Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গবেষণায় মনোযোগ ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম


টেকসই উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে নানা ক্ষেত্রে উদ্ভাবনমূলক গবেষণা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী দেশের বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের প্রতি আরোর বেশী করে গবেষণায় মনোযোগ দেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জন, বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট উৎক্ষেপনসহ আইসিটি উন্নয়নে তার সরকারের নানা উদ্যোগ ও সাফল্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে দেশের জলবায়ু, মাটি, পানিসহ আনুষাঙ্গিক সবকিছু নিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর একটি সময়োপযোগী নির্দেশনা বা প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পুরণে দেশের সবগুলো গবেষনা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী ও অ্যাকাডেমিসিয়ানদের নতুন উদ্যমে কাজ করতে হবে। কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ ইতিহ্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান, ফল, শাক-সব্জিসহ বিভিন্ন কৃষিবীজ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনে অগ্রণী ভ‚মিকা রেখেছে। কৃষি গবেষকদের উদ্ভাবিত কৃষিবীজ মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদের মাধ্যমে আমাদের কৃষকরা দেশে এক অভাবনীয় কৃষি বিপ্লব সংঘটিত করতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে সে সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞানী-উদ্ভাবকদের নিরলস শ্রম-সাধনা মূল ভ‚মিকা রেখেছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভ‚-রাজনৈতিক বাস্তবতায় সমস্যা ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণে নিজস্ব বাস্তবতায় নিজস্ব গবেষকদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও কৃৎকৌশলের মাধ্যমে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সরকারকে অনুঘটকের ভ‚মিকা পালন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামূলক কর্মকান্ড ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনী তৎপরতার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা, লজিস্টিক সাপোর্ট ও বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত ফলাফলকে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানো এবং প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে তা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তোলার ক্ষেত্রেও সরকারের যথাযথ নীতিমালা ও উদ্যোগ থাকতে হবে। পাট আমাদের নিজস্ব অর্থকরী ফসল। আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য ও জাতীয় অর্থনীতির মূল উৎস হিসেবে পাটের যে অবদান তা এখন অনেকটাই লুপ্তপ্রায়। অথচ পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতায় পাটের বিশাল সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা পাটের জেনোম সিকোয়েন্স তৈরী, পাট থেকে সেলুলোজ উৎপাদন করে সিনথেটিক পলিথিনের বিকল্প পচনশীল সোনালীব্যাগ আবিস্কার ও উৎপাদনের মত বিশাল সম্ভাবনাময় খাত তৈরী করেছেন। প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে পাটের প্রতি প্রতি বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও চাহিদাবৃদ্ধির বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন পাটজাত পণ্য উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ এখন সময়ের দাবী।
গবেষণা ও উদ্ভাবনী প্রতিভা কাজে লাগিয়ে নব উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও পেটেন্ট কাজে লাগিয়ে দেশীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চিন্তা প্রধানমন্ত্রীর অগ্রসর চিন্তার পরিচায়ক। তবে শুধু বক্তব্য-বিবৃতি বা নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যায় না। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষাঙ্গণ পর্যন্ত সর্বত্র শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোর অবকাঠামো, জনবল এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ও অনুদান নিশ্চিত করতে হবে। অটোমোবাইল বা গাড়ীর ইন্টেরিয়রে পাটতন্তু ব্যবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করছে একটি ফরাসী কোম্পানীর গবেষকরা। এই উদ্যোগ সফল হলে পাটের সুদিন ফিরে আসতে খুব বেশী সময় লাগবে না। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষিব্যবস্থা, পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশগত সুরক্ষা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের নানা ক্ষেত্র এবং রফতানীমুখী শিল্প-বাণিজ্য ধান, পাট, চা, তুলা, মৎস্য, পশুপালন, মওসুমি ফলমূল, ঔষধ, চামড়া, টেক্সটাইল, ফ্যাশন ডিজাইনিংসহ অনেক সেক্টরেই গবেষণা প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে যথাযথ বিনিয়োগ ও কর্মতৎপরতা সম্পাদিত হলে জাতির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও অগ্রগতি ঠেকিয়ে রাখার সাধ্য কারো নেই। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষীণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে প্রকৃত গবেষক ও উদ্ভাবকদের জাতীয়ভাবে মূল্যায়ণ ও সম্মানীত করার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ থাকতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গবেষণা


আরও
আরও পড়ুন