন্য রাজা। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র যোগিন্দ্রনাথ বড় তরফের রাজা হন। কিন্তু তিনি করকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। যোগিন্দ্রনাথের দুই পুত্র একে একে রাজ্যভার নিলেও তাদের নিজেদের সন্তান না থাকায় রাজবংশের পরিসমাপ্তি ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।