Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্ণফুলীর সংস্কার ও বন্দর উন্নয়নের উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদীগুলো নিয়ে অনেক লেখালেখি, পরিকল্পনা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তার বাস্তব প্রতিফলন কর্মই দেখা গেছে। একইভাবে প্রভাবশালীদের দখলবাজি, দূষণ ও ভরাটে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের সূতিকাগার কর্ণফুলী নদী। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও জাতীয় অর্থনীতির মূল স্তম্ভ আর চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফলাইন হচ্ছে কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে না। বন্দর না বাঁচলে দেশের অর্থনীতি বাঁচবে না। আর নদনদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। মূলত দেশের সব নদনদীর নাব্য রক্ষা এবং দূষণ ও দখল উচ্ছেদ করে সংরক্ষণ, মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সারাদেশের নদনদী ও পরিবেশগত নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই রাজধানী ঢাকার পরিবেশগত সুরক্ষা ও বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ কারণেই সর্বাগ্রে কর্ণফুলী নদীর উপর দখলদারিত্ব উচ্ছেদ, দূষন প্রতিরোধ ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। হাইকোর্টের নির্দেশে সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে কর্ণফুলীর দখল উচ্ছেদে বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও প্রভাবশালী মহল আইনগত জটিলতা সৃষ্টি করে কাজের গতি শ্লথ করছে।
প্রায় এক দশক আগে কর্ণফুলী নদীর উপর প্রভাবশালী মহলের দখলবাজি এবং দূষণ ও নাব্য সংকটের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসার পর ‘হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের তরফ থেকে দখল উচ্ছেদে হাইকোর্টে রীট করা হয়। নানাভাবে সময়ক্ষেপণের পর চুড়ান্ত শুনানিশেষে ২০১৬ সালে কর্ণফুলীর নদীর তীরে অবৈধভাবে নির্মিত ২হাজার ১৮৭টি স্থাপনা উচ্ছেদসহ ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেন আদালত। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ, নগর কর্তৃপক্ষসহ সব বিভাগকে আদেশের অনুলিপি পাঠানো হলেও তারা উচ্ছেদ ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় গত বছর ২৫ জুন উচ্চ আদালত থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার উকিল নোটিশ পাঠানো হয় এবং বাদি পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩রা জুলাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। তবে কর্ণফুলী শিপ বির্ল্ডাস নামের একটি দখলদার প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে একটি চেম্বার আদালতে আবেদন করলেও শুনানি শেষে সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সব আইনগত বাঁধা দূর হয়েছে। এবার জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে উচ্ছেদ, সংরক্ষণ ও নদী ড্রেজিংয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বলা বাহুল্য নদনদীর দখল উচ্ছেদসহ ড্রেজিং করে সারাদেশে নাব্য বৃদ্ধি ও নৌপথের সম্প্রসারণ করা সম্ভব হলে সড়ক পথের উপর চাপ কমবে এবং পণ্য পরিবহনের খরচ অনেকটা কমে আসবে।
রাজধানী শহর, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং সমুদ্রবন্দরসহ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলোর লাইফলাইন বুড়িগঙ্গা-কর্ণফুলী নদী। এসব নদীর উপর যথেচ্ছ দখলদারি ও দূষণের মাধ্যমে নগরীর পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকেই ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। অনেক দেরীতে হলেও এখন উত্তরণের পালা শুরু হয়। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, তুরাগ ও বালুনদীর উপর দখল উচ্ছেদ খুব ধীর গতিতে চললেও নদীর ভয়াবহ দূষণ রোধে এখনো তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে কর্ণফুলীর উচ্ছেদ অব্যাহত রাখতে আইনগত বাঁধা অপসারণের পাশাপাশি কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ এবং পিপিপি’র আওতায় পতেঙ্গার লালদিয়া এলাকায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ একটি মাল্টি পারপাস টার্মিনাল নির্মানের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।পরিকল্পনা অনুসারে আগামী তিন বছরের মধ্যে এই টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হলে লালদিয়ায় বিদেশি জাহাজ ভিড়তে পারবে এবং এই মেগা টার্মিনালে ৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য তথা জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারিত হবে বলে আশা করা যায়। লালদিয়ায় নতুন টার্মিনাল নির্মানের উদ্যোগের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গ্যান্টি ক্রেনের ঘাটতি পুরণ, বন্দর ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও বন্দরের নতুন জেটি নির্মাণ এবং গ্যান্টি ক্রেন সংগ্রহের মত অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে যে ঘাটতি হয়েছে তা’ পুরণ করতে এখন অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন