Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ আর কতদিন পাটের প্রজা হয়ে থাকবে?

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের কথা। তখন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। ভগ্নপ্রায় অর্থনীতি খাড়া করার দায়িত্ব তার ওপর। তিনি নানাদিক দিয়েই হিমশিম খাচ্ছিলেন। স্বাধীনতার আগে পাট ছিল অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। সেই পাটের দশা তখন করুণ। এই প্রেক্ষাপটে এক আলোচনায় তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন, পাটের রাজা আর এখন বাংলাদেশ নয়, পাটের রাজা ভারত। এত স্বল্পতম সময়ে ভারত কীভাবে পাটের রাজা বনে যায়, সেটা অবশ্যই একটা বড় প্রশ্ন। সে সময়ের কথা যাদের স্মরণ আছে, তারা বিলক্ষণ জানেন এবং বলতে পারবেন, কেমন করে পাটের রাজত্ব হাতবদল হয়ে যায়।
তৎকালীন সরকার ঢালাওভাবে সকল কল-কারখানা জাতীয়করণ করে। পাটকলও অনিবার্যভাবে তার মধ্যে ছিল। জাতীয়করণের পর প্রতিটি পাটকলে নতুন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ দেয়া হয়, পরিবর্তন আনা হয় পাট কল-প্রশাসনেও। মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই দায়িত্ব লাভ করেন। তাদের অধিকাংশের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না এবং বেশিরভাগের সততা সম্পর্কে প্রশ্ন ছিল। ফলে প্রতিটি পাটকলে বিশৃংখলা দেখা দেয়, লুটপাটের উৎসব শুরু হয়ে যায় এবং উৎপাদন সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে আসে। অতীতের লাভজনক পাট কলগুলো লোকসান গুনতে বাধ্য হয়। ওদিকে পাটগুদামগুলো একের পর এক রহস্যময় অগ্নিকাÐে ভস্মীভূত হতে থাকে। ওই সময় ভারতে ব্যাপকভাবে পাট পাচারও হয়ে যায়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা পাটকলগুলো সচল হয়ে ওঠে। উৎপাদন অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে যায় এবং পাটকলগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। নতুন নতুন পাটকলও প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেই যে পাটের রাজত্ব ভারতের হাতে চলে যায়, এখনও তা তার হাতেই আছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, অতীতের কোনো সরকারই পাট উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পাটকলগুলো উৎপাদনক্ষম ও লাভজনক করতে যথাযথ নজর দেয়নি। বেসরকারীকরণের প্রক্রিয়ায় কিছু পাটকল বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হলেও সেগুলো লাভজনক হয়নি। নতুন মালিকদের অনেকেই সেগুলো ভালোভাবে চালাননি। প্রথমে বন্ধ এবং পরে জমি ও কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রী করে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে সরকারিভাবে আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেখা ছিল একটি বড় ভুল। বিশ্বের বৃহত্তম এই পাটকল লোকসানের অজুহাতে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বন্ধ করে দেয়া হয়। আদমজী পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারতে আরো নতুন পাটকল গড়ে ওঠে এবং সেখানকার সব পাটকলই হয়ে যায় অত্যন্ত লাভজনক।
স্বাধীনতার আগে দেশে পাটকলের সংখ্যা ছিল ৮৭টি। এগুলো সবই জাতীয়করণ করা হয়। বেসরকারীকরণ ও বন্ধ করে দেয়ার পর পাটকলের সংখ্যা কমে যায়। বর্তমান সরকারের পূর্ববতী মেয়াদকালে কিছু বন্ধ পাটকল চালু করা হয়। সেগুলোর অবস্থাও একই ট চালু আছে। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও জুনের হিসাব মতে, ২৭ হাজার ৭২১ স্থায়ী শ্রমিক এবং ৩ হাজার ৭৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে। এছাড়া তালিকাভুক্ত ২৩ হাজার ২৭৮ জন বদলী শ্রমিক এবং দৈনিকভিত্তিতে ৬ হাজার ৫৪৮ জন শ্রমিক কাজ করে। তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পায় না। তাদের জন্য ২০১৫ সালে নতুন মজুরি স্কেল করা হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। শ্রমিক-কর্মচারীরা রীতিমত মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে তারা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। এসব দাবির মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধ, অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়েটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, বরখাস্তকৃত শ্রমিকদের পুনর্বহাল ছাড়াও রয়েছে পাটখাতে অর্থ বরাদ্দ, পাট মওসুমে পাটকেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং মিলগুলোকে বিএমআরই করা। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতে পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই। দাবী-দাওয়া আদায়ে তাদের কোনো আন্দোলনও করতে হয় না। পাটকলগুলো পূর্ণসময় উৎপাদনশীল থাকা ও লাভজনক হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীরা ঠিকমত বেতনভাতা ও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। ভারতে এটা সম্ভব হলে বাংলাদেশে কেন হচ্ছে না, এ প্রশ্নের জবাব সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ, বিশেষ করে বিজেএমসিকেই দিতে হবে।
বাংলাদেশ সর্বোৎকৃষ্ট পাট উপৎপাদনকারী দেশ। পাট ‘সোনালী আঁশ’ হিসাবে খ্যাত। এক সময় পাট বাণিজ্য অর্থাৎ পাটপণ্যের রফতানিতে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বাংলাদেশের। আগের চেয়ে অনেক কমে গেলেও এখনো বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদিত হয়। এখানে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে পাটকলের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। প্রশ্ন ওঠে, এরপরও বাংলাদেশ পাটের ক্ষেত্রে তার অতীত আধিপত্য পুন:প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না কেন? এই না পারার দায় কি সরকার, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বিজেএমসি, বিকেএমএ এড়িয়ে যেতে পারবে?
উৎপাদিত পার্টের একটা বড় অংশ রফতানি করা হয়। বাকী অংশ পাটকলগুলোতে ব্যবহৃত হয়। পাটকলগুলোতে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী যৎসামান্য রফতানি করা হয়। পাটপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। আর দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। ভারতে পাট উৎপাদন আগের তুলনায় বাড়লেও প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাকে প্রতি বছর প্রচুর কাঁচাপাট আমদানি করতে হয় এবং সেটা বাংলাদেশ থেকেই করতে হয়। বাংলাদেশের পাটের প্রধান ক্রেতা ভারত। বিস্ময়কর মনে হলেও বাস্তবতা এই যে, বাংলাদেশের উন্নতমানের পাট আমদানি করে, বিভিন্ন প্রকারের পাটপণ্য উৎপাদন করে ভারত অভ্যন্তরীণ চাহিদা যেমন সফলভাবে পূরণ করছে তেমনি অতিরিক্ত পাটপণ্য রফতানী করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে। পাটপণ্য রফতানীতে ভারত শীর্ষে। কীভাবে বাংলাদেশ থেকে পাট কিনে ভারত লাভবান হচ্ছে, সে বিষয় সম্প্রতি বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত বাংলাদেশ থেকে পাট কিনে সেটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিদেশে বিক্রী করছে এবং মুনাফা গড়ছে। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের এই চাহিদার প্রতি নজর রেখে ভারত নানা ধরনের পাটের জিনিসপত্র তৈরি ও রফতানী করেছে। এক্ষেত্রে তার রয়েছে স্ট্রং মার্কেটিং সিস্টেম। ফ্রান্সে বসবাসকারী বাংলাদেশী তৃণা খান বিবিসিকে বলেছেন: আমি প্যারিসসহ আশপাশের ছোট শহরগুলোতে মানুষকে পাটের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে দেখেছি। এমন কি ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতেও দেখি আমাদের দেশের পাটের তৈরি কার্পেট। কিন্তু তারা এসব জিনিস কিনেছে ভারত থেকে। কেউ জানেই না যে, বাংলাদেশে পাট উৎপাদন হয়। তৃণা খানের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রশ্ন করা যায়, পাটপণ্যের বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণের কথা তো ছিল বাংলাদেশেরই, সেটা ভারত নিয়ন্ত্রণে নিল কীভাবে, যে কিনা বাংলাদেশ থেকেই কাঁচামাল আমদানি করে? এ প্রশ্নের জবাবে, একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী বলেছেন, ভারত বৈদেশিক চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে এবং সুশৃংখল বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা রফতানি করে। তার মতে, ভারত পাট আমদানি করে সেটা নিজেদের মেশিনে প্রসেস করে পণ্য তৈরি করে এবং বিক্রি করে। তার নিজেরও একটি বড় বাজার রয়েছে। অর্থাৎ তার মার্কেট প্রটেকশনেরও একটা জায়গা আছে। বাংলাদেশের এই শোচনীয় ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের পরিচালক বলেছেন, দক্ষ জনশক্তির অভাব, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা এবং বিপননে দক্ষতা না থাকার কারণে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে।
অত্যন্ত পরিতাপের হলেও বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে সরকার আছে, মন্ত্রণালয় আছে, সরকারি পাটকল সংস্থা আছে, বেসরকারী পাটকল সমিতি আছে, পাট গবেষণা কেন্দ্রসহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে অথচ দক্ষ জনশক্তি গড়ার কেউ নেই, উন্নত প্রযুক্তি আনার কেউ নেই, নেই বিপণনে দক্ষতা বৃদ্ধির কেউ। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? যদি বিশ্বাস করতে হয় তবে এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে, পাটশিল্পের ক্ষেত্রে, পাটশিল্পে নতুন প্রযুক্তি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম অবহেলা প্রদর্শন করা হয়েছে বা হচ্ছে। এবারের জাতীয় পাট দিবস ও দু’দিনের পাটমেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ ও ব্যবহার এবং পাটশিল্পে বিনিয়োগ কীভাবে লাভজনক করা যায় তা নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, বর্তমান সরকার তার দ্বিতীয় মেয়াদ পার করে তৃতীয় মেয়াদ শুরু করেছে। এই এগুলো বছরে তাহলে সরকার কী করেছে? বলা বাহুল্য, আমরা কথাই বড় হওয়ার প্রমাণ রেখেছি, কাজে বড় হওয়ার কোনো নজির স্থাপন করতে পারেনি।
পাটের অমিত সম্ভাবনার কথা কারো অজানা নেই। পরিবেশবন্ধব হওয়ায় পাটপণ্যের চাহিদা বিশ্বে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাট দিয়ে ১৩৭ রকমের পণ্য উৎপাদিত হয় বলে জানা যায়। এর মধ্যে শাড়ি-লুঙ্গীসহ বিভিন্ন পরিধেয় বস্ত্র, জুতা-স্যান্ডেল, কার্পেট, পর্দার কাপড়, ব্যাগ, ওয়ালমেট, শো-পিচ খেলনা ইত্যাদি রয়েছে। বিশ্বের কারশিল্পেও পাটের ব্যবহার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতিক একটি খবরের কথা উল্লেখ করা যায়। ওই খবরে জানা গেছে, ফ্রান্সের একটি কোম্পানী কারের ইন্টেরিয়ারে ব্যবহারযোগ্য উপাদান তৈরির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শুধু ফ্রান্স নয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াতে এর ভালো বাজার রয়েছে। কারের ড্যাসবোর্ড, ডোরপ্যানেলসহ বিভিন্ন অংশ পাট দিয়ে তৈরি হতে পারে এবং হচ্ছে। এজন্য বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক আঁশের চাহিদা রয়েছে বছরে এক লাখ টনের মতো। এর মধ্যে বাংলাদেশে মাত্র ১০-১২ টনের জোগান দেয়। অথচ এ চাহিদার শতভাগই বাংলাদেশ যোগান দিতে পারে, যদি সে চায়।
পাটের মিহিতন্তু ও আবিষ্কারের কথা অনেকেরই জানা আছে। যিনি এই মিহিতন্তুর আবিষ্কর্তা তার সঙ্গে বহুদিন আগে এই লেখকের কথা হয়। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, পাটের মিহিতন্তু দিয়ে বিশ্বের সর্বোকৃষ্ট কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি এও জানিয়েছিলেন, বর্তমানে চালু পাটকলের সামান্য পরিবর্তন সাধন করে এই কাপড় তৈরি করা যেতে পারে। তার আবিষ্কৃত মিহিতন্তু দিয়ে উৎপাদিত কাপড়ের নমুনা নিয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায় থেকেই সাড়া পাননি। অনেক দিন তার দেখা নেই। জানি না তিনি বেঁচে আছেন কি না।
এ কথাও ওয়াকিবহাল মহলের জানা, পাট থেকে কাগজের উৎকৃষ্ট মÐ তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে মÐের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার যদি ১০ শতাংশও বাংলাদেশ পূরণ করতে পারে, তাহলে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলতে পারে। সে ব্যাপারেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। পাটের এই বিভিন্নমুখী সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় যেতে পারে, সেটা কল্পনাও করা যায় না। আমরা চেষ্টা করলে পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারি, পাটের রাজত্ব ফেরৎ আনতে পারি। কিন্তু সে চেষ্টা কি আদৌ আছে?
ক’দিন আগে একটি ইংরেজি দৈনিকে খবর বেরিয়েছে, ভারত থেকে নি¤œমানের পাটবীজ আমদানি করা হচ্ছে। বরাবরই হয়। ভারতীয় নি¤œমানের বীজ আমদানির কারণে বাংলাদেশের পাটের মান দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট পাটের বীজ এখন অনেকটাই দুলর্ভ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি বছরের জন্য পাটবীজের চাহিদা মোটামুটি ৬০৬৬ টনের মতো। এর মধ্যে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সরবরাহ করতে পারে মাত্র ৩০০ টনের মতো। অবশিষ্ট বীজ ভারত থেকে আমদানি করতে হয় কিংবা চোরাই পথে আসে। এজন্য বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বের হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, পাটবীজের ক্ষেত্রে এখন আমরা শতভাগ ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। সর্বাধিক পাট উৎপাদনকারী দেশ, বীজের ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ ভারতের ওপর নির্ভরশীল, এটা কি ভাবা যায়? পাটের যখন সুদিন ছিল তখন দেশে ৮০ লক্ষাধিক বেল পাট উৎপাদিত হয়েছে। সে সময় তো পাটবীজের জন্য কারো ওপর বিন্দুমাত্র নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়নি। এখন পাট উৎপাদন কমেছে। তারপরও বীজের জন্য ভারতের ওপর এই নির্ভরশীলতা কেন? কেন আমরা পাটের একটি বীজ ভাÐার গড়ে তুলতে পারেনি, এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে? পাটবীজের এই সংকট মোচনের জন্য কৃষি সচিব একটি পথ বাতলে দিয়েছেন। বলেছেন, ভারতের সীমান্ত এলাকায় পাটবীজ এলাকা গড়ে তোলার জন্য ভারতকে ‘চুক্তিভিত্তিক ফার্ম’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়া হবে। একটা চমৎকার সমাধান তিনি দিয়েছেন! তিনি ভারতের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে পারেননি। বস্তুত, সরকারি পর্যায়ে এ ধরনের নৈতিবাচক মনোভাব থাকার কারণেই পাটখাতে আজ লালবাতি জ্বলতে বসেছে। এ ধরনের উদ্যমহীন, উদ্যোগহীন, সৃজনশীলতাবর্জিত ও দাস্যমনোবৃত্তি বজায় থাকলে পাটের সুদিনই বলি আর রাজত্বই বলি, কোনোদিন ফিরে আসবে না। পাটের প্রজা হয়েই থাকতে হবে বাংলাদেশকে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন