পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমান বিশ্বে একমাত্র জাতি হলো ফিলিস্তিনীরা, যাদের নিজস্ব ভূমি নেই, সার্বভৌমত্ব নেই। কিন্তু তাদের একজন নেতা বিশ্ববাসী পরিচিত। তিনি হলেন, ইয়াসির আরাফাত। যিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ও মহানায়ক। একজন স্বাধীনতাকামী বীর হিসেবে বাংলাদেশেও যার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দল, মত, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ ফিলিস্তিনীদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়ে এসেছে। এজন্য কৃতজ্ঞ ফিলিস্তিনীরা আরবের বাইরে বাংলাদেশীদের সঙ্গে একই রকমের বন্ধন অনুভব করে। স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনীদের মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক ইয়াসির আরাফাতের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ১১ নভেম্বর। এ উপলক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের সঙ্গে দৈনিক ইনকিলাবের কূটনৈতিক সংবাদদাতা আহমদ আতিকের দীর্ঘ সময় একান্ত আলাপ হয়। একান্ত আলাপে মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত এই মহানায়কের জীবনের বিভিন্ন দিক, ফিলিস্তিনী জাতির আন্দোলন এবং মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন বিষয় বাংলাদেশীদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান।
ইউসুফ রামাদান বলেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এদেশকে আমরা দেখি, একই উম্মাহ, একই ধর্ম এবং একই বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ থেকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ইয়াসির আরাফাতকে বাংলাদেশের জনগণ মহান বন্ধুর মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশ অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো প্রথম থেকেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। চলতি বছরও জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনী জাতির স্বাধীনতার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ইয়াসির আরাফাত ছিলেন মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ নিজ নিজ শাসনামলে ফিলিস্তিনী এ মহান নেতার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতিদানকারী ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ইয়াসির আরাফাত একাধিকবার রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন। অসংখ্যবার ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা এম এ মান্নান সাহেবের সঙ্গেও তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল, ছিল ঘনিষ্ঠতা। বিভিন্ন সময়ে তারা ফিলিস্তিনী জাতির মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশের এবং মুসলিম বিশ্বের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন ইয়াসির আরাফাত। এই মহান নেতা তার লেখা ‘দ্য আনফিনিশড মেমোরী’ বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা উল্লেখ করেছেন।
শুধু ফিলিস্তিনের নয়, সারাবিশ্বের নিপীড়িত জনগণের মুক্তির প্রতীক এ নেতা ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যু নিয়েও নানান প্রশ্ন রয়েছে।
ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত স্মৃতি উল্লেখ করতে গিয়ে ইউসুফ রামাদান বলেন, তিনি ছিলেন অসাধারণ। তার প্রতিটি কর্মীর সঙ্গেতো বটেই, প্রতিটি ফিলিস্তিনীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। রয়েছে আলাদা গল্প। তাকে ভালোবাসতে তিনি সবাইকে বাধ্য করতেন।
রামাদান বলেন, আমার এলার্জির সমস্যা ছিল। সে বিষয়েও তিনি কোথায় গেলে ভালো চিকিৎসা হবে তা বলে দিয়েছিলেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিউনিসিয়া, জার্মানীসহ বিভিন্ন দেশে যতবারই তার সঙ্গে আমার দেখা হতো, তিনি আমার স্বাস্থ্যের খবর নিতেন। তার বিয়ের আগে আমরা তার বিয়ের কথা বললে তিনি বলতেন, এ জীবনতো সংগ্রামের। আর সময়ইবা কোথায়। জাতির সব সন্তানকেই তিনি পিতৃসম স্নেহ করতেন। আমার মেয়ে মোনাকেও তিনি খুব আদর করতেন।
রামাদান তার নেতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি তেমন একটা চিন্তিত ছিলেন না। তিনি সবসময় বলতেন, আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন, এর বাইরে একটু সময়ও আমি বেঁচে থাকতে পারবো না। প্রায়ই তিনি নিরাপত্তার ঘেরাটোপের বাইরে চলে যেতেন। আর তাই বডি গার্ডরাও তার নিরাপত্তা নিয়ে হিমশিম খেতো।
ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে রামাদান বলেন, জায়নবাদী দখলদারিত্বের কারণে ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ফিলিস্তিনের আয়তন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারে। এখন তা আরও কমছে। ইসরাইলীরা দিনে দিনে তাদের দখলদারিত্ব আরও বাড়াচ্ছে। আর ইহুদীবাদী এ ইসরাইল সরকারকে শুরু থেকেই পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমারা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, বিশ্বের বুক থেকে ফিলিস্তিনের নাম মুছে দিতে ইসরাইল তৈরী করেছে আইএস নামক একটি গোষ্ঠীকে। ইসরাইলীরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহায়তা করছে। ইসরাইলের সব অপকর্ম পশ্চিমারা চোখ বন্ধ করে দেখছে, সমর্থন করছে। তারা আইএসকে তৈরী করেছে মুসলমানদের কলঙ্কিত করতে। আর এর মাধ্যমে তারা ইরাক, সিরিয়া, মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেনসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অংশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। পাশ্চাত্যসহ বিশ্বের সব মিডিয়া এখন আইএসকে নিয়ে ব্যস্ত। বিশ্ববাসীর নজরকে তারা আইএসের দিকে ধাবিত করেছে। আর এর পূর্ণ সুফল পাচ্ছে ইসরাইল। তারা দিন দিন আরও বেশী ফিলিস্তিনী ভূখ- দখলে নিচ্ছে। অথচ তা কারও নজরে আসছে না। এর মাধ্যমে ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনকে মুছে দিতে চাচ্ছে।
রামাদান বলেন, আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং ইসরাইলের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, আইএসের যারা নেতৃত্বে তারা আসলে সবাই ইহুদী। তারা বিভিন্ন আরব দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্বের আড়ালে মুসলমান নাম নিয়ে আইএস গঠন করে। তাদের মধ্যে অনেক ইহুদী বিশেষজ্ঞ রয়েছে। তাদের লিডার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা সবাই ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের লোক। আইএস নেতারা নিজেদের মধ্যে ইহুদীদের ভাষা হিব্রুতে কথা বলে থাকে। যারা আরবীতে কথা বলেন, তারাও হিব্রু উচ্চারণের আরবীতে কথা বলে। বাংলাদেশে আলোচিত চরিত্র মেন্দী সাফাদী হলো, মোসাদ এবং আইএসের মধ্যে সংযোগকারীদের অন্যতম। এসময় রামাদান আইএস নিয়ে ইসরাইলী একটি টিভির তথ্যবহুল ফুটেজ প্রদর্শন করে দেখান।
তবে রামাদান বলেন, ইহুদীরা হাজার বছরের চেষ্টায় আইএস তৈরী করে ফিলিস্তিনকে মুছে দিতে চাইছে। কিন্তু তারা কখনোই তা পারবে না। কারণ, ইসরাইল একটি আউট’ল কান্ট্রি। আমরা ফিলিস্তিনীরা আমাদের দেশকে ইহুদীবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করবো। যত সময় লাগুক। আমরা লড়ে যাবো। জেরুজালেম ফেরত আনবো। ২০১২ সালে জাতিসংঘ আমাদেরকে সদস্যপদ দিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউএন-এর সব সংস্থায় আমরা সদস্যপদ পেয়েছি। ইউনেস্কো সম্প্রতি জেরুজালেমকে আমাদের নগরী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় ইসরাইল নিজেদেরকে এ সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটি আমাদের একটি বিজয়।
লিবারম্যান গাজা ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু ২০০৮-২০০৯-২০১২ ও ২০১৪ তে বহুবার তা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তা পারলে তা প্রথমেই করতো। ইসরাইলকে পশ্চিমারা সব দেয়। আর আমরা টানেল বানিয়ে লড়াই করি। এতে প্রমাণ হয় ইসরাইল আমাদের ধ্বংসে সমর্থ নয়।
তিনি বলেন, ইসরাইল আমাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের কেউ দেশের বাইরে যেতে ইসরাইলের অনুমতি নিতে হয়। আপনারাও কেউ চাইলে পশ্চিম তীরে যেতে পারবেন না। আর এজন্যই পশ্চিমা কোন দেশের মানুষ বিশেষ করে সাংবাদিকরা যখন ফিলিস্তিনের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে আসে তারা সবাই পরিবর্তিত হয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থক বনে যান। কারণ, তারা এমন অমানবিক অবস্থা পৃথিবীর কোথাও দেখতে পান না। কারণ, যেখানে ইহুদী সেনারা একজন গর্ভবতী নারীকেও যার অতি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছা প্রয়োজন তাকে সীমান্তে পর্যবেক্ষণের নামে বসিয়ে রাখে। আর এ অবস্থায় সেখানেই ওই অসহায় নারীর সন্তানের জন্ম হয়।
মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ফিলিস্তিনী এই কূটনীতিক বলেন, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অবস্থা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। সউদী আরব ও ইরান-এর মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধকে অতি দ্রুত থামানোর উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে, আমাদের এখনই থামতে হবে। কারণ, এক হাজার বছর আগে থেকেই ইহুদী খৃষ্টানরা আজকের আইএস তৈরীর বীজ বপন করে। তারা কোনভাবেই মুসলমানদের সঙ্গে না পেরে আমাদের মধ্যে শিয়া-সুন্নী সংঘাত তৈরী করেছে। আবার শিয়া এবং সুন্নীদের বিভিন্ন উপদলের মধ্যেও তারা সংঘাত উস্কে দিচ্ছে। তারা তরবারীতে যা পারেনি অর্থ ঢেলে কূটকৌশলে সে কাজে সফল হচ্ছে। আর আমাদের কিছু মুসলমান এসবের মধ্যে নিপতিত হয়ে ইহুদীদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে। তারা সংঘাতে জড়াচ্ছে। এখনই মুসলমানদের আভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারী বা ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়া নিয়ে রামাদান বলেন, তারা একই মুদ্রার দুই পীঠ। এতে মুসলিম জাতির কোন সুবিধা হবে না।
বৃটিশদের বেলফোর ঘোষণার ফলে যে ইসরাইলের জন্ম, এজন্য বৃটিশরা ক্ষমা চাইবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে ফিলিস্তিনের এ কূটনীতিক বলেন, তাতে কি আসে যায়। তারাতো আমাদের যা ক্ষতি করার করেছেই। আর হয়তো এ মুহূর্তে তারা ক্ষমা চাইবেও না। কারণ আমরা তাদেরকে এখনও সে শক্তি প্রয়োগ করতে পারিনি। তারা শক্তিকে ভয় পায়। দুর্বলকে নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইউসুফ রামাদান বলেন, চমৎকার। একদিনের জন্যও আমি ভীত হইনি। আমিতো এ শহরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াই। কই কখনোতো নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করিনি। বাংলাদেশকে আমি নিজের দেশ হিসেবে অনুভব করি। তাছাড়া একজন মুসলমান হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমার হায়াত যতদিন দিয়েছেন এর বাইরে এক মুহূর্তও আমি বাঁচবো না। তাই অযথা ভাবনার দরকার নেই।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিষয়ে রামাদান বলেন, আমি নানাভাবে চেষ্টা করছি কিভাবে এদেশে ফিলিস্তিনীরা বিনিয়োগ করতে পারে। আগামী ১০-১২ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনী ব্যবসায়ী আসবেন। তারা এদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ থেকে ফিলিস্তিনে কি কি রপ্তানীপণ্য যায় বা এর সুযোগ কতটুকু এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামাদান বলেন, আসলে পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের অধিকাংশ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল। চাইলেও সরাসরি বাংলাদেশী পণ্য সেখানে যাবার সুযোগ নেই। তবে জর্ডানে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশী বসবাস করেন। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশী উৎপাদিত কিছু পণ্য ফিলিস্তিনে যায়। এছাড়া আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, ফিলিস্তিনীদের ব্যবহৃত ৬০ ভাগ তৈরী পোশাক বাংলাদেশের গার্মেন্টসের তৈরী। বাকী ৪০ ভাগ বিভিন্ন স্থানের।
বাংলাদেশের আতিথেয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অসাধারণ। তিনি ঢাকা আসার পর একবার বনানী বাজারে গোশত কিনতে যান। গোশতের দোকানদার গোশত কাটার সময় পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনী। এরপর গোশতওয়ালা তার কাছ থেকে গোশতের দাম নিতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, ভবিষ্যতেও আমার দোকান থেকে তোমার জন্য গোশত ফ্রি দেয়া হবে। অনেক চেষ্টা করেও আমি সেই গোশতওয়ালাকে আর টাকা দিতে পারিনি। এ ঘটনায় আমার চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি বলে জানান ইউসুফ রামাদান।
এক নজরে ইয়াসির আরাফাত
মুহাম্মদ আবদেল রহমান আব্দেল রউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী ; জন্ম: ১৯২৯ সালের ২৪ আগস্ট মিসরের কায়রোতে, মৃত্যু: নভেম্বর ১১, ২০০৪, ফ্রান্স। প্রচলিত নাম ইয়াসির আরাফাত। তিনি ছিলেন একজন ফিলিস্তিনী নেতা। তার বাবা আবদেল রউফ আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী ছিলেন ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসী। মা জোয়া আবুল সাউদ ছিলেন জেরুজালেমের অধিবাসী।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওর চেয়ারম্যান হিসাবে আরাফাত ইসরাইলী দখলদারির বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করেন। তিনি প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় আরাফাত ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৮-১৯৬০ সালের মধ্যে তিনি এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ইসরাইলের অস্তিত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী থাকলেও পরে আরাফাত ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ২৪২ মেনে নিয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন।
১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে আরাফাতের ফাতাহ দল জর্ডানের সঙ্গে মতপার্থক্যজনিত কারণে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে আরাফাত বিতর্কিত হয়ে পড়েন। জর্ডান থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি লেবাননে অবস্থান নেন। যেখানে তিনি ও তাঁর ফাতাহ দল ইসরাইলের ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের আগ্রাসন ও আক্রমণের শিকার হন। দল-মত-নির্বিশেষে ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ আরাফাতকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসাবে সম্মান করে থাকে। তবে জায়নবাদী ইহুদি ইসরাইলী তাঁকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে অভিহিত করে থাকে।
ইয়াসির আরাফাত ১৯৪৪ সালে কায়রোর ইউনিভার্সিটি অব কিং ফুয়াদ ওয়ানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময়ে অন্যান্য আরবদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তবে ফেদাইনের সঙ্গে যোগ না দিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তিনি এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি গাজা এলাকার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না থাকায় কায়রো ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় যোগ দেন। ১৯৫০ সালে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন আরাফাত। এরপরে তিনি ইহুদিবাদ ও জায়ানিজম সম্পর্কে পড়াশুনা করেন। একই সময় ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।