বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে তিন পুলিশসহ ২৩ জন আহত হয়েছে। শাটল ট্রেন চালককে অপহরণসহ ভাঙচুর হয়েছে যানবাহন। রোববার বিশ^বিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। ছাত্রলীগও পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। এতে ক্যাম্পাস দৃশ্যত রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থল থেকে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সম্প্রতি অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার ছয়জন ছাত্রলীগ কর্মীর মুক্তি, ২০১৫ সাল থেকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, হাটহাজারী থানার ওসিকে প্রত্যাহার ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে এ অন্দোলন করে তারা। অবরোধের শুরুতেই শাটল ট্রেনের লোকো মাস্টারকে অপহরণ করা হয়। শাটল ট্রেন আটকে কয়েকটি বগির হোস পাইপ কেটে দেয় অবরোধকারীরা। একই সময়ে শিক্ষক বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়। সকাল পৌনে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। প্রধান ফটক আটকে দিয়ে কারাগারে থাকা ছয় ছাত্রলীগ কর্মীকে মুক্তিসহ চার দফা দাবিতে সেøাগান দিতে থাকে। এ সময় তারা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসিকে দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ জলকামান নিয়ে আসলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পুলিশ প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে জলকামান ক্যাম্পাসে ঢোকানোর চেষ্টা করে অপর দিকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ফটক বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্ট করে। এতে উভয় পক্ষ বাগবিত-ায় জড়িয়ে পড়লে শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় পুলিশ জিরো পয়েন্টে এবং ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষক ক্লাবের সামনে ও শাহ জালাল হলের সামনে অবস্থান নিয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান ও বেশ কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে ২০ ছাত্রলীগ কর্মী আহত এবং ২ জনকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রলীগের ছোড়া ইট-পাটকেলে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ডিবি পুলিশের গাড়ি। এদিকে এই ধর্মঘাটের কারণে ক্যাম্পাসে কোন রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি ও ক্যাম্পাসের কোন খাবার হোটেল, দোকান খোলা হয়নি এতে খ্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন বলেন, আমরা একটি যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছিলাম। প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ নামধারী কিছু অনুপ্রবেশকারী পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। যারা এর সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দোলা রেজা বলেন, আমরা আগের দিন রাতেই নেতাদের সাথে আলোচনা করি। তারা বলেছেন অহিংস একটি আন্দোলন করবে। কিন্তু সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের বিছিন্ন একটি গ্রুপ বিনা উস্কানিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেষ, রাবার বুলেট ও জলকামান ছুঁড়ে।
এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, আমরা সরকারের উচ্চ মহলে কথা বলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তারা যেন ভূমিকা নেয়। ছাত্রলীগের ভাঙচুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের যৌক্তিক দাবিকে আমরা সবসময় স্বাগত জানাই। তাদের নিজেদের সমস্যার কারণে মামলা হয়েছে এর সমাধানে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।