পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে নিম্নরূপ দেখা যায়: ১. অশিক্ষা ব্যাপক। ২০ থেকে ৩০% লোকের শিক্ষা নাই। ২. দারিদ্র্য মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে ব্যাপক। ২০০ কোটি মুসলিমদের মধ্যে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বাস করছে। ৩. মুসলিম বিশ্বের অনেক সরকার ডিক্টেটর ও বাদশা, যারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে না। ৪. শিক্ষাব্যবস্থা অধিকাংশ দেশে মানসম্মত নয়। ৫. উন্নয়ন আশানুরূপ হয়নি। যেটুকু হয়েছে তার ফল ভোগ করছে একদল ধনী লোক। সাধারণ জনগণ তার সুফল তেমন পায়নি। ৬. মুসলিমদের মধ্যে ছোট খাট ধর্মীয় বিরোধ ব্যাপক। যেগুলোর অবসান হওয়া দরকার।
আসলে বিরোধগুলি গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সমাধান হতে পারে নিম্নরূপ:
ক. অশিক্ষা দূর করতে হবে। যেটা করা সম্ভব। এজন্য সরকারগুলোকে শিক্ষাখাতের ব্যয় বাড়াতে হবে, না হয় ভালো করে ব্যবহার করতে হবে। খ. দারিদ্র্য দূর করে উন্নয়ন করতে হবে এবং কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কল্যাণ রাষ্ট্র অর্থ সেই রাষ্ট্র যেখানে দারিদ্র্যের, অসুবিধাগ্রস্থদের ও প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব সরকার নেয়। এটি ইসলামের একটি মূল শিক্ষা। খিলাফতের লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্যের ব্যবস্থা করা। সেজন্য ইসলাম জাকাত প্রবর্তন করেছে, যা ব্যয়ের মূল খাত হচ্ছে ফকির ও মুসলিম। অর্থাৎ দারিদ্র্য বিমোচন। শোষণ বন্ধ করা এবং সম্পদ পুঞ্জিভূত থেকে বাঁচার জন্য সুদ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আর্থিক সিস্টেম এবং ব্যাংকিং সিস্টেম মোতাবেক হতে হবে। সবাই জানেন ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম তুলনামূলকভাবে উন্নত। তেমনি সুবিচারের স্বার্থে অর্থনীতিতে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য মুনাফাখোরী ও মজুতদারী বন্ধের জন্য হস্তক্ষেপ করবে। এব্যাপারে সবাই ইসলামি অর্থনীতির বই পড়ে দেখতে পারেন। গ. মুসলিম বিশ্বের মধ্যে যে ফিরকাহগত বিরোধ রয়েছে তা দূর করার জন্য বড় আলেমদের চেষ্টা করতে হবে এবং মধ্যমপন্থী বড় সংগঠনগুলোকেও এ ব্যাপারে চেষ্টা করতে হবে। সমস্যা ছোট সংগঠনগুলো সৃষ্টি করে। যদি বড় সংগঠনগুলো এব্যাপারে নজর দেয় তাহলে এগুলো টিকবে না। ঘ. সব সমস্যার মূলে রয়েছে অনৈতিকতা এবং ইসলাম না জানা। এ জন্য কোরআনের অর্থ রাসূলের জীবনী, উন্নতমানের ইসলামি সাহিত্য (শিশু সাহিত্যসহ) উম্মার প্রতিটি স্থানে পৌঁছাতে হবে। ব্যাপক দাওয়াতী কাজ করতে হবে, যার মূল কাজ হবে ইসলামের জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। ঙ. মুসলিম উম্মার দেশগুলোতে খিলাফতের নীতিভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মানবাধিকার পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে। ধর্মীয় মতের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। চ. মুসলিম বিশ্বের শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে নমুনা হিসেবে নেয়া যেতে পারে। বিশ্বের প্রত্যেক মুসলিম দেশে এরকম বিশ্ববিদ্যালয় ১০ থেকে ১৫টি করা দরকার। বর্তমানে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার মধ্যে অনেকগুলোকে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা যেতে পারে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে যোগ্য লোক তৈরি করা এবং যোগ্য লোক হওয়া । যোগ্য লোক তৈরি না হলে বিশাল উম্মার সমস্যার সমাধান করা যাবে না। যাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধি তারা সমস্যা বাড়াতেই থাকবে এবং এর সমাধানে যোগ্য লোক তৈরি হওয়া এবং ইসলামের উপরে বিজ্ঞানসম্মত সাহিত্য তৈরি করা। এ কাজগুলো আমাদের করতেই হবে।
লেখক: গবেষক ও সাবেক সচিব
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।